এলোভেরাকে ঘৃতকুমারীও বলা হয়ে থাকে। এলোভেরার উপকারিতা কারো অজানা নয়। এটি বহুজীবী ভেষজ উদ্ভিদ এবং দেখতে অনেকটা আনারস গাছের মতো।
এর পাতাগুলি পুরু, দু’ধারে করাতের মতো কাঁটা এবং ভেতরে পিচ্ছিল শাঁস থাকে। প্রাচীনকাল থেকেই প্রাকৃতিক ভেষজ ঔষধ হিসেবে অ্যালোভেরার ব্যবহার প্রচলিত রয়েছে।
এই রসালো উদ্ভিদের পাতায় রয়েছে ২০ রকমের খনিজ পদার্থ যা মানবদেহের জন্য উপকারী। এছাড়াও ভিটামিন এ, বি-ওয়ান, বি-টু, বি-সিক্স, বি-ওয়ানটু, সি ও ই রয়েছে।
এজমা, ড্যান্ড্রাফ, সেরিয়াসিসের মতো রোগগুলোর জন্য স্কিন কেয়ার চিকিৎসাগুলোতে অ্যালোভেরা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
স্বাস্থ্যের যত্নে এলোভেরার উপকারিতা
শরীরকে যদি চাঙ্গা রাখতে চান তাহলে নিয়মিত এলোভেরার শরবত খাওয়া শুরু করে দিন।কারণ কারণ বেশ কিছু গবেষণায় এ কথা প্রমাণ হয়েছে যে, প্রাকৃতিক এই উপাদান টিকে কাজে লাগিয়ে শরীরের অনেক রোগকেই দূরে রাখা সম্ভব। তবে এলোভেরা খাওয়ার সঠিক সময় ও নিয়ম আছে।কিভাবে খাবেন? শরীরে টক্সিনের মাত্রা যদি বৃদ্ধি পেতে থাকে তাহলে শরীরে প্রতিটি অঙ্গের কর্মক্ষমতা ধীরে ধীরে কমতে শুরু করে।
বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে এলোভেরা খাওয়া মাত্রই সারা অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্তের প্রভাব বেড়ে যায়। যে কারণে শরীরের প্রতিটি অঙ্গের পাশাপাশি হার্টের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পেতেও সময় লাগে না।
সেই সঙ্গে রক্তে খারাপ কোলেস্টেরল এর মাত্রাও হ্রাস পায়। ফলে কোন ধরনের হার্টের রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশংকা কমে যার। এমনকি হঠাৎ করে হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও দূর হয়।
সুস্থ ভাবে দীর্ঘদিন যদি বাচতে চান তাহলে এলোভেরার রস খেতে ভূলবেন না যেন! কারণ নিয়মিত এই প্রাকৃতিক উপাদানটি গ্রহণ করলে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী হয়ে ওঠে। ফলে সর্দি কাশি থেকে করে ছোট বড় কোনো রোগই ধারের কাছে ঘেষতে পারে না। সেই সাথে সংক্রমণ আক্রান্ত হওয়ার আশংকাও কমায়।
এলোভেরা মাংসপেশির ব্যাথা কমাতে সাহায্য করে থাকে৷ ব্যাথা স্থানে এলোভেরা জেল এর ক্রিম লাগালে ব্যাথা কমে যায়।
এলোভেরার জুস দাঁত ও মাড়ির ব্যাথা উপশম করে থাকে। দাঁতে কোনো ইনফেকশন থাকলে তাও দূর করে দেয়।নিয়মিত এলোভেরার জুস খাওয়ার ফলে দাঁত ক্ষয় প্রতিরোধ করা সম্ভব।
ওজন কমাতে এলোভেরা বেশ কার্যকরি। বিভিন্ন কারণে আমাদের শরীরে মেদ জমে। এলোভেরা তে উপস্থিত এন্টি ইমফ্লেমেট্রি উপাদান এই মেদ কমিয়ে ওজন হ্রাস করে থাকে। পুষ্টিবিদগন এই কারণে ডায়েট লিস্টে এলোভেরা জুস রাখার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
হজম শক্তি বৃদ্ধিতে এলোভেরার জুড়ি নেই। এটি অন্ত্রের উপকারি ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধি করে অন্ত্রের প্রদাহ সৃষ্টিকারি ব্যাকটেরিয়া রোধ করে যা হজম শক্তি বাড়িয়ে থাকে।
এলোভেরা জুস রক্তের সুগারের পরিমাণ ঠিক রাখে এবং দেহের রক্ত সঞ্চালন বজায় রাখে। ডায়াবেটিস এর শুরুর দিকে নিয়মিত এলোভেরার জুস খেলে ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করা সম্ভব।
এছাড়াও এলোভেরা লোহিত রক্তকণিকার উৎপাদন বাড়ায়। বিভিন্ন পুষ্টির ঘাটতি দূর করে এই এলোভেরা। প্রচন্ড গরমে এলোভেরার শরবত করে খেলে শরীর ঠান্ডা থাকে।
ত্বকের যত্নে এলোভেরা সৌন্দর্যের জগতে এলোভেরার অবদান! সে তো অনস্বীকার্য। এলোভেরার সঠিক ব্যবহারে আমরা দূর করতে পারি আমাদের ত্বকের হাজারো সমস্যা এবং পেতে পারি দাগ মুক্ত হাস্যোজ্বল ত্বক।
আসুন রূপচর্চায় এলোভেরার ব্যবহার ও এর উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নেই আপনার ত্বক কি খুব শুষ্ক হয়ে যাচ্ছে! তাহলে এলোভেরার ভেতরে যেই জেল টা থাকে সেটা কিছুটা বের করে নিন। তারপর পুরো মুখে মেখে নিন।রেখে দিন ১০-১৫ মিনিট। নরমাল পানি দিয়ে ধুয়ে নিন। দেখবেন আপনার ত্বক কতটা নরম ও সজীব হয়ে গেছে।
এলোভেরায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন-এ, ভিটামিন-বি এবং ভিটামিন- সি । ভিটামিন-এ ত্বক ভালো রাখতে সাহায্য করে।
এছাড়াও এলোভেরায় ভিটামিন ই ও বেটা ক্যারোটিন এর মতো এন্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ। যা ত্বক কে ফ্রি র্যাডিকেল থেকে রক্ষা করে । ফলে বলিরেখা ও বয়সের ছাপ দূর হয়। এর পাপাইন নামক উপাদান ত্বকের মৃত কোষ দূর করে এবং স্থিতিস্থাপকতা বাড়িয়ে ত্বক টান টান করে।
ফলে আপনার বয়স কম মনে হবে এবং আপনি থাকবেন চির তরূণ। এক চামচ এলোভেরা জেল এর সাথে মিশিয়ে নিতে হবে অর্ধেক পরিমাণ লেবুর রস।
ভালো করে মিশিয়ে নিন। মুখে মেখে রেখে দিন ১৫ মিনিট।
তারপর নরমাল পানি দিয়ে ধুয়ে নিন। নিয়মিত ব্যবহার করলে রোদে পোড়া ভাব চলে যাবে।
এক চামচ এলোভেরা জেল এর সাথে নিয়ে নিন পরিমাণ মতো মুলতানি মাটি। উপাদান দুটি ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। মুখে লাগিয়ে ১৫ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন।
এই প্যাক টি নিয়মিত ব্যবহার করলে মুখে আর অয়েলি হবে না। ফলে ব্রণ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক টাই কমে যাবে।
অ্যালোভেরা দিয়ে ত্বকের মৃত কোষ দূর করার মাস্ক তৈরি করার জন্য আপনার লাগবে ১ চা চামচ ফ্রেশ অ্যালোভেরা জেল যা ব্লেন্ড করে নিন। এরপর এক চা চামচ ওটমিলের গুড়া আর ১/২ চা চামচ অলিভ অয়েল মিশিয়ে মাস্কটি মুখে আর গলায় লাগিয়ে ৩০ মিনিট রাখবেন।এরপর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে মুখ পরিষ্কার করে ধুয়ে ফেলুন । সপ্তাহে ১ বার এটি ব্যবহার করুন। অ্যালোভেরার অ্যান্টিসেপটিক গুনাগুনও উল্লেখযোগ্য।
অ্যালোভেরার পাতার জেল বের ফ্রিজে রাখুন আর অল্প কেটে গেলে বা ক্ষত হলে লাগান। দিনে দুই বা তিন বার লাগালেই ক্ষত সেরে যাবে।
অতি অল্প খরচে বাজারে এই অ্যালোভেরা পাওয়া যায়। আপনার রূপচর্চার এই ঘরোয়া উপাদানটি আপনাকে সতেজ, সুন্দর আর উজ্জীবিত রাখবে।
চুলের যত্নে এলোভেরার উপকারিতা চুলের যত্নে এলোভেরার উপকারিতা যথেষ্ট কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। অ্যালোভেরা জেল করে চুলে ব্যবহার করতে হয়।
এলোভেরা জেল বাজারেও কিনতে পাওয়া যায়। তবে ঘরে বানানো হলে তার কার্যকারিতা বেড়ে যায়।
চুলে অ্যালোভেরা জেলের ব্যাবহার করা অনেক সহজ।
চুল যদি খুব বেশি রুক্ষ হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই একটা ডিমের সাথে এই জেলটি মিশিয়ে চুলে মাসাজ করতে হবে।
তারপর একটা ভেজা তাওয়াল অথবা গামছা দিয়ে কমপক্ষে ২ ঘণ্টার জন্য মাথা পেঁচিয়ে রেখে দিতে হবে।
তারপর খুব ভাল করে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে চুল ধুয়ে নিতে হবে। ধোয়া হয়ে গেলে তবেই শ্যাম্পু দেওয়া যাবে। এরপর শ্যাম্পু করে নিতে হবে এবং অ্যালোভেরা জেল ব্যাবহার করা হলে সেদিন কন্ডিশনার ব্যবহারের প্রয়োজন নেই।
কারণ অ্যালোভেরা জেল নিজেই অনেক ভালো কন্ডিশনার হিসেবে কাজ করে।
যদি অতিরিক্ত চুল পরতে থাকে তাহলে জেলটিকে আরো দুই ধরনের তেলের সাথে মিশিয়ে নিতে হবে; হতে পারে নারিকেল তেল, বাদামের তেল, কালোজিরার তেল ছাড়াও অন্যান্য তেল।
তবে নারিকেল তেল ও অলিভ অয়েল হলে বেশি ভালো ফল পাওয়া যাবে।
নারিকেল তেল, অলিভ অয়েল ও অ্যালোভেরা জেলটি একত্রে মিশিয়ে
সপ্তাহে অন্তত ২-৩ বার ব্যবহার করতে হবে।
অবশ্যই ভালো মত স্কাল্পে মাসাজ করে সারা রাত রেখে সকালে শ্যাম্পু করে নিতে হবে।
এছাড়াও, এলোভেরা জেল এর সাথে টক দই, কলা মিশিয়ে হেয়ার প্যাক তৈরি করে নিয়মিত চুলে দিলে চুল পড়া কমে সাথে সাথে চুল দ্রুত লম্বা হয়।
নয়া শতাব্দী/এসইউ
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ