ঢাকা, রোববার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভারতীয় উপমহাদেশ থেকে যেভাবে ব্রিটিশ রানিদের মাথায় কোহিনুর

প্রকাশনার সময়: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২২, ২০:৪৫
কোহিনুর মুকুট

কোহিনুর হলো বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ কাটা হীরা। হীরাটি ১০৫.৬ মেট্রিক ক্যারোটের। ওজন ২১.৬ গ্রাম। ১১শ’ থেকে ১৩শ’ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে ভারতীয় উপমহাদেশের এক খনিতে পাওয়া যায় হীরাটি। মুকুটটি বিভিন্ন রাজা বাদশাহ ও শাসকের হাত ঘুরে শেষ পর্যন্ত স্থান পেয়েছে টাওয়ার অফ লন্ডনে। এই মুকুট বিশেষ গুরুত্বও বহন করে।

১৯৮৬ সালের ১লা জানুয়ারি রাজ্যভিষেকের দিন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ কোহিনুর মুকুটটি মাথায় পরেছিলেন। তখন থেকে প্রায় ৭ দশক ইংল্যান্ডের শাসকের ভূমিকায় ছিলেন এই বিট্রিশ রানি। তবে ৭০ বছর রাজত্ব করার পর ব্রিটেনের সবচেয়ে দীর্ঘ মেয়াদী রাজশাসক রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ ব্যালমোরাল প্রাসাদে প্রিয়জনদের সান্নিধ্যে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। তার বয়স হয়েছিল ৯৬ বছর।

রানির মৃত্যুর পর ব্রিটেনের পরবর্তী রাজা হচ্ছেন চার্লস। তাই প্রশ্ন উঠেছে কোহিনুর হিরে নিয়েও। এত বছর ধরে রানির মুকুটে শোভা পেত কোহিনুর। এখন তা শোভা পাবে কোথায়? এ বছরের শুরুতেই রানি ঘোষণা করেছিলেন, তার অবর্তমানে ‘কুইন কনসর্ট’ হবেন যুবরাজ চার্লসের স্ত্রী, ডাচেস অব কর্নওয়াল ক্যামিলা। চার্লসের রাজা হিসেবে অভিষেকের সময় ক্যামিলার মাথায় উঠবে সেই কোহিনুর বসানো মুকুট।

শতকের পর শতক পার হতে হতে কোহিনুর সাক্ষী থেকেছে বহু ঐতিহাসিক ঘটনার। বহু ঐতিহাসিক যুদ্ধকে চাক্ষুষ করেছে এই মূল্যবান হীরা। দেখেছে দরবারের জটিল কূটনীতি, সিংহাসন বদলও। এই কোহিনুরকে ঘিরে রয়েছে বহু বিতর্ক, চলেছে মামলাও।

ষোড়শ শতাব্দীতে কোহিনুর মালওয়ার রাজাদের অধিকারে ছিল। মোগল সম্রাটদের হাতে আসে এবং সম্রাট শাহজাহান নির্মিত ময়ূর সিংহাসনের শোভা বর্ধন করে। মোগল সাম্রাজ্য যখন বিক্ষিপ্ত ও ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে তখন নাদির শাহকে আমন্ত্রণ জানানো হয় মুসলিম শাসনের গৌরবোজ্জ্বল দিন ফিরিয়ে আনতে সহায়তা করতে। কিন্তু তাকে প্রতিশ্রুত অর্থ না দিয়ে প্রতারণার আশ্রয় নেওয়া হয়। কৌশলে তিনি মোগলদের কাছ থেকে কোহিনুর উদ্ধার করে নিয়ে যান ইরানে। কোহিনুর নামটিও নাদির শাহের দেওয়া। নাদির শাহ নিহত হওয়ার পর কোহিনুর আসে আফগানিস্তান সম্রাট হুমায়ুনের পুত্রের কাছে। পাঞ্জাবের মহারাজা রণজিৎ সিং আফগান শাসকের নিকট থেকে কোহিনুর হীরা পেয়েছিলেন। তিনি তা উইল করে পুরীর জগন্নাথ মন্দিরকে দিয়ে যান।

দ্বিতীয় ব্রিটিশ-শিখ যুদ্ধের পর শিখদের হারিয়ে ব্রিটিশরা শিখ সাম্রাজ্য দখল করে। তার জন্য লর্ড ডালহৌসি লাহৌরের শেষ চুক্তি তৈরি করেন। সেই চুক্তিতেই কোহিনুর সহ মহারাজার যাবতীয় সম্পদ ইংরেজদের রাজ্য ইংল্যান্ডের মহারানি ভিক্টোরিয়াকে সমর্পণের কথা বলা হয়েছিল। উত্তরসূরি দলীপ সিংহ ১৮৫০ খ্রিস্টাব্দে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির হাতে এটি তুলে দেন। শেষ পর্যন্ত সেটি আনুষ্ঠানিকভাবে ১৮৫০ খ্রিস্টাব্দে তুলে দেন রানি ভিক্টোরিয়ার হাতে। এরপর সেটি স্থান পায় ব্রিটিশ মুকুটে।

১৮৫০-এ দলীপ সিংহ ছিলেন নাবালক। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, নাবালক রাজাকে চাপ দিয়ে কোহিনুর নেওয়া হয়। সেই যুক্তিতেই ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে স্বাধীনতার সময় এবং তারপরে ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দেও বর্তমান মহারানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের রাজ্যাভিষেকের সময় কোহিনুর প্রত্যর্পণের দাবি তুলেছে ভারত। কিন্তু চুক্তির প্রসঙ্গ তুলে তা খারিজ করে দিয়েছে ব্রিটিশ সরকার।

আশির দশকেও কোহিনুরের মালিকানা নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছিল। ইরান, ভারত, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, এমনকি বাংলাদেশও এর সত্ত্ব দাবি করেছিল। তবে ব্রিটিশ সরকার সব দাবিই প্রত্যাখ্যান করেছিল ও এসব দাবি অযৌক্তিক বলে আখ্যায়িত করেছে।

কোহিনুর নামক এই হীরাটি ‘অভিশপ্ত’: প্রতিবারই হীরাটির মালিকরা কোনো না কোনো কারণে করুণ পরিণতির শিকার হয়েছিলেন। এর কারণ হিসেবে অভিশাপকে চিহ্নিত করা হয়েছে। ব্রিটিশ রাজপরিবারের এই হীরাটির মালিকানা প্রাপ্তির পর তৎকালীন রানি ভিক্টোরিয়া একটি আইন জারির মাধ্যমে এটা ঘোষণা করেছিলেন যে শুধুমাত্র রাজপরিবারের রানিরাই এ হীরাটি তাদের মুকুটে ব্যবহার করতে পারবেন, রাজারা নয়। কারণ ব্রিটিশদের হাতে আসার পূর্বে এই হীরাটির সব মালিকরাই ছিল রাজা না হয় সম্রাট, তথাকথিত অভিশাপের শিকার তারাই হয়েছিল বলে মনে করা হয়।

লিলিবেট থেকে এলিজাবেথ : রাজকুমারী এলিজাবেথের বাবা ৬ষ্ঠ জর্জ ব্রিটেনের রাজা হয়েছেন। তখন দশ বছর বয়সী ‘লিলিবেট’। তিনিই পরবর্তীতে হয়েছিলেন ব্রিটিশ সিংহাসনের উত্তরাধিকারী। এর তিন বছরের মধ্যে ব্রিটেন নাৎসি জার্মানির সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। যুবরাজ্ঞী এলিজাবেথ ও তার ছোট বোন প্রিন্সেস মার্গারেটকে কানাডায় সরিয়ে নেওয়ার প্রস্তাব করা হলেও তাদের বাবা-মা সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। দুই বোন ওই মহাযুদ্ধের বেশিরভাগ সময়টাতে বসবাস করেন ইংল্যান্ডের বার্কশায়ার কাউন্টির উইন্ডসর প্রাসাদে। বয়স ১৮ পেরোনোর পর যুবরাজ্ঞী এলিজাবেথ ৫ মাসের মতো সময় অক্সিলিয়ারি টেরিটোরিয়াল সার্ভিসে কাজ করেন। তিনি মোটর মেকানিক হিসেবে বুনিয়াদী জ্ঞান ও ড্রাইভিং-এর দক্ষতা অর্জন করেন।

নয়া শতাব্দী/জেআই

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ