ঢাকা, রোববার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

রমজানে আমাদের খাদ্যাভাস যেমন হওয়া উচিত

প্রকাশনার সময়: ১৫ মার্চ ২০২৪, ১৬:১৭ | আপডেট: ১৫ মার্চ ২০২৪, ১৬:২৭

শুরু হয়ে গেছে পবিত্র মাহে রমজান। তীব্র গরমের এই সময় রোজা রেখে সুস্থ থাকাটা বেশ চ্যালেঞ্জিং। রমজান মাসে অনেক সুস্থ ধর্মপ্রাণ মুসলমান রোজা পালনকালে অসুস্থবোধ করেন। এর অন্যতম কারণ অপরিকল্পিত খাদ্যাভাস, যা অনেক রোজাদারের বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যার মুখ্য কারণ।

তাই দৈনিক চাহিদার প্রতি লক্ষ্য রেখেই এ সময় আমাদের খাদ্য নির্বাচন করা দরকার। রোজা পালনের জন্য প্রয়োজন সঠিক খাবার নির্বাচন, শারীরিক সুস্থতা, অদম্য ইচ্ছা ও মহান আল্লাহর প্রতি আনুগত্য। কিছু নিয়ম-নীতি ও পরামর্শ অনুসরণ করলে সুস্থভাবেই সব বয়স ও শ্রেণি-পেশার মানুষের পক্ষে রোজা পালন করা সম্ভব।

রোজা পালনের ক্ষেত্রে আমাদের বর্জনীয় কাজ

• কখনোই শুধু পানি খেয়ে রোজা রাখবেন না।

• অতিভোজন থেকে বিরত থাকুন।

• খাবার ভালোভাবে চিবিয়ে ধীরে ধীরে খাবেন, যা আপনার হজমে সহায়ক হবে।

• ইফতার ও সাহরিতে আট থেকে দশ গ্লাস পানি পান করুন।

• এনার্জি ড্রিংক, কার্বনেটেড ড্রিংক এবং সোডাজাতীয় পানীয় বর্জন করুন।

• শরীরে পানি, ভিটামিন ও খনিজের চাহিদা পূরণের জন্য আঙুর, খেজুর, বিভিন্ন ফলের রস ইত্যাদি গ্রহণ করতে পারেন।

• মিষ্টি শরবত, মিষ্টান্নজাতীয় অতিরিক্ত চিনিযুক্ত খাবার শরীরের ক্ষতি করতে পারে। তাই এ ধরনের খাবার বর্জন করাই ভালো।

ইফতারে যা খাবেন

আমাদের দেশে সবচেয়ে জনপ্রিয় ইফতারির মধ্যে রয়েছে ছোলা, মুড়ি, পেঁয়াজি, বেগুনি, ডাল ও সবজি বড়া, আলুর চপ, খোলা খেজুর, হালিম, বিভিন্ন ধরনের কাবাব, জিলাপি, বুন্দিয়া ইত্যাদি। আরও রয়েছে বিভিন্ন ফল ও ফলের রস, আখের গুড়ের শরবত ছাড়াও বাহারি শরবত। এছাড়া বিরিয়ানি ও তেহারি তো আছেই। আমরা ইফতারে কি গ্রহণ করব সেটা নির্ভর করবে আমাদের বয়স ও শারীরিক অবস্থার ওপর।

সুস্থ, স্বাস্থ্যবান রোজাদারের জন্য ইফতারিতে খেজুর বা খোরমা, ঘরের তৈরি বিশুদ্ধ শরবত, কচি শসা, চিঁড়া, দই, পেঁয়াজি, বুট বা ছোলা, ফরমালিন অথবা ক্যালসিয়াম কার্বাইডমুক্ত মৌসুমি ফল থাকা ভালো। ফলমূলে ভিটামিন ও মিনারেল পাওয়া যায়, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয় এবং সহজে তা হজম হয়। ইফতারে যতটা সম্ভব বাইরের ভাজাপোড়া না খাওয়াই ভালো, অতিরিক্ত ভাজাপোড়া খাবার খেলে শরীরে ট্রান্স ফ্যাটের পরিমাণ বেড়ে যায়। পাশাপাশি তেহারি, হালিম এসব খাদ্য গ্রহণের কারণে বদহজম হতে পারে। ইফতারে ছোলার উপকারিতা অনেক, ছোলা আমাদের দেহের অতিরিক্ত গ্লুকোজের পরিমাণ কমিয়ে দেয়, যা ডায়াবেটিস রোগীদের প্রোটিনের উৎস হিসেবে কাজ করতে পারে। তাছাড়াও কাঁচা ছোলা খাওয়াও আমাদের জন্য উপকারী।

গ্রীষ্মকাল হওয়ায় পরিমাণ মতো বিশুদ্ধ পানি পান করা উচিৎ। ইফতারে তরমুজ বা দেশীয় কোনো ফল দিয়ে জুস করে খেলে ডিহাইড্রেশন অনেকটা দূর হবে। ইফতারের সময় আমরা অনেকেই একসঙ্গে অনেক বেশি পানি পান করি। এতে খাবার ও পানি মিলে পেটের ভেতরে এক ধরনের অস্বস্তি তৈরি করে। এতে ইফতারের পর ইবাদতে, কাজে ক্লান্তি আসে। এটা না করে ইফতারের পর থেকে সেহরির আগ পর্যন্ত একটু পর পর ৮-১০ গ্লাস পানি খাওয়া উচিত। এছাড়াও এশা ও তারাবির নামাজের পরও অভ্যাস অনুযায়ী পরিমাণমতো ভাত, মাছ অথবা মুরগির মাংস ও সবুজ সবজি খাওয়া যেতে পারে।

কী খাবেন সেহরিতে

সেহরির খাবার অবশ্যই মুখরোচক, সহজপাচ্য ও স্বাস্থ্যসম্মত হওয়া প্রয়োজন। কারণ শরীর সুস্থ রাখার জন্য সেহরি খাওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অধিক তেল, অধিক ঝাল, অধিক চর্বিজাতীয় খাবার খাওয়া একদম উচিত নয়। ভাতের সঙ্গে মিশ্র সবুজ সবজি, মাছ অথবা মাংস খাবেন। আমাদের দেহের জন্য প্রোটিন অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু অতিরিক্ত মাংস খেয়েই প্রোটিনের অভাব পূরণ হবে- এমনটা নয়। এতে করে কোলেস্টেরলজনিত সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই অতিরিক্ত মাংস পরিহার করে আমরা মাছ ও সবুজ শাকসবজি খেতে পারি। সেহরিতে আঁশযুক্ত খাবার রাখলে ভালো হয়। এতে করে ক্ষুধা অনুভূত হয় না। সেহরির সময় কয়েকটা খেজুর বা কলা খেলে ফাইবারের অভাব থাকে না। খেজুর সারাদিন শরীরকে আর্দ্র রাখবে।

পানি খাওয়ার ক্ষেত্রে ইফতার থেকে সেহরি পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে অন্তত দেড় থেকে দুই লিটার পানি পান করবেন। দীর্ঘ সময় অভুক্ত থাকার কারণে শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দিতে পারে এবং পানিশূন্যতার কারণে শরীরে নানা জটিলতা দেখা দিতে পারে। তাই পানি নিজের অভ্যাস অনুযায়ী চাহিদা মত পানি পান করতে হবে। অনেকে পানির পরিবর্তে লেমন অথবা রোজ ওয়াটার, শরবত, ভিটামিন ওয়াটারসহ নানা ধরনের প্রক্রিয়াজাত পানীয় পান করেন। এ ব্যাপারে অনেক পুষ্টিবিদদের অভিমত, রোজাদারদের শুধু বিশুদ্ধ পানি পান করাই ভালো। যারা রুটি খেতে চান তারা ভাতের পরিবর্তে লাল আটার রুটি খেতে পারেন।

মনে রাখতে হবে, ইফতার ও সেহরিতে বেশি ক্যালরি সমৃদ্ধ এবং সহজপাচ্য এমন খাদ্য গ্রহণ করা উচিত। ভাজাপোড়া ও অতিরিক্ত মসলাযুক্ত খাদ্য বুক জ্বালাপোড়া এবং বদহজমের সমস্যা তৈরি করে, তাই এগুলো বর্জন করুন। অতিরিক্ত লবণ ও লবণাক্ত খাবার গ্রহণ থেকে বিরত থাকুন। কারণ, এসব রোজার সময় পানির পিপাসা বৃদ্ধি করে। প্রতিদিন এইভাবে নিয়ম মেনে খেলে আশা করা যায় রোজাদারদের অস্বস্তিতে পড়তে হবে না, শরীর দুর্বলও লাগবে না। তবে শারীরিক কোনো সমস্যা থাকলে অবশ্যই চিকিৎসকের সাথে আলোচনা করে নেবেন।

লেখক- চেয়ারম্যান, পুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তি বিভাগ, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

নয়াশতাব্দী/ডিএ/এনএস

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ