অর্থনৈতিক ও জ্বালানি সংকটে জর্জরিত শ্রীলঙ্কা। এমন পরিস্থিতিতে দেশটিতে ডিজেল ও এলপি গ্যাসের দাম কমলেও বিদ্যুতের মূল্যে ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক বৃদ্ধি করার অনুমোদন দিয়েছে শ্রীলঙ্কার পাবলিক ইউটিলিটি কমিশন (পিইউসিএসএল)।
মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে শ্রীলঙ্কান দৈনিক ডেইলি মিরর।
পিইউসিএসএল চেয়ারম্যান জনকা রথনায়েক জানিয়েছেন বুধবার (১০ আগস্ট) থেকেই নতুন মূল্য কার্যকর হবে।
তিনি বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখতে বিদ্যুতের দাম যৌক্তিক পর্যায়ে উন্নীত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। গ্রাহকদের ভোগান্তির বিষয়টি বিবেচনায় রেখেই এ দাম বাড়ানো হয়েছে।’
তবে সরকারি কমিশন বিদ্যুতের দাম ‘যৌক্তিক’ পর্যায়ে উন্নীত করার কথা বললেও শ্রীলঙ্কায় বিদ্যুতের চরম সংকট চলছে। লোডশেডিংয়ের কারণে রাজধানী কলম্বোই প্রতিদিন ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা বিদ্যুৎবিহীন থাকছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎ না থাকায় বাসাবাড়িতে অনেকেই গাড়ির ব্যাটারি ব্যবহার করছেন।
গত ৪ আগস্ট (বৃহস্পতিবার) এক সরকারি আদেশে জানানো হয়, ডিজেল ও গৃহস্থালি কাজে ব্যবহারযোগ্য এলপি গ্যাসের দাম কমেছে শ্রীলঙ্কায়। ডিজেলের দাম কমায় সেদিন দিন বাসভাড়া কমিয়ে নতুন ভাড়াতালিকা প্রকাশ করে দেশটির জাতীয় গণপরিবহন কমিশন এনটিসি।
ডিজেলের দাম কমে যাওয়ায় এনটিসির নতুন তালিকায় বাসভাড়া আগের তুলনায় ১১ দশমিক ১৪ শতাংশ কমানো হয়। তার ৫ দিনের মাথায়ই বিদ্যুতের দাম ৭৫ শতাংশ বাড়াল রাষ্ট্রপতি রনিল বিক্রমাসিংহের নেতৃত্বাধীন সরকার।
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ফুরিয়ে যাওয়ায় দেশের ২ কোটি ২০ লাখ মানুষের জন্য খাদ্য, জ্বালানি এবং ওষুধের মতো গুরুত্বপূর্ণ আমদানি করতে পারছে না শ্রীলঙ্কা। দেশটিতে মূল্যস্ফীতি প্রায় ৫০ শতাংশ বেড়েছে। এক বছর আগের তুলনায় খাদ্যের দাম ৮০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। চলতি বছর মার্কিন ডলার এবং অন্যান্য প্রধান বৈশ্বিক মুদ্রার বিপরীতে শ্রীলঙ্কার রুপির মূল্য হ্রাস পেয়েছে।
অনেকেই দেশটির চলমান এই পরিস্থিতির জন্য সাবেক প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসেকে দায়ী মনে করেন। তাদের মতে, রাজাপাকসের ভুল নীতির কারণে শ্রীলঙ্কায় বর্তমান সংকট তৈরি হয়েছে। আর এই সংকটের প্রভাব করোনাভাইরাস মহামারির কারণে আরও প্রবল হয়েছে।
বছরের পর বছর ধরে শ্রীলঙ্কা বিপুল পরিমাণ ঋণ করেছে। দুই দশকের মধ্যে এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের প্রথম দেশ হিসেবে গত মাসে শ্রীলঙ্কা দেউলিয়া হয়েছে। দেশটির কর্মকর্তারা ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেলআউটের জন্য আইএমএফের সাথে আলোচনা করছেন। কিন্তু রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলার কারণে এই আলোচনা আপাতত থমকে গেছে। এখন দেশটিতে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে পুনরায় আইএমএফের সাথে বেলআউটের আলোচনা শুরু করাই হবে বিক্রমাসিংহের অন্যতম চ্যালেঞ্জ।
ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি এবং সুদের হার বৃদ্ধি, মুদ্রার অবমূল্যায়ন, উচ্চমাত্রার ঋণ এবং বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়ার মতো একই ধরনের বৈশ্বিক প্রতিকূলতা বাংলাদেশসহ এশিয়ার অন্যান্য দেশের অর্থনীতিকেও প্রভাবিত করতে পারে বলে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
নয়া শতাব্দী/এমএস
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ