ঢাকা, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

একজন ‘ইনফ্লুয়েন্সার’ ফারিয়ার গল্প

প্রকাশনার সময়: ২৫ অক্টোবর ২০২১, ১৫:৪৮

জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের মাধ্যমে অনলাইন ব্যবসা-বাণিজ্য এখন বড়ো পরিসরে গড়ে উঠেছে। বিশেষ করে এটি তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য সম্ভাবনাময়ী প্ল্যাটফর্ম তৈরি করছে। যা আমাদের আগামী দিনের অর্থনীতিতে বিশাল ভূমিকা পালন করবে ।

তদুপরি, নারীর ক্ষমতায়নে এই ফেসবুকের অনলাইন ব্যবসার মাধ্যমে নারীরা তাদের নিজস্ব ব্র্যান্ড তৈরি করতে পেরেছে এবং ক্রমাগত আত্ম নির্ভরশীল হচ্ছে। প্রতিটি ব্যবসায় কিছু প্রচারণা কার্যক্রম প্রয়োজন, যা এই ফেইসবুক প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে নিজের ব্যাবসায়িক পরিচিতি লাভ করছে।

ইনফ্লুয়েন্সার শব্দটি পশ্চিমা বিশ্বে খুবই প্রচলিত কিন্তু বাংলাদেশে মানুষের কাছে বেশ নতুন একটি শব্দ। কিন্তু এই শব্দটি বর্তমানে খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এবং এখন অল্প সময়ের মধ্যেই অনলাইন দুনিয়ায় ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।

নাসরিন আক্তার ফারিয়া, একজন বিউটি অ্যান্ড লাইফস্টাইল ব্লগার, একজন সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার এবং বাংলাদেশের অনলাইন ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিতে বিশিষ্ট নাম। তিনি ‌‘ফারিয়াস মিরর’ এর প্রতিষ্ঠাতা।

‘ফারিয়াস মিরর’ বাংলাদেশে মহিলাদের একটি বড়ো কমিউনিটি তৈরি করেছে যা ৮ লক্ষের বেশি ফলোয়ার। নাসরিন আক্তার ফারিয়া, প্রধানত সোশ্যাল মিডিয়ায় স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর এবং ব্র্যান্ড প্রমোটার হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন।

তার ব্যক্তিগত জীবনে তিনি দুইটি কন্যার জননী এবং একজন সম্পূর্ণরূপে গৃহকর্ত্রী। এছাড়া, তিনি নিজেকে বহুমুখী সামাজিক কাজেও নিযুক্ত করেছেন।

কলেজ পড়ুয়া থাকা অবস্থায় উনার বিয়ে হয় কিন্তু তার ছোটকাল থেকে ইচ্ছে ছিল সোশ্যাল ইনফ্লুয়েন্সার হওয়ার।

যে সময়ে তিনি আগের এবং বর্তমান জীবনের মধ্যে সমন্বয় করে সামনে আগানোর চেষ্টা চালিয়ে যায় , তখন তার গর্ভাবস্থার খবর আসে বিয়ের কয়েক মাসের মধ্যেই । এবং একই সাথে উচ্চ মাধ্যমিক পড়া অবস্থায় তিনি তার প্রথম কন্যাকে গর্ভে ধারণ করার মধুর যন্ত্রণা অনুভব করতে শুরু করেন

সময় গড়িয়েছে, সে মা হয়েছেন। কিন্তু সে তার পড়াশুনার ব্যাপারে সবসময় আশাবাদী ছিলেন এবং এইভাবে সে ছোট্ট কন্যাশিশুকে কোলে নিয়েই সেন্ট্রাল উইমেন কলেজে ব্যাচেলর অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে ভর্তি হন। এই চ্যালেঞ্জিং সময়কে জয় করতে তার পরিবারই সবসময় তাকে সমর্থন করেছে এবং এই যাত্রায় সার্বক্ষনিক পাশে ছিলেন তার স্বামী। লেখাপড়া শেষ করার পর ছোট্ট কন্যাশিশুদের কারণে তিনি বাইরের কাজে মনোনিবেশ করতে পারছিলেন না।

তিনি তার কন্যাদের বেড়ে ওঠার ও দৈনন্দিন গৃহ কর্মে অত্যন্ত ব্যস্ত হয়ে পড়েন। এই ব্যস্ততার মাঝে , তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় বিউটি অ্যান্ড লাইফস্টাইল গ্রুপগুলোতে খুব সক্রিয় থাকতেন। যেখানে তিনি তার ব্যক্তিগত চিন্তাভাবনা এবং দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন কার্যকলাপ শেয়ার করতেন; এভাবে তিনি তার অফুরন্ত প্রচেষ্টা এবং নিষ্ঠার কারণে প্রতিটি বিউটি অ্যান্ড লাইফস্টাইল গ্রুপগুলো থেকে ব্যাপক সাড়া পেতেন ।

যখন তিনি দেখতে পেলেন যে, বিপুল সংখ্যক মেয়ে তার ভক্ত হয়ে গিয়েছে, তখন সে তার নিজের শুভাকাঙ্ক্ষীদের সাথে যোগাযোগের জন্য একটি নিজস্ব গ্রুপ খোলার কথা ভাবলেন। যেই ভাবা সেই কাজ। তখন তিনি তার প্রথম গ্রুপটির খুলেন এবং নাম দিয়েছিলেন 'ডিভাইন ডিভাস'।

'ডিভাইন ডিভাস' পেজটিতে উনার জনপ্রিয়তা ক্রমশ বেড়েই চলছিল। এই জনপ্রিয়তা উনার ইনফ্লুয়েন্সার হওয়ার প্রেরণা মনে প্রাণে জেগে উঠে। তখন তিনি আরেকটি ফেইসবুক পেজ বিউটি অ্যান্ড লাইফস্টাইল গ্রুপ 'ফারিয়াস মিরর' খোলে। এর পর উনাকে আর পেছনে ফিরে আর তাকাতে হয় নি। তার নিজের প্রচেষ্টায় এখন তিনি , 'মেকআপ ব্লসম বাই ফারিয়া' , 'ডিভাইন ডিভাস' এবং 'ফারিয়াস মিরর' এর মতো বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মের গর্বিত মালিক।

এত কিছু করার পেছনে তার ছোট বেলা থেকে মেকাপ এর প্রতি ঝোক ছিল। এই ঝোক এর কারণে বিভিন্ন সময়ের পাশাপাশি কিছু ইন্টারন্যাশনাল মেকাপ কোর্স সম্পন্ন করে। এই সুবাদে উনি বিউটি ব্লগার হিসেবে বিভিন্ন মেকাপ ব্র্যান্ড এর সাথে কাজ শুরু করে। এরপর ধীরে ধীরে ফ্যাশন ব্লগার হয়ে বিউটি এন্ড লাইফ স্টাইল ব্লগিং এর দিকে তার ক্যরিয়ার ঝুকে যায় ।

এখন, তিনি কমপক্ষে সাত-আটটি ব্র্যান্ডের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হিসাবে কাজ করেন। তিনি বিখ্যাত সব লাইফস্টাইল পোশাক এবং ফ্যাশন এবং ডায়মন্ড জুয়েলারি ব্র্যান্ডের জন্য কাজ করেন। গত ২-৩ বছরে তিনি শত শত ব্র্যান্ডের জন্য কাজ করেছেন এবং যার মধ্যে বিখ্যাত আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডও রয়েছে।

আমাদের সমাজে যে নারীরা অবহেলিত নয় তা নাসরিন আক্তার ফারিয়া জ্বলন্ত প্রমান। নিজের ভেতরের অদম্য ইচ্ছে শক্তি থাকলে সব কিছু সম্ভব।

একজন মহিলা হিসেবে, তিনি সর্বদা নারীর ক্ষমতায়ন বিশ্বাসি । নাসরিন আক্তার ফারিয়া নতুন উদ্যোক্তাদের সাথে তাদের ব্যবসা বাড়ানোর জন্য কাজ করে যাচ্ছেন এবং এটা তার জন্য অত্যন্ত আনন্দের বিষয় যে তার পরিশ্রম সবসময়ই সফলতার মুখ দেখে আসছে ।

এই বিষয়ে তিনি বলেন, ‌‘এটি সত্যিই স্বর্গীয় অনুভূতি একজন ইনফ্লুয়েন্সার হয়ে যখন কোনো উদ্যোক্তার পেইজকে মানুষের কাছে পরিচিতি লাভ করাই তখন তাদের ব্যাবসায়িক পরিধি আরো বেড়ে যায় এবং অতিরিক্ত আয়ের সুযোগ হয়।’

সর্বশেষে, বাংলাদেশে সামগ্রিক অনলাইন বাণিজ্যিক পরিস্থিতি আরও ভালো করার জন্য তিনি আরও কাজ করতে চান।

নয়া শতাব্দী/এসএম

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ