ঢাকা, সোমবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১, ১৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

এক গ্রামেই বাস করেন ৬০ দেশের মানুষ

প্রকাশনার সময়: ১০ জুন ২০২২, ০৩:২৬

দক্ষিণ ভারতের পন্ডিচেরিতে এক গ্রামে একসঙ্গে বাস করছেন ৬০টি দেশের মানুষ। মাত্র ২০ বর্গকিলোমিটার অনুর্বর বর্জ্যভূমিতে প্রায় ৩ হাজারের বেশি মানুষ বসবাস করে। এই গ্রামে কোনো ধর্ম, গোত্র, রাজনীতি, দেশ ও জাতীয়তা নেই। এমনকি এই গ্রামের মানুষের মধ্যে বিলাসিতার জন্য অর্থ উপার্জনের প্রতিযোগিতাও নেই। বিষয়টি চমকপ্রদ হলেও অনেকেই হয়তো জানেন না গ্রামটি সম্পর্কে।

ভারতের পন্ডিচেরি থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার উত্তরে ও উপকূল থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে প্রায় ২০ বর্গকিলোমিটার অনুর্বর বর্জ্যভূমিতে গড়ে তোলা হয় গ্রামটি।

বৈশ্বিক গ্রাম এমনকি এক্সপেরিমেন্টাল সিটি হিসেবেও পরিচিত গ্রামটি। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানুষকে নিয়েই গড়ে উঠেছে ‘অরোভিল’ গ্রাম।

শান্তি ও সুরক্ষার প্রতীক হয়ে উঠেছে গ্রামটি। এই গ্রামের একমাত্র আদর্শ হিউম্যানিটি বা মানবতা! গ্রামটির সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, সেখানে ঘটে না কোনো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড।

তামিলনাড়ু রাজ্যের ভিলুপুরম জেলাধীন অরোভিল গ্রাম এখন পর্যটকদের কাছে সেরা এক গন্তব্য। সেখানকার প্রকৃতিক সৌন্দর্যও মুগ্ধ করে সবাইকে।

জানা যায়, ১৯৬৮ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি এই গ্রাম প্রতিষ্ঠা পায়। ১২৪ দেশের মানুষেরা নিজ নিজ দেশের এক মুঠো মাটি একটি মার্বেলের কলসে রেখে প্রতিষ্ঠা করেন গ্রাম। ৪টি মূলনীতিকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে অরোভিল গ্রাম।

অরোভিল গ্রামের প্রতিষ্ঠাতা মিরা আলফাসা। তিনি একজন ফরাসি নারী। তিনি জানান, অরোভিল একটি সর্বজনীন শহর। যেখানে সব দেশের নারী-পুরুষ শান্তিতে ও প্রগতিশীল সম্প্রীতি সহকারে বসবাস করতে পারেন।

এই গ্রাম সব ধর্ম, জাতিয়তা ও রাজনীতির উর্ধ্বে। অরোভিলের উদ্দেশ্য হলো মানুষের ঐক্য উপলব্ধি করা। অরোভিল গড়ে তোলার স্বপ্ন দীর্ঘদিন ধরে দেখতেন মিরা। এজন্য বেশ পরিশ্রমও করেছেন তিনি।

১৯৬৫ সালে মিরা এই গ্রামের স্কেচ তৈরি করেন। ঠিক সেভাবেই গ্রামটি তৈরি হয়েছে। উপর থেকে দেখলেই এই গ্রামের নকশা বেশ ভালোভাবে টের পাওয়া যায়। অরোভিলে বাস করা মানুষেরা কারও মুখাপেক্ষী নন। সবাই স্বাধীনভাবে বাস করতে পারেন গ্রামটিতে।

সেখানকার মানুষেরা নিজ দক্ষতা অনুসারে কাজ করতে পারেন। অর্থাৎ যিনি শিক্ষক তিনি শিক্ষাদান করেন আর যিনি ডাক্তার তিনি চিকিৎসাসেবা প্রদান করেন। এই গ্রামে ডাক্তারের বেতন আর সুইপারের বেতন একই। সবাই স্ব-রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে গ্রামটি পরিচর্যা করেন।

একসঙ্গে ৫০ হাজার মানুষ বসবাস করতে পারেন এই গ্রামে। প্রথম ২০ বছরে ২০ দেশের মাত্র ৪০০ জন ব্যক্তি গ্রামটিতে বসবাস শুরু করেন। পরবর্তী ২০ বছরে, এই সংখ্যা ৪০টি দেশের ২০০০ জনে উন্নীত হয়েছে।

২০০৮ সালের জানুয়ারি মাস পর্যন্ত ভারত, ফ্রান্স ও জার্মানির দুই-তৃতীয়াংশসহ ৫৪ দেশের প্রায় ২৮১৪ জনের বসবাস ছিল সেখানে। বর্তমানে প্রায় ৬০ দেশের ৩০০০ এরও বেশি মানুষ বাস করছেন এই বৈশ্বিক গ্রামে।

শহরটি ভারত সরকার, ইউনেস্কো ও বিশ্বের শুভানুধ্যায়ীদের সমর্থনে তৈরি হয়। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এটি আরও বেশি স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে উঠছে।

অরোভিলে জমি, আবাসন বা ব্যবসার কোনো ব্যক্তিগত মালিকানা নেই। প্রত্যেককে একটি মৌলিক জীবনযাত্রার ‘রক্ষণাবেক্ষণ’ দেওয়া হয়। তারা সেকানকার দোকানে গিয়ে নিজেদের প্রয়োজনীয় জিনিস সংগ্রহ করেন।

দোকানদারকে তাদের অ্যাকাউন্ট নম্বর দিলে ওই পণ্যের অর্থ কেন্দ্রীয় তহবিল থেকে কেটে নেওয়া হয়। এভাবেই চলছে অরোভিলবাসীদের জীবনযাত্রা।

নয়া শতাব্দী/জিএস

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ