ঢাকা, সোমবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১, ১৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

পার্থকাণ্ডে মমতার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন কী ভেস্তে যাবে? 

প্রকাশনার সময়: ০৩ আগস্ট ২০২২, ০২:২৯

পশ্চিমবঙ্গের সদ্য বরখাস্ত মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের দুর্নীতি ফাঁস হওয়ার পর বিপাকে পড়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তার দল তৃণমূল কংগ্রেস। এই দুর্নীতিকাণ্ডে অভিযুক্ত পার্থ চট্টোপাধ্যায় এখন গ্রেফতার হয়ে দেশটির অর্থিক কেলেঙ্কারি তদন্তের জন্য নিয়োজিত এনফোর্সমেন্ট ডাইরক্টরেটের (ইডি) হেফাজতে। চলছে তদন্ত।

ইতোমধ্যেই মন্ত্রিসভা থেকে নয়, পার্থকে দল থেকেও বহিষ্কার করেছে মমতার তৃণমূল। তারপরও থামছে না সমালোচনা। নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে মমতার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার নিয়েও।

এদিকে ২০২৪ সালের লোকসভার নির্বাচনে বিরোধী জোটের প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে চ্যালেঞ্জ করাসহ জাতীয় রাজনীতি নিয়ে তার উচ্চাকাঙ্ক্ষা রয়েছে। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, পার্থকাণ্ডই কাল হতে পারে মমতার জন্য।

দেশ থেকে দুর্নীতি দূর করার দৃঢ় প্রতিশ্রুতি দিয়ে ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে ভারতীয় জনতা পার্টিকে (বিজেপি) বিশাল জয় এনে দিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদী। দুর্নীতিমুক্ত দেশ গড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে মোদী ভারতের ন্যাশনাল কংগ্রেস (বর্তমান প্রধান বিরোধী দল) এবং তার সহযোগীদের দশক পুরোনো শাসনামলে অসহায়ভাবে ব্যাপক দুর্নীতির সাক্ষী হওয়া ভোটারদের কাছে টানতে সক্ষম হয়েছিলেন।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ৮ বছর পূর্ণ করেছেন নরেন্দ্র মোদী। এই সময়ের মধ্যে বিরোধীরা দুর্নীতির নানা অভিযোগ এনে ইস্যু তৈরির সর্বোচ্চ চেষ্টা করলেও, এখন পর্যন্ত মোদী বা তার সরকারের ওপর এর তেমন কোনো প্রভাব পড়েনি।

তবে জাতীয় রাজনীতি থেকে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি কিছুটা আলাদা। কারণ সেখানে আবেগের সামনে পিছিয়ে পড়ে যুক্তিবাদীতা। এর বড় উদাহরণ ২০২১ সালের রাজ্য বিধানসভা নির্বাচন। বহুল আলোচিত সারদা কেলেঙ্কারিতে সরাসরি মমতা ও তার ঘনিষ্ঠ বেশ কয়েকজন সহযোগীর নাম আসলেও বিধানসভা নির্বাচনে বড় জয় পায় টিএমসি।

অর্থপাচার মামলায় দুই মাস জেলে ছিলেন অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আম আদমি পার্টির নেতা সত্যেন্দ্র জৈন। একই ধরনের আরেক মামলায় ইডির হাতে গ্রেফতার হওয়ার পর চার মাস জেলে ছিলেন মহারাষ্ট্রের এনসিপি নেতা নওয়াব মালিক। তবে জেলে থাকা সত্ত্বেও তারা কেউই সেসময় মন্ত্রিত্ব হারাননি। তবে সম্প্রতি মহা আঘাদি জোট সরকারের পতনের পর মন্ত্রীর চেয়ার হারান নওয়াব মালিক। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মন্ত্রী হিসেবে ক্ষমতা বহাল রাখার সুযোগ ছিল পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সামনেও।

তবে মমতা ভালো করেই জানতেন যে এই সংকট জিয়িয়ে রেখে মোদীর সাথে লড়াই করে নিজেকে বিকল্প প্রধানমন্ত্রী হিসেবে উপস্থাপন করা কঠিন হবে তার জন্য।

ইডি এখন পর্যন্ত পাঁচ কেজি সোনার পাশাপাশি পার্থ ও তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী অর্পিতা মুখার্জির দুটি ফ্ল্যাট থেকে নগদ প্রায় ৫০ কোটি রুপি উদ্ধার করেছে। বিজেপি বলছে, মোট উদ্ধার হওয়া সম্পদের পরিমাণ ২০০ কোটি রুপির বেশি, যার মধ্যে অবৈধভাবে অর্জিত অর্থ দিয়ে কেনা কিছু অস্থাবর সম্পত্তিও রয়েছে।

এদিকে কয়লা কেলেঙ্কারির এক মামলায় বর্তমানে ইডির নজরদারিতে আছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাগ্নে ও তৃণমূল কংগ্রেসের অন্যতম প্রভাবশালী নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ও তার স্ত্রী।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, পার্থের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে দুর্নীতির কেলেঙ্কারি থেকে মুক্তি পাবেন এমন কিছু ভেবে থাকলে তা হবে মমতার বড় ভুল। কারণ পার্থকে মন্ত্রী এবং দলীয় পদ থেকে বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত নিতে কেন মমতার ছয় দিন সময় লাগল, তা নিয়ে এরইমধ্যে প্রশ্ন উঠেছে।

বিশ্লেষকদের মতে, মমতার নেতৃত্বের মানের ভিত্তিতে বিষয়টিকে দুদিক থেকে বিবেচনা করা যায়। প্রথমত, তিনি যদি আগে থেকে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের আর্থিক কেলেঙ্কারি সম্পর্কে অবগত না হয়ে থাকেন তাহলে এটি এক অর্থে নেতা হিসেবে তার অক্ষমতা। দ্বিতীয়ত, দুর্নীতি যদি তার অনুমোদনে ঘটে থাকে তাহলে সেটিই মমতার প্রধানমন্ত্রীত্বের উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে ম্লান করার জন্য যথেষ্ট হতে পারে।

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ