ঢাকা, সোমবার, ১১ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ কার্তিক ১৪৩১, ৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কিভাবে বুঝবেন আপনি স্মার্টফোনে আসক্ত

প্রকাশনার সময়: ১৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৪:৫২

বর্তমানে এক মুহূর্ত স্মার্টফোন ছাড়া চলে না। ভালো লাগছে না তখনি স্মার্টফোনে ঢুঁ মারেন। বাস্তব জীবনের চেয়ে অনলাইনই বেশি প্রাধান্য দিচ্ছেন? তাহলে ধরে নিতে পারেন আপনি স্মার্টফোনে আসক্ত হয়ে পড়েছেন।

একটু খবর দেখা, অনলাইনে কেনাকাটা করা বা বন্ধুদের ছবি ও ভিডিও দেখা- এমন বিভিন্ন কারণে আমরা কয়েক মিনিট পরপর ফোন দেখি। আমাদের অনেকেই ফোন ছাড়া কোথাও যাই না। সবসময় আমরা ফোনে বুঁদ থাকি।

সমস্যা হলো আমরা ঘুমিয়ে থাকলেও আমাদের ফোন নিয়মিত কাজ করে। সাইকোলজিস্ট দুনিয়া ফস বলেন, আমাদের মস্তিষ্ক পর্যাপ্ত বিশ্রাম পায় না। আমাদের মস্তিষ্কে এমন একটা সিস্টেম আছে যেটা, আমরা যখন ভালোকিছু করি সেই অনুযায়ী আমাদের পুরস্কার দেয়। যেমন মিষ্টি খাবার, ভালো মুভি দেখা, প্রেমে পড়া। আমরা ফোনে যে চ্যাট আর ছবি দেখি তারও একইরকম প্রভাব আছে। তবে সময়ের সঙ্গে সেটা কমে যায়। আমাদের রিওয়ার্ড সিস্টেমের কার্যকারিতা ক্রমেই কমতে থাকে, যে কারণে আমাদের আরও বেশি প্রয়োজন হয়। তখন আমরা আসক্ত হয়ে পড়ি, বলেন তিনি।

এ কারণে আমাদের মধ্যে একাগ্র থাকার মানসিকতা কমে যাচ্ছে, ক্লান্তি ভর করছে। স্মার্টফোনে আসক্তি এমনকি বিষণ্নতার মতো মানসিক ব্যাধির দিকেও নিয়ে যেতে পারে। অ্যাপ ও পোর্টালের সংখ্যা বাড়তে থাকায় মিডিয়ার অতিরিক্ত ব্যবহার বিষয়টি এখন সাধারণ ঘটনা হয়ে উঠছে।

পরামর্শক ইয়ুস্টুস ম্যোলেনব্যার্গ বলেন, আমাদের প্রতিদিনকার জীবন সহজ করতে ফোন আর অ্যাপ ব্যবহার আরও সহজ করতে কাজ করছেন এই খাত সংশ্লিষ্ট মানুষেরা। ফোনে নতুন রেসিপি দেখা হোক কিংবা ওয়ার্কআউট। অনেক জরিপে দেখা গেছে, আমাদের স্মার্টফোন ব্যবহারের সময় দিন দিন বাড়ছে।

একজন জার্মান মাসে গড়ে ৪০ ঘণ্টা পর্যন্ত সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করে থাকেন।

অনেক মানুষ দিনে দুই থেকে চার ঘণ্টা পর্যন্ত স্মার্টফোনে থাকেন। এটি একধরনের বাধ্যতামূলক আচরণ হয়ে উঠেছে। কোনো বিষয় সম্পর্কে হালনাগাদ থাকতে না পারার ভয়টা অনেক বড়। যেমন ইনস্টাগ্রাম রিলসের সেটিংসে গিয়ে আপনি ৫, ৬ বা ৮ ঘণ্টা বেঁধে দিতে পারেন। কিন্তু আমাকে সেটা দেখতে হবে। আরেকটা বিষয় হলো, মানুষ এখন দেখতে পারে যে, আমি বার্তাটি দেখেছি- যেমন হোয়াটসঅ্যাপে নীল টিক, এবং এটা ডিফল্ট সেটিং। সঙ্গে সঙ্গে উত্তর দেওয়ার একটা সামাজিক চাপ থাকে, কারণ সম্পর্কটা যে গুরুত্বপূর্ণ, তা দেখানো প্রয়োজন, বলেন ম্যোলেনব্যার্গ।

মহামারির সময় স্মার্টফোনের ব্যবহার আরও বেড়েছে, কারণ লকডাউনের সময় সামাজিক যোগাযোগ সীমত ছিল।

আপনার হাতে স্মার্টফোন না থাকলে কি সেটি সমস্যার মনে হয়? মানুষের সঙ্গে দেখা করার গুরুত্ব কি আপনার কাছে কমে যাচ্ছে? মিডিয়ার ব্যবহার যে আর আপনার জন্য স্বাস্থ্যকর অবস্থায় নেই, এগুলো তার লক্ষণ।

অ্যাপ মুছে ফেলা, আর সপ্তাহান্তে স্মার্টফোন ব্যবহার না করার চেষ্টা করুন। আপনার ক্ষেত্রে কোনটা কাজ করে সেটি বের করা এবং প্রলোভন এড়াতে শেখা গুরুত্বপূর্ণ। ইয়ুস্টুস ম্যোলেনব্যার্গ বলেন, নিজেকে জিজ্ঞেস করুন, আপনি যে মিডিয়া ব্যবহার করছেন তাতে আনন্দ পাচ্ছেন কিনা। বিষয়টি আপনি নিজে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন, যেমন স্মার্টফোন ব্যবহারের সময় নির্দিষ্ট করে দিয়ে। সেই সময় শেষ হলে আপনার ফোনের রং ধূসর করে দিন, যেন অতটা বিভ্রান্তকর না থাকে। কিংবা নোটিফিকেশন মিউট করে দিন, যেন আপনার মনোযোগ নিয়মিত অন্যদিকে চলে না যায়।

তাহলে আপনার সুখি হওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে। ভার্চুয়াল জগতের চেয়ে বাস্তব জগৎ অনেক বেশি স্বাস্থ্যকর।

নয়া শতাব্দী/এসএ

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ