ঢাকা, সোমবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১, ১৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিনজো আবেকে হত্যা, বিশ্বনেতাদের নিন্দা

প্রকাশনার সময়: ০৯ জুলাই ২০২২, ০১:৩৯

বিশ্বের অন্যতম নিরাপদ দেশ জাপানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ড বিশ্ব নেতাদের স্তম্ভিত করেছে এবং তারা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। শুক্রবার (৮ জুলাই) এ হতাকাণ্ড ঘটে।

জাপানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের হত্যাকাণ্ডে এক দিনের রাষ্ট্রীয় শোক পালনের ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ। এ ঘটনায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রী শোক প্রকাশ করেছেন। এছাড়াও পররাষ্ট্রমন্ত্রী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীসহ বিভিন্ন জন শোক প্রকাশ করেন।

৬৭ বছর বয়সী আবে পশ্চিম জাপানের নারাতে রাজনৈতিক প্রচারণার বক্তব্য দেয়ার সময় পিছন থেকে গুলিবিদ্ধ হন। এরপর তাকে একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সেখানে চিকিৎসকেরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

স্বাস্থ্যগত কারণে ২০২০ সালে পদত্যাগ করার আগে আবে ছিলেন জাপানের সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদী প্রধানমন্ত্রী।

এ হতাকাণ্ডের খবর পেয়ে জাপানের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা দেশজুড়ে প্রচারণা অনুষ্ঠান থেকে তড়িঘড়ি করে টোকিওতে ফিরে এসেছেন। কিশিদা এ হতাকাণ্ডকে ‘জঘন্য ও বর্বর’ বলে অভিহিত করেছেন।

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন এ হতাকাণ্ডকে ‘ঘৃণ্য’ বলে অভিহিত করেছেন। জনসন এক টুইটে লিখেছেন, ‘তার নেতৃত্ব অনেকেরই মনে থাকবে। আমি তার পরিবার, বন্ধু এবং জাপানি জনগণের সাথে একাত্মতা পোষণ করছি। এই শোকাবহ ও দুঃখের সময়ে যুক্তরাজ্য আপনাদের পাশে রয়েছে।’

ইরান এই হতাকাণ্ডকে ‘সন্ত্রাসবাদী কাজ’ বলে নিন্দা করেছে। ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেছেন, ‘একটি দেশ যে সন্ত্রাসের শিকার হয়েছে এবং সন্ত্রাসীদের হাতে তাদের মহান নেতাকে হারিয়েছে আমরা তা জেনেছি। আমরা আন্তরিকভাবে ও উদ্বেগের সাথে এ বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছি।’

জাপানের সর্বজনীন সম্প্রচার প্রতিষ্ঠান এনএইচকে পাবলিক ব্রডকাস্টার পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর নারার একটি ট্রেন স্টেশনের বাইরে আবের বক্তৃতা দেয়ার ফুটেজ প্রচার করেছে।

এতে দেখা যায়, নেভি ব্লু স্যুট পরে তিনি দাঁড়িয়ে আছেন, যখন দুটি গুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে, তখন তিনি হাত তুলছেন। এরপরই আবেকে রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখা যায়।

এর কিছুক্ষণ পরেই হোয়াইট হাউস এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘জাপানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের বিরুদ্ধে সহিংস হামলার কথা শুনে আমরা হতবাক ও দুঃখিত।’

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেন, ‘সাবেক প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের মৃত্যু জাপানের জন্য খুবই বেদনার। তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার সুযোগ আমার হয়েছিল।’

নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডার্ন শোক প্রকাশ করে বলেন, ‘এই ধরনের ঘটনা আমাদের সকলকে অন্তর থেকে নাড়া দেয়।’

এনএইচকের ভিডিওতে নিরাপত্তারক্ষীদের ধূসর শার্ট পরা একজন ব্যক্তির ওপরে লাফিয়ে উঠতে দেখা যায়, যিনি ফুটপাতে মুখ থুবড়ে পড়ে আছেন। মাটিতে একটি ডাবল ব্যারেলযুক্ত ডিভাইস, যা হাতে তৈরি বন্দুক বলে মনে হচ্ছে।

ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ এক টুইটে লিখেছেন, আবের ওপর ‘জঘন্য হামলায় আমরা গভীরভাবে মর্মাহত’।

তিনি আবেকে ‘একজন মহান প্রধানমন্ত্রী’ হিসেবে শ্রদ্ধা জানান।

তিনি আরও বলেন, ‘ফ্রান্স জাপানের জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছে।’

এদিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আবের প্রতি গভীর শ্রদ্ধার স্মারক হিসেবে শনিবারকে (৯ জুলাই) একদিনের জাতীয় শোক ঘোষণা করেছেন।

এক টুইটে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদি ‘ভারত-জাপান সম্পর্ককে একটি বিশেষ কৌশলগত এবং বৈশ্বিক অংশীদারিত্বের পর্যায়ে উন্নীত করার জন্য অপরিসীম অবদানের জন্য’ অ্যাবের প্রশংসা করেছেন।

তিনি আরও লিখেছেন, ‘আজ, সমগ্র ভারত জাপানের সঙ্গে শোক করছে এবং আমরা এই কঠিন মুহূর্তে আমরা আমাদের জাপানি ভাই ও বোনদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করছি। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের প্রতি আমাদের গভীর শ্রদ্ধার স্মারক হিসেবে ৯ জুলাই একদিনের জাতীয় শোক পালন করা হবে।’

স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ আবের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন।

তিনি এক টুইটে জানিয়েছেন, ‘স্পেন এই কঠিন সময়ে জাপানের জনগণের পাশে আছে।’

অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্টনি আলবানিজ বলেছেন, ‘আবে অস্ট্রেলিয়ার ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের একজন এবং ‘বিশ্ব মঞ্চে একজন বিশাল বক্তিত্ব’ ছিলেন। তাকে আমরা খুব মিস করব।’

ইতালির প্রধানমন্ত্রী মারিও দ্রাঘি অ্যাবের মৃতুতে গভীর শোক প্রকাশ করে বলেছেন, ইতালি আবের পরিবার, সরকার ও জাপানি জনগনের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছে।

ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেতনো মারসুদি অ্যাবের এই ‘অসময়ের মৃত্যু’তে শোক প্রকাশ করেছেন এবং বলেছেন তিনি ‘সকলের জন্য একটি উদাহরণ হিসেবে সর্বদা চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন।’

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ঝাও লিজিয়ান বলেন, চীন আবের পরিবারের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করছে।

জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তেনিও গুতেরেস বলেন, জাপানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের নেতৃত্ব মনে রাখার মতো। বছরের পর বছর ধরে তার সঙ্গে কাজের সুযোগ হয়েছে।

শিনজে আবের মৃত্যুতে তিন দিনের শোক পালনের নির্দেশ দিয়েছেন ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জাইর বলসোনারো। তিনি শিনজো আবের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেন, শিনজো আবে ছিলেন একজন অসামান্য রাষ্ট্রনায়ক। তার মৃত্যুতে অপূরণীয় ক্ষতি।

শোক জানিয়ে জার্মানির প্রেসিডেন্ট ওলাফ শলৎস বলেন, শিনজো আবের ওপর হামলা হতবাক করেছে। আমি গভীরভাবে ব্যথিত। আমি তার পরিবার, জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা এবং আমাদের জাপানি বন্ধুদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাই। আমরা জাপানের পাশে আছি।

তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট সাই ইং ওয়েন বলেছেন, বিশ্ব একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতাকে হারালো; তাইওয়ান হারালো একজন ঘনিষ্ঠ বন্ধুকে।

সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী লি সিয়েন লুং বলেন, শিনজো আবে সিঙ্গাপুরের একজন ভালো বন্ধু ছিলেন।

জাপানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের হত্যাকাণ্ডে এক দিনের রাষ্ট্রীয় শোক পালন করবে বাংলাদেশ। শুক্রবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এক প্রজ্ঞাপনে জানায়, বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু জাপানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের মৃত্যুতে আগামী ৯ জুলাই শনিবার বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয়ভাবে এক দিনের শোক পালন করা হবে।

প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়, এ উপলক্ষে শনিবার বাংলাদেশের সব সরকারি, আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সব সরকারি ও বেসরকারি ভবন এবং বিদেশের মিশনে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে। জাপানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনায় শনিবার বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হবে বলেও প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়।

এদিকে শিনজো আবে নিহতের ঘটনায় গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এমপি। এক শোকবার্তায় স্পিকার তার বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা এবং তার শোক সন্তপ্ত পরিবার-পরিজন ও শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।

উল্লেখ্য, শিনজো আবে প্রথম প্রধানমন্ত্রী হন ২০০৬ সালে। তখন তার বয়স ছিল ৫২ বছর। যুদ্ধ পরবর্তীকালে সবচেয়ে কম বয়সে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার রেকর্ড গড়েন তিনি।

তিনি লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতা হিসেবে প্রধানমন্ত্রী হন।

শিনজো আবেকে তরুণ ও পরিবর্তনের প্রতীক হিসেবে দেখা হত। তবে তিনি রাজনীতিতে নিয়ে এসেছেন তৃতীয় প্রজন্মের কিছু রাজনীতিবিদকে। যারা এসেছে উচ্চপদস্থ এবং রক্ষণশীল পরিবার থেকে।

প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শিনজো আবের প্রধানমন্ত্রিত্বের প্রথম মেয়াদ ছিল বাজে। ওই সময় বিভিন্ন স্ক্যান্ডাল এবং বিরোধে জর্জরিত ছিল তার প্রধানমন্ত্রিত্ব। তার প্রথম মেয়াদের অবসান হয়েছিল মাত্র এক বছরের মধ্যে। ওই সময় পদত্যাগ করেন তিনি।

প্রাথমিকভাবে বলা হয়েছিল তিনি রাজনৈতিক কারণে পদত্যাগ করেন। কিন্তু পরবর্তীতে শিনজো আবে জানান তিনি আলসারেটিভ কোলিটিস নামে রোগে ভুগছিলেন।

জাপানের সবচেয়ে বেশি সময় ধরে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা আবে ফের ক্ষমতায় আসেন ২০১২ সালে। এর মাধ্যমে ১৯৪৮ সালের পর জাপানের ইতিহাসে সাবেক কোনো প্রধানমন্ত্রী ফের ক্ষমতায় আসেন। এরপর লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি ২০১৪ এবং ২০১৭ সালে ফের ক্ষমতায় আসেন। এতে করে প্রধানমন্ত্রী হন আবে। তবে ২০২০ সালে তিনি ফের পদত্যাগ করেন। পদত্যাগের কারণ হিসেবে জানান তার পুরনো রোগ আলসারেটিভ কোলিটিস জটিল আকার ধারণ করেছে।

রাজনৈতিক প্রচারণা চালানোর সময় শুক্রবার সকালে তিনি আততায়ীর হাতে গুলিতে নিহত হন।

নয়াশতাব্দী/জেডআই

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ