বৈশ্বিক মহামারীর কারণে দীর্ঘ দুই বছর বন্ধ ছিল বর্ষবরণ আয়োজন। দীর্ঘ বিরতির পর মালদ্বীপ প্রবাসীরা এবার যেন নতুন করে জেগে উঠেছে। পরিবার-পরিজন ও শিশু-কিশোরদের পদচারণায় বাংলাদেশ দূতাবাসের মিলনায়তন পরিণত হয়েছিল একখণ্ড বাংলাদেশে। প্রভাতের উদীয়মান সূর্যকে স্বাগত জানানোর মধ্য দিয়ে মালদ্বীপ প্রবাসীদের শুরু হয় বর্ষবরণ উৎসব। এ সময় নতুন সূর্যকে প্রত্যক্ষ করতে সামনে নীল-আর সবুজের অন্তরঙ্গ মিশেলে চলা জল আর বালি পাথরের এই সমুদ্র সৈকতকে ভীড় করেন প্রবাসী বাংলাদেশীরা।
বর্ষবরণকে স্বাগত জানাতে এবং বাংলা সংস্কৃতিকে তুলে ধরতে ঐতিহ্যবাহী সাজসজ্জা, আলপনা, রংবেরঙের বেলুন, ফেস্টুন, পোস্টার ও বিভিন্ন ফুল দিয়ে সুসজ্জিত করা হয় বাংলাদেশ দূতাবাসের মিলনায়তন। প্রবাসী বাংলাদেশিরা দেশীয় নানা রঙের বর্ণিল পোশাকে বৈশাখী উদযাপনে হাজারো কর্মব্যস্তা উপেক্ষা করে সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবার (২৭, মে) সন্ধ্যা থেকে আসতে শুরু করেন বাংলাদেশ দূতাবাসে। এতেই পরিণত হয় প্রবাসে এক টুকরো বাংলাদেশ। শ্রমজীবী প্রবাসীদের নিয়ে বাংগালীর ঐতিহ্য ঈদ পুনর্মিলন ও বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে আগত প্রবাসীদের সাথে স্বাগত ও নববর্ষের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন মালদ্বীপে নিযুক্ত বাংলাদেশ হাইকমিশনার রিয়ার এডমিরাল এস এম আবুল কালাম আজাদ ও দুতালয় প্রধান জনাব মোঃ সোহেল পারভেজ।
বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনায় আনন্দঘন পরিবেশে উদযাপিত হয় বর্ষবরণ ১৪২৯। বাংলাদেশ দূতাবাসের উদ্যোগে কর্মরত শ্রমজীবী প্রবাসীদের নিয়ে ঈদ পুনর্মিলনী ও বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মান্যবর হাইকমিশনার জনাব এস এম আবুল কালাম আজাদ, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মিশনের প্রথম সচিব মোঃ সোহেল পারভেজ, মিশনের তৃতীয় সচিব মোঃ মিজানুর রহমান ভুঞা সহ দূতাবাসের সকল কর্মকর্তা কর্মচারী বৃন্দ।
বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে প্রবাসীদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী গ্লোবাল রিচস এর চেয়ারম্যান সিআইপি আলহাজ্ব সোহেল রান, ডঃ খঃ লিয়াকত আলী, হেড অফ কার্ডস অ্যান্ড ডিজিটাল ব্যাংকিং, মালদ্বীপ ইসলামিক ব্যাংক মোঃ আরেফুর রহমান চৌধুরী, ভিউ কনস্ট্রাকশন প্রাইভেট লিমিটেড এর চেয়ারম্যান দুলাল হোসেন, ঢাকা ট্রেডার্স এর চেয়ারম্যান বাবুল হোসেন, ফোর এল ইন্টারন্যাশনাল এর চেয়ারম্যান হাদিউল ইসলাম, ফুড এন্ড ফুড এর চেয়ারম্যান নুরে আলম রিন্টু, এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন এনবিএল মানি ট্রান্সফার প্রাইভেট লিমিটেড এর কর্মকর্তা কর্মচারী, ইউএস বাংলা এয়ারলাইনসের কর্মকর্তা কর্মচারী, বিশিষ্ট ব্যবসায়ীক, প্রবাসী ডক্টর'স, শিক্ষক ও বিভিন্ন রাজনৈতিক নেত্রীবৃন্দ, বিভিন্ন পেশাজীবি সহ প্রিন্ট মিডিয়ার স্থানীয় প্রতিনিধিবৃন্দ উক্ত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্যবর হাইকমিশনার এস এম আবুল কালাম আজাদ বলেন, বাংলা নববর্ষ উদযাপন এখন কেবল বাংলাদেশেই সীমাবদ্ধ নয়। বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে তুলে ধরার মাধ্যমে এ উদযাপন এখন পৃথিবীর সবার। ধর্ম-বর্ণ ভেদাভেদহীন এই উদযাপন আমাদের আশাবাদী করে তোলে। তিনি প্রবাসী বাংলাদেশিদের নিজ নিজ অবস্থান থেকে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে বিদেশিদের মধ্যে তুলে ধরার পাশাপাশি তাঁদের অর্জিত জ্ঞান ও অভিজ্ঞতাকে মাতৃভূমির উন্নয়নে কাজে লাগানোর আহ্বান জানান। তিনি পয়লা বৈশাখ পালনের মাধ্যমে ধর্ম-বর্ণ ভেদাভেদহীন আদর্শ তুলে ধরার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। তিনি অনথিভুক্ত প্রবাসী বাংলাদেশী কর্মীদের দ্রুত বৈধ করন হওয়ার জন্য ও অনুরোধ জানা।
বর্ষবরণ উদযাপনের সাংস্কৃতিক পর্বে ছোট ছোট বাচ্চাদের বিভিন্ন পরিবেশনা ছিল আকর্ষণীয়। বিদেশে জন্ম ও বেড়া ওঠা সত্ত্বেও এসব শিশুদের বাংলাদেশের সংস্কৃতির সঙ্গে তাদের যোগসূত্র সবাইকে মুগ্ধ করে। এবং সাথে সাথে বাংলা নববর্ষকে আরো রঙিন ভাবে রাঙ্গিয়েছে প্রবাসীদের গান পরিবেশনা, কবিতা আবৃত্তি, মিউজিক এবং সাথে আকর্ষণীয় লটারি খেলা, নারীদের বালিশ পাছ খেলা, পাশাপাশি শিশুদের মিউজিক্যাল চেয়ার খেলায়। এবংকি খেলায় বিজয়ীদেরকে পুরস্কৃত করা হয় দূতাবাসের পক্ষ থেকে।
বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের অতিথিদের জন্য দূতাবাসের নৈশভোজের আয়োজনে অন্য খাবারের পাশাপাশি বিভিন্ন রকমের ভর্তা ও মালদ্বীপিয়ান মাছ, মিষ্টি, কেক ইত্যাদিও অতিথিদের পরিবেশন করা হয়। বাংগালীয়ানা নৈশভোজের সমাহারে অতিথিদের আগ্রহ যেন বাংলাদেশের গ্রামবাংলার মেলার আবহই তৈরি করেছিল বাংলাদেশ দূতাবাস প্রাঙ্গণে।
সবশেষে, অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত সবাই ঈদ পূর্নমিলন ও বর্ষবরণ উদযাপন এর আয়োজকদের প্রতি কৃতজ্ঞ জানান। তাদের পরিশ্রম এবং এমন সুন্দর উদ্যোগ সত্যি প্রমাণ করে দেয় হৃদয়ে গভীর দেশপ্রেম। আমাদের পক্ষ থেকেও সকল আয়োজকদের প্রতি ভালোবাসা এবং শুভকামনা। এই বৈশাখের মাস হইতে জীবনের প্রতিটি দিন যেন তাদের সুন্দর এবং সুখের হয়।
নয়া শতাব্দী/এমএইচআর
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ