পুদিনা গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ। পুদিনার মূল থেকে শুরু করে ফুল পর্যন্ত সবই ব্যবহারযোগ্য। প্রাচীনকাল থেকেই ঔষধি হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে পুদিনা। যত দিন যাচ্ছে তত গবেষণা হচ্ছে পুদিনার মতো ভেষজ উদ্ভিদ নিয়ে, আর ততই মানুষ জানছে এসবের গুণ সম্পর্কে। আর তাই ব্যবহারের আগ্রহও তৈরি হচ্ছে নানা ভেষজ সম্পর্কে। শুধু খাবার আর ওষুধ হিসেবে নয়, রূপচর্চার উপাদান হিসেবেও পুদিনার রয়েছে যথেষ্ট অবদান। পুদিনা পাতা ত্বককে সুস্থ রাখে। পুদিনা পাতা একটি চমৎকার ক্লিনজার, টোনার এবং ময়েশ্চারাইজার হিসেবে কাজ করে। স্কিন কেয়ার রুটিনে পুদিনা পাতা যোগ করার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। পুদিনা পাতা ব্রণের দাগ দূর করতে সক্ষম। পুদিনা পাতায় প্রদাহ ও ব্যাকটেরিয়ানাশক গুণ থাকার কারণে ত্বকের ব্রণের সমস্যা সারাতে পুদিনা পাতার জুড়ি নেই। এই পাতার উচ্চমাত্রায় ‘স্যালিসাইলিক অ্যাসিড’ থাকে যা ব্রণ দূর করে। ত্বক পরিষ্কার করতেও এটি বেশ কার্যকর। ১০-১২টি পুদিনা পাতা ছেঁচে এতে এক টেবিল চামচ লেবুর রস মেশান। তারপর ব্রণ, ব্রণ আক্রান্ত স্থান, ব্রণের দাগের ওপর লাগিয়ে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করুন। এরপর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে তা ধুয়ে নিন। সপ্তাহে একবার এটা ব্যবহার করুন। পুদিনার স্যালিসাইলিক অ্যাসিড ও লেবুর রসের ব্লিচিং উপাদান ব্রণের দাগ দূর করে। এবং লেবুতে ভিটামিন সি থাকায় তা ত্বক সুন্দর রাখতে সাহায্য করে। পুদিনা পাতায় অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি থাকায় এটি কাটা, ক্ষত, মশার কামড় এবং এমনকি চুলকানি ত্বক নিরাময়ে সহায়তা করে। ত্বকে জ্বালাপোড়া এবং ক্ষত নিরাময়ে সাহায্য করে পুদিনা পাতা। পুদিনা পাতা হালকা অ্যাস্ট্রিঞ্জেন্ট হিসেবে কাজ করতে পারে যা ত্বককে স্বাভাবিকভাবে টোন করতে সাহায্য করে। পুদিনা পাতা ত্বককে কোমল, হাইড্রেটেড এবং টোন করে তোলে। পুদিনা পাতার প্যাক লাগিয়ে ২০ থেকে ২৫ মিনিট রেখে এবং পরিষ্কার জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। পুদিনা পাতায় থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট চোখের নিচের কালো দাগ কমাতে সাহায্য করে। পুদিনা পাতার পেস্ট চোখের নিচে রাখলে ডার্ক সার্কেলের উপস্থিতি কমাবে। গায়ের রং উজ্জ্বল করে পুদিনা পাতা। পুদিনা পাতায় অ্যান্টি-সেপটিকের বৈশিষ্ট্য থাকায়, ত্বকের দাগ ও ফুসকুড়ি দূর করে। নিশ্ছিদ্র এবং উজ্জ্বল ত্বক পেতে পুদিনা পাতার রস ব্যবহার করতে বলেছেন বিশেষজ্ঞরা। পুদিনা পাতা ভিটামিন ‘এ’, ‘সি’ এবং ‘বি’ সমৃদ্ধ যা ত্বকের যত্নে অত্যন্ত জরুরি। এছাড়াও এই পাতায় মেলে লৌহ, পটাসিয়াম এবং ম্যাঙ্গানিজ। যা ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ানোর পাশাপাশি ত্বককে নরম ও কোমল রাখতে সাহায্য করে। এই প্যাকটি বানানোর জন্য আপনার লাগছে দুই টেবিল চামচ চটকানো কলা ও ১০-১২টি পুদিনা পাতা। প্রথমে কলা ও পুদিনা পাতা পিষে ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। তারপর প্যাকটি ত্বকে লাগিয়ে ১৫ থেকে ৩০ মিনিট অপেক্ষা করে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে নিন। ভালো ফলাফলের জন্য সপ্তাহে দুবার ব্যবহার করুন। এছাড়া ত্বকের মৃতকোষ দূর করতে এবং কড়া পড়া অংশ স্বাভাবিক করতেও পুদিনা পাতা ভালো কাজ দেয়। সেক্ষেত্রে, এক টেবিল চামচ ওটস, ১০-১২টি পুদিনা পাতা, এক টেবিল চামচ মধু, দুই টেবিল চামচ দুধ ও আধা ইঞ্চি শসার টুকরা লাগবে। প্রথমে পুদিনা পাতার সঙ্গে শসা কুচি ছেঁচে নিন। এরপর বাকি সব উপাদান একসঙ্গে মেশান। মিশ্রণটি মুখে লাগিয়ে ৭ মিনিট অপেক্ষা করে গোলাকারভাবে হালকা চাপে স্ক্রাব বা ঘষে নিন। এবং দুইতিন মিনিট স্ক্রাব করার পরে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন। এতে মৃতকোষ দূর হবে ও লোমকূপ পরিষ্কার হবে। ফলে ত্বক হবে মসৃণ, উজ্জ্বল এবং স্বাস্থ্যকর। ভালো ফলাফলের জন্য সপ্তাহে দুবার এই প্যাকটি ব্যবহার করুন।
পুদিনা পাতা ত্বকের তৈলাক্ততা দূর করে। ত্বকের তেল নিয়ন্ত্রণের জন্য মুলতানি মাটি ও পুদিনা পাতা সবচেয়ে ভালো একটি উপাদান। এছাড়া এটি ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখতেও সাহায্য করে। তাই এই প্যাকটি তৈরি করতে এক টেবিল চামচ মুলতানি মাটি, ১০-১২টি পুদিনা-পাতা, আধা টেবিল চামচ মধু ও আধা টেবিল চামচ টক দই লাগবে। প্রথমে পুদিনা পাতা বেটে তাতে মুলতানি মাটি, মধু ও দই মেশান। ঘন মিশ্রণ হওয়া পর্যন্ত মেশাতে থাকুন। তারপর মিশ্রণটি মুখে লাগিয়ে ২০ মিনিট অপেক্ষা করে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। ভালো ফলাফলের জন্য সপ্তাহে দুবার এটা ব্যবহার করুন।
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ