ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জামদানি শাড়ির যত্নআত্তি

প্রকাশনার সময়: ২৮ অক্টোবর ২০২১, ০৯:৪৯

জামদানি আমাদের ঐতিহ্যের প্রতীক। বাঙালি নারীদের পছন্দের শীর্ষে রয়েছে জামদানি। আবহমান জামদানির প্রাচুর্যতা এবং এর প্রতি মানুষের দুর্বলতা এতটুকু কমেনি, কিন্তু কথায় আছে না যার আভিজাত্য এবং প্রাচুর্যতা রয়েছে তার যত্নটাও একটু আলাদাভাবে নিতে হয়, নয়তো এর প্রাচুর্যতা নষ্ট হতে পারে।

জামদানি হলো কার্পাস তুলা দিয়ে প্রস্তুত একধরনের পরিধেয় বস্ত্র যার বয়ন পদ্ধতি অনন্য। জামদানি বুননকালে তৃতীয় একটি সুতা দিয়ে নিখুঁতভাবে নকশা ফুটিয়ে তোলা হয়। মসলিন বয়নে যেমন ন্যূনপক্ষে ৩০০ কাউন্টের সুতা ব্যবহার করা হয়, জামদানি বয়নে সাধারণত ৭০-৮০ কাউন্টের সুতা ব্যবহৃত হয়। দেশীয় জামদানি বলতে সাধারণত : শাড়িকেই বোঝানো হয়। এছাড়া জামদানি থ্রি পিস এবং ওড়না পাওয়া যায়। জামদানি আমাদের আভিজাত্যের প্রতীক। এই শাড়িগুলো মূলত নকশার কারণে ভিন্ন ও আকর্ষণীয় হয়ে থাকে। জামদানি শাড়িতে অনেক জ্যামিতিক নকশা ফুটিয়ে তোলা হয়। বিভিন্ন ধরনের ফুল, লতাপাতা, কলকাসহ নানা ধরনের নকশা যত্ন সহকারে ফুটিয়ে তোলা হয় জামদানি শাড়িতে।

সবার কাছে একটি জামদানি রাখার যে ইচ্ছে তার মূল অন্তরায় থাকে এর যত্ন।

তবে নান্দনিক নকশার এই শাড়ি ভালো রাখতে চাই বিশেষ যত্ন। নয়তো এত শখের শাড়ি নষ্ট হয়ে যায়।

প্রিয় জামদানি শাড়ির যত্ন নেবেন যেভাবে :

শাড়িতে ফলস লাগানো

জামদানি শাড়ি কেনার পরেই এর পাড়ে ফলস লাগিয়ে নিতে হবে। এতে করে পাড় ভাঁজ হবে না, ফেটে যাবে না এবং কুচিগুলোও সুন্দর থাকবে। অনেক সময় দেখা যায় এক্সক্লুসিভ শাড়ির আঁচলেও অনেকে নেটের ফলস লাগিয়ে থাকে, এতে করে শাড়ি নষ্ট হওয়ার প্রবনতা কম থাকে।

শাড়ির সঠিক ভাঁজ

জামদানি তুলে রাখার সময় ভাঁজটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমরা অন্য শাড়ি চার ভাঁজ করে মাঝখানে একটা ভাঁজ দিয়ে আরেক ভাঁজে ভেঙে রেখে দেই, কিন্তু জামদানি কখনো এভাবে রাখা যাবে না। এমন কি মাঝখানে ভেঙে হ্যাংগারে ঝুলিয়ে রাখাও ঠিক না। যেহেতু জামদানি হাতে বুনন তাই বুননের একটা সুতা এদিক সেদিক হলেই শাড়ি ফেঁসে যেতে পারে।

জামদানি ভাঁজে আলাদা নিয়ম আছে, প্রথমে দুই ভাঁজ দিতে হবে নরমাল শাড়ির মতোই। এরপর একটা পাতালি ভাঁজ দিতে হবে। তারপর মাঝখানে ভেঙে একটা ভাঁজ দিয়ে হ্যাংগারে ঝুলিয়ে রাখতে হবে অথবা দুইপাশ থেকে ছোট ছোট ভাঁজ দিয়ে একটা আরেকটার ভেতরে দিয়ে দিতে হবে।

জামদানি কখনো অন্য শাড়ির নিচে রাখা যাবে না। আলমারিতে তুলে রাখার সময় সাদা কাগজের প্যাকেটে রেখে দিলে শাড়িতে ফাংগাস পড়ে না। এর জন্যই মার্কেটে শাড়ির দোকানগুলোতে সাদা প্যাকেটের ভেতর শাড়ি রেখে দেন, যেন ফাংগাস পড়ে নষ্ট হয়ে না যায়। মাঝে মাঝে এই ভাঁজ পরিবর্তন করে রাখতে হবে, কারণ বেশি দিন এক ভাঁজে থাকলে শাড়ি নষ্ট হয়ে যেতে পারে।

পানি থেকে দূরে রাখতে হবে

জামদানিকে সব সময় পানি থেকে দূরে রাখতে হবে। আমরা যেভাবে সচারাচর পানি দিয়ে কাপড় ধুয়ে থাকি জামদানির ক্ষেত্রে এটা করা যাবে না। কারণ জামদানি তৈরির সময় যে মাড় ব্যবহার করা হয় সেখানে যদি পানি লাগে তাহলে সুতাটা ছড়িয়ে যায়, এতে করে জামদানি শাড়ির ক্ষতি হয়।

রোদে শুকানো

মাঝে মাঝে রোদে শুকিয়ে নিতে হবে, এতে করে শাড়ি ভালো থাকবে। তবে মনে রাখতে হবে রোদ থেকে এনেই আলমারিতে তুলে রাখা যাবে না। মাঝে মাঝে তুলে রাখা জামদানি রোদে দিতে হবে এবং সময় সময় তা উল্টিয়ে দিতে হবে, যেন দুই দিকে সমান রোদ লাগে। বৃষ্টির পানি পড়লেও ভালো করে রোদে শুকিয়ে নিতে হবে।

কাঁটা ওয়াশ

অনেকে মনে করেন জামদানিতে ড্রাই ওয়াশ করলে ভালো, এটা ভুল কারণ ড্রাই ওয়াশের পর যে শাড়ি আয়রন করা হয় এতে জামদানির শাড়ি নষ্ট হয়ে যায়। জামদানি যদি নষ্ট হয়ে যায় বা ফ্যাকাশে হয়ে যায়, তাহলে কাঁটা ওয়াশে দিতে হবে এবং যারা জামদানি তৈরি করে তাদের কাছেই কাঁটা ওয়াশের জন্য দিতে হবে। অন্য কারো কাছে দিলে হবে না, কাঁটা ওয়াশ একমাত্র যারা জামদানি তৈরি করে তারাই করতে পারেন। প্রয়োজন হলে তারাই রিপু করে ঠিক করে দেবেন।

সব সময় ব্যবহার করতে হবে

শখের জামদানি যখন কোনো অনুষ্ঠান হবে তখনই পরা হয়, কিন্তু জামদানি যত বেশি পরা হবে তত ভালো থাকবে। তাই মাঝে মাঝে জামদানি পরতে হবে। তাহলে নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকবে।

নতুন করে রং করে নেয়া

অনেক সময় দেখা যায় জামদানি বেশি ব্যবহারের ফলে রং নষ্ট হয়ে যায়। জামদানিতে কোনো রকম লিকুইড কিছু পড়ে দাগ লাগলে সঙ্গে সঙ্গে সেখানে টেলকম পাউডার ছড়িয়ে, রোদে শুকিয়ে নিতে হবে। রং নষ্ট হওয়া এবং দাগ লাগার জন্য জামদানিতে নতুন ডিপ কালারের রং করে নিতে পারেন। এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে এক কালার শাড়িগুলোতেই রং করলে ভালো হয়। কারণ মাল্টিকালারের শাড়িতে রং করা যায় না।

সঠিক যত্নের মাধ্যমেই প্রতিটি শখের জামদানি স্মৃতিময় হয়ে থাকুক সবার মাঝে।

নয়া শতাব্দী/এসএম

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ