ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১, ১৫ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফেসবুকে অলবিদা লিখে রাজনীতি ছাড়লেন বাবুল সুপ্রিয়

প্রকাশনার সময়: ৩১ জুলাই ২০২১, ১৮:১৭ | আপডেট: ০৩ আগস্ট ২০২১, ২২:৩৬

ভারতের আসানসোলের বিজেপি সংসদ সদস্য বাবুল সুপ্রিয় তার ভেরিফাই ফেসবুকে এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে জানালেন রাজনীতি ছাড়ছেন। শনিবার (৩১ জুলাই) ফেসবুকে তিনি জানান, ‘চললাম, অলবিদা’।

দীর্ঘ পোস্টের সঙ্গে দিয়েছেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের বিখ্যাত গান ‘এক গোছা রজনীগন্ধা হাতে নিয়ে বললাম, চললাম...।’

লেখার শেষেই শুধু নয় পোস্টের গোড়াতেও বাবুল লিখেছেন, ‘চললাম..., অলবিদা...।’ এই সিদ্ধান্ত তিনি কি ভাবে নিয়েছেন তা জানিয়ে বাবুল লিখেছেন, ‘অন্য কোন দলেও যাচ্ছি না। তৃণমূল, কংগ্রেস, সিপিএম কোথাও নয়।’ একই সঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, তাকে কেউ ডাকেননি।

সম্প্রতি তিনি কিছু মন্তব্য করে বিতর্কে জড়িয়েছেন। মন্ত্রিত্ব হারানোর পরে দলীয় নেতৃত্বের সঙ্গে তার দূরত্বও তৈরি হয়েছিল। তা নিয়ে বাবুল লিখেছেন, 'বেশ কিছু সময়ে তো থাকলাম। কিছু মন রাখলাম, কিছু ভাঙলাম। কোথাও আপনাদের হয়তো আমার কাজে খুশি করলাম, কোথাও নিরাশ, হতাশ করলাম। মূল্যায়ন আপনারাই নয় করবেন।’

রাজনীতির বাইরে থাকলেও আগামী দিনে তিনি যে সমাজসেবা মূলক কাজে যুক্ত থাকতে চান সে কথাও উল্লেখ করেছেন। লিখেছেন, ‘সমাজসেবা করতে গেলে রাজনীতিতে না থেকেও করা যায়। নিজেকে একটু গুছিয়ে নিই আগে তারপর।’ একই সঙ্গে তিনি জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে কিছুদিন থেকেই রাজনীতি ছাড়ার কথা বলছিলেন তিনি। লিখেছেন, ‘বিগত কয়েকদিনে বার বার মাননীয় অমিত শাহ ও মাননীয় নাড্ডাজির কাছে রাজনীতি ছাড়ার সঙ্কল্প নিয়ে গিয়েছি এবং আমি ওঁদের কাছে চিরকৃতজ্ঞ যে প্রতিবারই ওঁরা আমাকে নানা ভাবে অনুপ্রাণিত করে ফিরিয়ে দিয়েছেন।’

কেন তিনি ফেসবুকে লিখে রাজনীতি ছাড়লেন তার ব্যাখ্যাও দিয়েছেন বাবুল। শাহ, নড্ডার কাছে তিনি যেতে চান না জানিয়ে লিখেছেন, ‘আমি তাদের এই ভালবাসা কোনও দিন ভুলবো না আর তাই আবার তাঁদের কাছে গিয়ে সেই একই কথা বলার ধৃষ্টতা আর আমি দেখাতে পারবো না। বিশেষ করে 'আমার আমি' কি করতে চাই তা যখন আমি অনেকদিন আগেই ঠিক করে ফেলেছি। কাজেই আবার একই কথার পুনরাবৃত্তি করতে গেলে কোথাও না কোথাও তারা ভাবতেই পারেন যে আমি কোনো 'পদের' জন্য 'দরাদরি' করছি| আর তা যখন একেবারেই সত্য নয়, তখন একেবারেই চাই না যে তাঁদের মনের ঈশান কোণেও সেই 'সন্দেহের' উদ্রেক হোক। এক মুহূর্তের জন্য হলেও।’

নয়া শতাব্দীর পাঠকদের জন্য “বাবুল সুপ্রিয়” ফেসবুক স্ট্যাটাস হুবহু তুলে ধরা হলো...

চললাম..

Alvida…

সবার সব কথা শুনলাম - বাবা, (মা) স্ত্রী, কন্যা, দুএকজন প্রিয় বন্ধুবান্ধব.. সবটুকু শুনে বুঝেই অনুভব করেই বলি,

চললাম...

'বেশ কিছু সময়ে তো থাকলাম'.. কিছু মন রাখলাম কিছু ভাঙলাম.. কোথাও আপনাদের হয়তো আমার কাজে খুশি করলাম, কোথাও নিরাশ হতাশ করলাম | মূল্যায়ন আপনারাই নয় করবেন

আমি 'আমার' মনে ওঠা সব প্রশ্নের জবাব দেওয়ার পরই বলছি.. আমার মতো করেই বলছি..

চললাম...

Social Work করতে গেলে রাজনীতিতে না থেকেও করা যায় - নিজেকে একটু গুছিয়ে নিই আগে তারপর...

হ্যাঁ, সাংসদ পদ থেকেও obviously ইস্তিফা দিচ্ছি ! [Resigning from my MP-ship too (obviously)]

বিগত কয়েকদিনে বার বার মাননীয় অমিত শাহ ও মাননীয় নাড্ডাজির কাছে রাজনীতি ছাড়ার সঙ্কল্প নিয়ে গেছি এবং আমি ওঁদের কাছে চিরকৃতজ্ঞ যে প্রতিবারই ওঁরা আমাকে নানাভাবে অনুপ্রাণিত করে ফিরিয়ে দিয়েছেন |

আমি তাঁদের এই ভালোবাসা কোনো দিন ভুলবো না আর তাই আবার তাঁদের কাছে গিয়ে সেই একই কথা বলার ধৃষ্টতা আর আমি দেখাতে পারবো না বিশেষ করে 'আমার আমি' কি করতে চায় তা যখন আমি অনেকদিন আগেই ঠিক করে ফেলেছি || কাজেই আবার একই কথার পুনরাবৃত্তি করতে গেলে কোথাও না কোথাও তাঁরা ভাবতেই পারেন যে আমি কোনো 'পদের' জন্য 'Bargain' করছি | আর তা যখন একেবারেই সত্য নয় তখন একেবারেই চাইনা যে তাঁদের মনের ঈশান কোণেও সেই 'সন্দেহের' উদ্রেক হোক - এক মূহুর্তের জন্য হলেও |

প্রার্থনা করি ওঁরা আমায় ভুল না বুঝে, ক্ষমা করবেন |

আমি আর বিশেষ কিছু বলবো না - এখন 'আপনারা বলবেন আমি শুনব' - দিনেরবেলায়, 'সন্ধ্যাবেলায়'

কিন্তু একটা প্রশ্নের জবাব আমাকে দিয়ে যেতেই হবে because it’s pertinent ! প্রশ্ন উঠবেই কেনই বা রাজনীতি ছাড়তে গেছিলাম? মন্ত্রিত্ব চলে যাওয়ার সাথে তার কি কোনো সম্পর্ক আছে? হ্যাঁ আছে - কিছুটা তো নিশ্চয় আছে ! তঞ্চকতা করতে চাইনা তাই সে প্রশ্নের উত্তর দিয়ে গেলেই তা সঠিক হবে-আমাকেও তা শান্তি দেবে |

2014 আর 2019 -এর মধ্যে অনেক ফারাক |

তখন শুধু BJP-র টিকিটে আমি একাই ছিল (With due respect to Ahluwaliaji - GJM was BJP’s ally in the Darjeeling seat) কিন্তু আজ বাংলায় বিজেপিই প্রধান বিরোধী দল | আজ পার্টিতে অনেক নতুন Bright তরুণ তুর্কী নেতা যেমন আছে তেমনি অনেক প্রবীণ বিদগ্ধ নেতাও আছেন | এঁদের নেতৃত্বে দল এখান থেকে অনেক দূর যাবে এটা বলাই বাহুল্য | বলতে দ্বিধা নেই যে আজ পার্টিতে কোনও একজন ব্যক্তিবিশেষের থাকা না থাকাটা যে কোন বড় ব্যাপার নয় তাও স্পষ্ট হয়েছে এবং এটা মেনে নেওয়াটাই যে সঠীক সিদ্ধান্ত হবে এটাই আমার দৃঢ়, সুদৃঢ় বিশ্বাস !

আরেকটা কথা.. ভোটের আগে থেকেই কিছু কিছু ব্যাপারে রাজ্য নেতৃত্বের সাথে মতান্তর হচ্ছিল - তা হতেই পারে কিন্তু তার মধ্যে কিছু বিষয় জনসমক্ষে চলে আসছিলো | তার জন্য কোথাও আমি দায়ী (একটি ফেসবুক পোস্ট করেছিলাম যা পার্টির শৃংখলাভঙ্গের পর্যায়েই পড়ে) আবার কোথাও অন্য নেতারাও ভীষণভাবে দায়ী, যদিও কে কতটা দায়ী সে প্রসঙ্গে আমি আজ আর যেতে চাইনা - কিন্তু Senior নেতাদের মতানৈক্য ও কলহে পার্টির ক্ষতি তো হচ্ছিলই, 'গ্রাউন্ড জিরো'-তেও পার্টির কর্মীদের মনোবলকে যে তা কোনোভাবেই সাহায্য করছিলো না তা বুঝতে 'রকেট বিজ্ঞান'-এর জ্ঞানের দরকার হয়না | এই মুহূর্তে তো তা একেবারেই অনভিপ্রেত তাই আসানসোলের মানুষকে অসীম কৃতজ্ঞতা ও ভালোবাসা জানিয়ে আমিই সরে যাচ্ছি |

কোথাও চলে গিয়েছিলাম এটা আমি মানি না - আমি 'আমার' সঙ্গেই ছিলাম - তাই কোথাও ফিরে যাচ্ছি আজ একথাও বলবো না |

বহু নতুন মন্ত্রী এখনো সরকারি বাড়ী পাননি তাই আমার বাড়িটি আমি এক মাসের মধ্যে (যত তাড়াতাড়ি সম্ভব - হয়তো তার আগেই) ছেড়ে দেবো |

হ্যাঁ, সাংসদ পদ থেকেও obviously ইস্তিফা দিচ্ছি !

আকাশে, একটি উড়ানে স্বামী রামদেবজীর সঙ্গে একটা ছোট কথোকপথন হয়েছিল | একদমই ভালো লাগেনি যখন বুঝেছিলাম যে বাংলাকে বিজেপি খুব seriously নিচ্ছে, শক্তির সাথে লড়বেও কিন্তু বোধহয় কোনো আসন আশা করছেনা | মনে হয়েছিল, যে বাঙালি শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী, অটল বিহারী বাজপেয়ীকে এত শ্রদ্ধা করে, ভালোবাসে, সেই বাঙালি বিজেপিকে একটাও আসনে জেতাবে না এটা কি করে হতে পারে !!! বিশেষ করে সারা ভারত যখন ভোটের আগেই ঠিক করে ফেলেছিলো যে তাঁদের যোগ্য উত্তরসূরি, মনোনীয় শ্রী নরেন্দ্র মোদিই ভারতের আগামী প্রধানমন্ত্রী হবেন, তখন বাংলা কেন অন্যরকম ভাববে | চ্যালেঞ্জটা একজন বাঙালি হিসেবে তখনই নেওয়া উচিত বলে মনে হয়েছিল তাই সবার কথা শুনেছি কিন্তু নিজের যা মনে হয়েছিল তাই করেছি - অনিশ্চয়তাকে ভয় না পেয়ে নিজে যা ঠিক মনে করেছি, 'মন-প্রাণ' দিয়ে করেছি |

1992 - তে Standard Chartered Bank-এর চাকরী ছেড়ে মুম্বাইতে পালানোর সময়েও তাই করেছিলাম, আজ তাই করলাম !!!

চললাম..

হ্যাঁ, কিছু কথা বাকি রয়ে গেলো..

হয়তো কখনো বলবো..

আজ নাই বা বললাম..

চললাম..

চললাম..

Alvida…

সবার সব কথা শুনলাম - বাবা, (মা) স্ত্রী, কন্যা, দুএকজন প্রিয় বন্ধুবান্ধব.. সবটুকু শুনে বুঝেই অনুভব করেই...

Posted by Babul Supriyo on Saturday, July 31, 2021
নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ