ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম এখন আমাদের জীবনের অংশ হয়ে গেছে। সকালে ঘুম থেকে ওঠা এবং রাতে ঘুমাতে যাওয়ার মাঝে সারাদিন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঢু না মারলে যেন চলেই না। নিজের জীবনের ভালো-মন্দ, হাসি-কান্না, মিলন-বিরহ-বিচ্ছেদ, দুঃখ-যাতনার নানা কথা, ছবি শেয়ার করা হয় এখানে। ভিডিও বা রিলসের মাধ্যমে অনেকেই শেয়ার করেন নানা মুহূর্ত।
প্রশ্ন হচ্ছে সবকিছুই কি ফেসবুকে প্রকাশ করা উচিত? বর্তমানে অনেক কাপল, যুগল বা দম্পতিকেই দেখা যায় নিজের ব্যক্তিগত নানা মুহূর্তের ছবি শেয়ার করছেন। ভালোবাসার মানুষটির সঙ্গে ঘোরাঘুরি, খাওয়া-দাওয়া, ভালোবাসা ভাগ করে নেওয়া সব জানান সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এসব পোস্টে ‘হ্যাপি কাপল’, ‘তোমরা ভীষণ সুখী’ ইত্যাদি কমেন্টের বন্যা বয়ে যায়। আসলেই কি ব্যক্তিগত মুহূর্তের ছবি শেয়ার করা যুগলরা সুখী? কী বলছে গবেষণা?
না। সুখী নন।
সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, যেসব যুগল একান্ত ব্যক্তিগত মুহূর্তগুলো সারাক্ষণ সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারে অভ্যস্ত, তারা আসলে ততটা সুখী নন। তাদের তুলনায় যারা নিজেদের ব্যক্তিগত মুহূর্তগুলোকে ‘ব্যক্তিগত’ রাখতে পারেন, সেসব যুগলদের সমীকরণ বাস্তবে বেশ সুন্দর ও পোক্ত।
এই বিষয়ে প্রায় ৩০০ যুগলের ওপর সমীক্ষা চালিয়েছিলেন কানসাস বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা। যারা এই গবেষণায় অংশ নিয়েছিলেন তাদের ব্যক্তিগত জীবন এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার নিয়ে বেশ কিছু প্রশ্ন করা হয়। এসব প্রশ্নের উত্তর একত্রিত করে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন গবেষকরা।
তাদের মতে, সামাজিক মাধ্যমে সুখী যুগলদের এমন সব ছবি দেখে বেশিরভাগ মানুষই নিজেদের সঙ্গে তুলনা করে ফেলেন। যা অনেকক্ষেত্রে নিরাপত্তাহীনতা এবং ঈর্ষার কারণ হয়। মনোবিদেরা বলছেন, অন্যদের আপাত সুখী দেখা এমন ছবিগুলো একটি সুন্দর সম্পর্ক নষ্ট করতে পারে।
আসলে ‘পারফেক্ট রিলেশনশিপ’ বা ‘আদর্শ সম্পর্ক’ এর কোনো সংজ্ঞা হয় না। প্রতিটি যুগলের সম্পর্কের সমীকরণ ভিন্ন। কে কেমনভাবে আনন্দ পান বা সুখে থাকেন তা অন্যদের বোঝার কথা নয়। আর্থিক, সামাজিক অবস্থান বিবেচনায় একেকজনের কাছে সুখের সংজ্ঞা একেকরকম হয়।
এছাড়া ফেসবুক বা ইনস্টাগ্রামে নিজেদের ব্যক্তিগত মুহূর্ত শেয়ার করলে সাইবার ক্রাইমের ঝুঁকি থাকে। অনলাইন প্রতারণা বা ব্ল্যাকমেইলের কারণ হতে পারে এসব ছবি বা ভিডিও। অনেকসময় অসাধু ব্যবহারকারীরা এসব ছবি এডিট করে অপরাধমূলক কাজও করে। তাই সাবধান থাকাই ভালো। নিজের একান্ত মুহূর্তগুলো নিজেদের মধ্যে রাখাই শ্রেয়।
একটি সম্পর্কের সমীকরণ কেমন হবে তা অন্য কেউ নির্ধারণ করে দিতে পারেন না। ঠিক তেমনি আপনার সম্পর্কে যে ‘আদর্শ সম্পর্ক’ এর সব সূত্র মিলবে এমনটা ভাবা উচিত নয়। বরং নিজেদের মতো সুখে থাকুন। অন্যের সঙ্গে তুলনা করে সুন্দর সম্পর্ক নষ্ট করবেন না।
সূত্র: এবিপি
নয়াশতাব্দী/এমটি
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ