ঢাকা, সোমবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১, ১৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভারতে মাদ্রাসা থাকার কোনো প্রয়োজন নেই : আসামের মুখ্যমন্ত্রী

প্রকাশনার সময়: ২৪ মে ২০২২, ০৯:৪৩

আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা দাবি করেছেন, এমন একটা সময় ছিল, যখন সব মুসলমানই হিন্দু ছিল। মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষ আসলে হিন্দু এবং ভারতে মাদ্রাসা থাকার কোনো প্রয়োজন নেই। তিনি দাবি করেন- ভারতের বাইরে থেকে আসা মুসলমানরা আসামে আছেন।

রবিবার দিল্লিতে ভারতের উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (আরএসএস) মুখপাত্রের এক অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বিশ্বশর্মা এসব কথা বলেন।

হিমন্ত বিশ্বশর্মা বলেন, ‘মাদ্রাসা শব্দটিই সরিয়ে দেওয়া উচিত। কোরআন বাড়িতে পড়ানো হোক। স্কুলে ছাত্রকে বিজ্ঞান ও অঙ্ক শেখানো হোক। আমরা ক্ষমতায় এসেই এই সিদ্ধান্ত নিই যে সরকারের টাকায় একটি নির্দিষ্ট ধর্মের ধর্মীয় শিক্ষা দেওয়া যাবে না।’

পবিত্র কোরআন মুখস্থ করার কারণে ছাত্রের মনে রাখার ক্ষমতা বাড়ে- এমন একটি বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্বশর্মা বলেন, ‘মাদ্রাসায় যে ছাত্র যাচ্ছে, সে অনেক সময় ভালো ছাত্রে পরিণত হচ্ছে। এর কারণ, আদতে সে হিন্দু সংস্কৃতির সঙ্গে যুক্ত। এমন একটা সময় ছিল, যখন সব মুসলমানই হিন্দু ছিল।’

তিনি বলেন, একটা নির্দিষ্ট আবহাওয়া ও শিক্ষাব্যবস্থা তৈরি না হওয়া পর্যন্ত মুসলমানদের এখনই ধর্ম পরিবর্তন করে হিন্দুত্বে আনা সম্ভব নয়।

সেই শিক্ষাব্যবস্থা বা আবহাওয়া কী—সে বিষয়ে তিনি বলেন, একজন মানুষকে যে মন্দিরে যেতে হবে বা মূর্তিপূজা করতে হবে, এমনটাও নয়। একজন মানুষকে ভারতের স্বার্থ মাথায় রাখলেই চলবে।

আরএসএসের দুটি মুখপাত্র ‘পাঞ্চজন্য’ ও ‘অর্গানাইজার’ আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন বিশ্বশর্মা। অনুষ্ঠানের পর ঘরোয়া আলোচনায় বিশ্বশর্মা তাঁর বক্তব্যের পক্ষে যুক্তি দেখান।

তিনি বলেন, ‘শিক্ষাব্যবস্থা এমন হওয়া উচিত, যাতে যেকোনো ছাত্রছাত্রী ভবিষ্যতে তার নিজের বিষয় ও জীবন বেছে নিতে পারে।’

আনুষ্ঠানিক শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা উপেক্ষা করা যায় না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

বিশ্বশর্মা বলেন, ‘আসামের ৩৬ শতাংশ মুসলমানকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। তাঁরা হলেন- মূল নিবাসী মুসলমান, যাঁরা আসামের সংস্কৃতি ও ভাষাকে নিজের করে নিয়েছেন। এ ছাড়া রয়েছে ধর্ম পরিবর্তনের মাধ্যমে তৈরি হওয়া দেশীয় মুসলমান সম্প্রদায় ও ভারতের বাইরে থেকে আসা মুসলমান। এদের সংস্কৃতি আলাদা। এরা নিজেদের মিয়া বলে।’ এদের ‘মিয়া মুসলমান’ বলে ডাকা উচিত বলে মত দেন তিনি।

আসামে সাধারণভাবে বাঙালি মুসলমানদেরই মিয়া বলে চিহ্নিত করা হয়। এ নিয়ে রাজ্যে যথেষ্ট বিতর্ক রয়েছে। যাঁদের মিয়া বলে চিহ্নিত করা হয়, তাঁদের ‘সাম্প্রদায়িক’ বলেও অতীতে মন্তব্য করেছেন বিশ্বশর্মা।

হিমন্ত বিশ্বশর্মার এসব বক্তব্য নিয়ে পশ্চিমবঙ্গে আরএসএসের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এ ধরনের বক্তব্যের সঙ্গে আরএসএসের কোনো সম্পর্ক নেই, এগুলো বিশ্বশর্মার ব্যক্তিগত মন্তব্য।’

উল্লেখ্য, ২০২০ সালে আসামের সমস্ত সরকারি মাদরাসা তুলে দিয়ে সেগুলোকে স্কুলে পরিণত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ওই রাজ্যের সরকার। আসাম সরকারের দাবি, এতে ‘ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষাব্যবস্থা’ গড়ে তোলার পথ সহজ হবে। যদিও এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ২০২১ সালে গৌহাটি হাইকোর্টে ১৩টি আবেদন জমা পড়ে। তবে চলতি বছরের জানুয়ারিতে আসাম সরকারের সিদ্ধান্ত বহাল রাখে হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ। সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা

নয়া শতাব্দী/এসএম

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ