ঢাকা, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

বাংলাদেশে কোভ্যাক্সিনের পরীক্ষামূলক প্রয়োগের চিন্তা ভারতের

প্রকাশনার সময়: ০২ আগস্ট ২০২১, ২৩:৫৯ | আপডেট: ০৩ আগস্ট ২০২১, ০০:০৫

বিশ্বজুড়ে ভারতে তৈরি করোনা টিকা কোভ্যাক্সিন নিয়ে সংশয় রয়ে গিয়েছে। সেই সংশয় মিটিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে কোভ্যাক্সিনের গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে এবার বাংলাদেশে পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করার বিষয়ে চিন্তা ভাবনা করছে ভারত সরকার।

সোমবার (২ আগস্ট) ভারত সরকারের একটি অভ্যন্তরীণ নথির বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে প্রভাবশালী দৈনিক হিন্দুস্তান টাইমস।

ওই নথিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে ‘কোভ্যাক্সিন’র ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের জন্য প্রয়োজনীয় তহবিল নিশ্চিত করেছে ভারত সরকার। বাংলাদেশে কোভ্যাক্সিনের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল করতে চায় ভারত সরকার।

এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশি কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করতে ভারতের জৈবপ্রযুক্তি বিভাগ এবং ভারত বায়োটেকের কর্মকর্তাদের নিয়ে গঠিত একটি দলের ঢাকা সফরের ব্যবস্থা করেছে ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এছাড়া বাংলাদেশে কোভ্যাক্সিন ট্রায়ালের জন্য প্রয়োজনীয় তহবিলেরও অনুমোদন নিশ্চিত করেছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এখন বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের অনুমোদন পেলেই ট্রায়াল শুরু হতে পারে।

গত জানুয়ারিতে প্রকাশিত রয়টার্সের একটি প্রতিবেদনের কথা উল্লেখ করে হিন্দুস্তান টাইমস জানায়, বাংলাদেশের মেডিক্যাল গবেষণা কর্তৃপক্ষের এক কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন, ‘কোভ্যাক্সিন’ ট্রায়ালের জন্য আবেদন করেছে ভারত বায়োটেক। এ বিষয়ে অবগত কয়েকজনের বরাতে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমটি আরও দাবি করেছে, গত ১৮ জুলাই দেশে ‘কোভ্যাক্সিন’ ট্রায়াল পরিচালনার অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশ মেডিক্যাল গবেষণা কাউন্সিল (বিএমআরসি)। আর এতে বাংলাদেশের পক্ষে সই করেছেন বিএমআরসি চেয়ারম্যান সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএমআরসি চেয়ারম্যান সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী বলেন, ‘গত মাসে এ ব্যাপারে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। থার্ড ফেজের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের জন্য অনুমোদন দেয়া হয়েছে। থার্ড ফেজ হলো ইতোমধ্যেই এ টিকা মানবদেহে সফলতার সঙ্গে ব্যবহৃত হয়েছে। এখন ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের সংখ্যা যত বেশি বাড়ানো যায় তত প্রতিষ্ঠানের সুনাম আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাড়ে। ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ব্রাজিলসহ বিভিন্ন দেশে এ টিকার ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল হয়েছে।’

মানুষের ওপর দেশে যে কোনো ধরনের প্রতিষেধকের ট্রায়ালের অনুমোদনের কর্তৃপক্ষ হলো বিএমআরসি উল্লেখ করে মোদাচ্ছের আলী বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানটি আইসিডিডিআরবির মাধ্যমে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে কাগজপত্র জমা দিয়েছে, যার পর ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের অনুমোদন দেয়া হয়।’

কবে থেকে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরু হতে পারে, এমন প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক মোদাচ্ছের আলী বলেন, ‘বিএমআরসি চূড়ান্ত অনুমতি দিয়ে দিয়েছে। এখন টিকা কী প্রক্রিয়ায় আনা হবে, ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের জন্য কত ভলান্টিয়ার নিয়োগ দেয়া হবে ইত্যাদি প্রস্তুতি সাপেক্ষে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের কাছে নথিপত্র উপস্থাপন করবে। অধিদফতরের অনুমোদন পাওয়ার পর তারা ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে যাবে।’

ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পরিচালিত ভ্যাকসিন সাপ্লাই ওয়েবসাইটের হিসাব বলছে, দেশটি এখন পর্যন্ত বাংলাদেশকে মোট এক কোটি তিন লাখ ডোজ টিকা দিয়েছে। এর মধ্যে ৩৩ লাখ উপহারের এবং বাকি ৭০ লাখ বাংলাদেশের কেনা। তবে এর মধ্যে কোনো কোভ্যাক্সিন নেই, পুরো চালানই অ্যাস্ট্রাজেনেকার কোভিশিল্ড, যা সিরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত। বাংলাদেশে কোভ্যাক্সিন ট্রায়ালের বিষয়ে জানতে এর নির্মাতা ভারত বায়োটেকের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল হিন্দুস্তান টাইমস কর্তৃপক্ষ। তবে এতে সাড়া পাওয়া যায়নি। ভারতীয় মেডিক্যাল গবেষণা কাউন্সিলের (আইসিএমআর) সঙ্গে যৌথভাবে এই টিকা তৈরি করেছে ভারত বায়োটেক।

করোনাভাইরাস মহামারি নিয়ন্ত্রণে কোভিশিল্ডের পাশাপাশি জনগণকে কোভ্যাক্সিনও দিচ্ছে ভারত সরকার। অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার প্রযুক্তিতে তৈরি কোভিশিল্ড নিয়ে খুব একটা উচ্চবাচ্য না হলেও দেশটিতে কোভ্যাক্সিনের ব্যবহার নিয়ে রয়েছে ব্যাপক বিতর্ক। তৃতীয় ধাপের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শেষ হওয়ার আগেই তড়িঘড়ি করে এটি ব্যবহারের অনুমোদন দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে ভারত সরকারের বিরুদ্ধে। তাছাড়া, জরুরি ব্যবহারে এখনো বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) অনুমোদন পায়নি ভারতীয় টিকাটি।

উল্লেখ্য, ভারতে তৈরি করোনার প্রতিষেধক কোভ্যাক্সিনকে এখনও পর্যন্ত ছাড়পত্র দেয়নি বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা। জরুরি ভিত্তিতে এই টিকা ব্য়বহারের জন্য ছাড়পত্রের দাবিতে ইতিমধ্যেই হু-এর কাছে আবেদন করেছে কোভ্যাক্সিনের প্রস্তুতকারী সংস্থা ভারত বায়োটেক। সেই আবেদন আপাতত খতিয়ে দেখছে হু। কোভ্যাক্সিন দেওয়ার সমস্ত তথ্য খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে ওই হু-এর তরফে জানানো হয়েছে। কিন্তু এখনও কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।

নয়া শতাব্দী/এসইউ

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ