ঢাকা, সোমবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১, ১৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬
ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ

‘নরকে পরিণত ডনবাস’

* লুহানস্কে রাশিয়ার হামলায় নিহত ১৩ * ইউক্রেনকে আরো ৫৩ কোটি ডলার দিল যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্য * এখন পর্যন্ত ইউক্রেনে ২৩২ শিশু নিহত
প্রকাশনার সময়: ২১ মে ২০২২, ১৫:৫৩

রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর আগ্রাসনে পূর্ব ইউক্রেনের ডনবাস অঞ্চল পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় এই ভূখণ্ডটি মূলত একটি শিল্প এলাকা এবং বর্তমানে এই অঞ্চলকে ঘিরেই সামরিক আক্রমণ পরিচালনা করে আসছে মস্কো। বিদ্যমান এই পরিস্থিতিতে পূর্ব ইউরোপের এই দেশটির জন্য লাখ লাখ কোটি মার্কিন ডলার সহায়তার অঙ্গীকার করেছে বিশ্বের ধনী দেশগুলো। গতকাল শুক্রবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

বার্তা সংস্থাটি বলছে, রাশিয়া ইউক্রেনে প্রায় তিনমাস ধরে সামরিক অভিযান চালালেও রুশ সেনারা প্রাথমিকভাবে প্রায় পুরো ইউক্রেনীয় ভূখণ্ডে হামলা পরিচালনা করে। তবে পরে সেই অবস্থান থেকে সরে এসে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী মূল মনোযোগ দেয় ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় ডনবাস এলাকায়। মূলত তখন থেকে এই অঞ্চলে ব্যাপক গোলাবর্ষণ করে যাচ্ছে রুশ সেনারা। আরো স্পষ্ট করে বললে, রুশভাষী মানুষকে রক্ষা এবং রাশিয়াপন্থি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের রক্ষার কথা বলে দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক অঞ্চল নিয়ে গঠিত ডনবাস ভূখণ্ড দখলের চেষ্টা করছে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী। আর এতেই রুশ সেনাদের ব্যাপক গোলাবর্ষণে বিধ্বস্ত হচ্ছে ইউক্রেনের এই শিল্প এলাকা। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে দেয়া ভিডিওবার্তায় ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, (ডনবাসে) দখলদাররা আরো শক্তি প্রয়োগের চেষ্টা করছে। এই অঞ্চলটি নরকে পরিণত হয়েছে এবং এটি মোটেই বাড়িয়ে বলা নয়। তিনি আরো বলেন, ওডেসা অঞ্চলসহ মধ্য ইউক্রেনের শহরগুলোতে ক্রমাগত রুশ হামলা চলছে। আর ডনবাস সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে গেছে। জেলেনস্কির ভাষায়, এটি যতটা সম্ভব ইউক্রেনীয়কে হত্যা করার, যতটা সম্ভব বাড়িঘর, সামাজিক সুবিধা এবং উদ্যোগগুলোকে ধ্বংস করার জন্য ইচ্ছাকৃত এবং অপরাধমূলক প্রচেষ্টা।

ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় লুহানস্ক অঞ্চলে রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর হামলায় ১৩ জন নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে সেভেরোদোনেতস্কে ১২ জন এবং গিরস্কে বসতিতে একজন প্রাণ হারিয়েছেন। এছাড়া লুহানস্কের আঞ্চলিক কেন্দ্র এবং লিসিচানস্কের দিকে আরো অগ্রসর হয়েছে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী। লুহানস্কের গভর্নরের বরাত দিয়ে শুক্রবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা। লুহানস্কের গভর্নর সেরহি হাইদাই টেলিগ্রামে দেয়া এক বার্তায় বলেছেন, বৃহস্পতিবার রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর হামলায় সেভেরোদোনেতস্ক ও গিরস্কে বসতিতে এই ১৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এছাড়া রুশ সেনাদের হামলায় লুহানস্ক অঞ্চলে ৬০টিরও বেশি বাড়িঘর ধ্বংস হয়ে গেছে। ধ্বংস হয়ে যাওয়া এসব বাড়িঘর জোলোট, ভ্রুবিভকা এবং রুবিঝন এলাকায় অবস্থিত। হাইদাই আরো বলেন, তোশকিভকা এলাকায় এখনো সংঘর্ষ চলছে এবং সেসব এলাকার ক্ষয়ক্ষতি পরিমাপ করা অসম্ভব। এদিকে ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনীর সাধারণ কর্মীরা জানিয়েছেন, সেভেরোদোনেতস্কে রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর সর্বশেষ হামলা ব্যর্থ হয়েছে এবং সেখানে রাশিয়া সেনা হারিয়েছে। এরপর সেখান থেকে রুশ সেনারা পিছু হটে বলেও দাবি করেছে তারা।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, ইউক্রেনের প্রসিকিউটর জেনারেলের দফতর জানিয়েছে, রুশ আগ্রাসন শুরুর পর থেকে দেশটিতে এখন পর্যন্ত ২৩২ জন শিশু নিহত হয়েছে। এছাড়া আহত হয়েছেন আরো ৪২৭ জন শিশু। রয়টার্স অবশ্য শিশুদের হতাহতের এই তথ্য স্বাধীনভাবে যাচাই করতে পারেনি এবং চলমান এই সামরিক অভিযানে বেসামরিকদের লক্ষ্যবস্তু করার বিষয়টি অস্বীকার করে আসছে রাশিয়া।

যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনে মানবিক সহায়তা হিসেবে আরও ৫৩ কোটি ডলার পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য। এই আর্থিক সহায়তার মধ্যে ৫০ কোটি ডলার দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও বাকি ৩ কোটি ডলার মঞ্জুর করেছে যুক্তরাজ্য। বিশ্বব্যাংকের একটি তহবিল থেকে এই অর্থ দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে ইউক্রেনে এই সহায়তা পৌঁছেছে এবং চলতি বছরের বাজেটে এই অর্থ অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেছে বলে শুক্রবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে ইউক্রেনের অর্থ মন্ত্রণালয়। বিবৃতিতে আরো বলা হয়, যুদ্ধের কারণে ইউক্রেনের যেসব মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন, তাদের সহায়তা ও জরুরি সামাজিক, মানবিক ও স্বাস্থ্য খাতে এই অর্থ ব্যয় করা হবে।

পশ্চিমা দেশগুলোর সামরিক জোট ন্যাটোকে ঘিরে দ্বন্দ্বের জেরে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর ঘোষণা দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তার দু’দিন আগে দেশটির পূর্বাঞ্চলীয় দুই ভূখণ্ড লুহানস্ক ও দোনেৎস্ককে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেন তিনি। শুক্রবার এই যুদ্ধ গড়িয়েছে ৮৬তম দিনে। ইউক্রেনের সব অঞ্চলেই তীব্র সংঘাত চলছে রুশ ও ইউক্রেনীয় সেনাদের মধ্যে। ইতোমধ্যে ইউক্রেনের দুই উপকূলীয় শহর খেরসন ও মারিউপোলসহ দেশটির কয়েকটি এলকার নিয়ন্ত্রণ চলে গেছে রুশ সেনাদের হাতে। তিন মাস ধরে চলা এই যুদ্ধের তেজ না কমার কোনো লক্ষণ না থাকায় চরম বিপর্যয়ের মধ্যে পড়েছেন ইউক্রেনের সাধারণ বেসামরিক জনগণ। দেশটির সরকারি বিভিন্ন পরিষেবা ব্যবস্থা প্রায় ধ্বংস হয়ে গেছে এবং যুদ্ধ থেকে বাঁচতে ইউক্রেনের লাখ লাখ মানুষ নিজেদের আবাস ছেড়ে দেশের অভ্যন্তরে অপেক্ষাকৃত নিরাপদ স্থান কিংবা প্রতিবেশী দেশ পোল্যান্ড-রোমানিয়ায় আশ্রয় নিয়েছেন। এদিকে, পৃথক এক প্রতিবেদনে রয়টার্স জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্ট কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটে শুক্রবার ইউক্রেনে সহায়তা হিসেবে ৪ হাজার কোটি কোটি ডলার প্রদানবিষয়ক একটি বিল পাস হয়েছে। এছাড়া দেশটিতে আর্থিক সহায়তা হিসেবে ১ হাজার ৮০০ কোটি ডলার পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিল্পোন্নত ৭ দেশের জোট জি-৭। ইউক্রেন বলছে, মিত্রদের এই অর্থ সহায়তা রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউক্রেনের জয়কে ত্বরান্বিত করবে এবং এটি ‘সরবরাহকৃত অস্ত্রের’ মতোই গুরুত্বপূর্ণ।

গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ভোরে ইউক্রেনে হামলা শুরু করে রাশিয়ান সৈন্যরা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের প্রথম দেশ হিসেবে রাশিয়ার সশস্ত্র বাহিনী স্থল, আকাশ ও সমুদ্রপথে ইউক্রেনে এই হামলা শুরু করে। আর সপ্তাহখানেক বাদেই ইউক্রেনে চলমান রুশ অভিযান তিন মাস পার করবে। অবশ্য ইউক্রেনকে ফ্যাসিস্টদের হাত থেকে মুক্ত করার জন্য মস্কো তার এই আক্রমণকে একটি ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ বলে দাবি করে আসছে। আর এর বিপরীতে কিয়েভ ও তার পশ্চিমা মিত্রদের দাবি, এটি আসলে ভিত্তিহীন যুদ্ধের অজুহাত।

নয়া শতাব্দী/এসএম

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ