ইউক্রেনে যুদ্ধে যোগ দিতে সৈন্য নিয়োগ করছে রাশিয়া; এমন গুজবে পূর্ব আফ্রিকার দেশ ইথিওপিয়ায় হুলস্থুল পড়ে গেছে। রাশিয়ার হয়ে ইউক্রেন যুদ্ধে যোগ দিতে দেশটির বহু মানুষ রাজধানী আদ্দিস আবাবায় অবস্থিত রুশ দূতাবাসের সামনে ভিড় করছেন। গুজবে কান দিয়ে দূতাবাসের সামনে ভিড় করা এসব ইথিওপিয়ানের অধিকাংশই বয়সে যুবক। গতকাল বুধবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি। রাশিয়ার হয়ে ইউক্রেন যুদ্ধে যোগ দিতে ভিড় করলেও উৎসাহী ইথিওপিয়ানদের জন্য হতাশার খবরই সামনে এনেছে রুশ দূতাবাস।
দূতাবাসের মুখপাত্র মারিয়া চেরনুখিনা বলেছেন, ইথিওপিয়ায় কোনো নিয়োগ কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা হচ্ছে না। বিবিসিকে তিনি জানান, রাশিয়ার প্রতি সমর্থন প্রকাশ করার জন্য আমাদের দূতাবাসে প্রচুর মানুষ আসছেন। তাদের মধ্যে কেউ কেউ বলছেন যে, তারা যে কোনো উপায়ে রাশিয়াকে সাহায্য করতে ইচ্ছুক। কিন্তু আমরা রিক্রুটিং এজেন্সি নই। বিবিসি বলছে, রাশিয়ার হয়ে যুদ্ধে যোগ দিতে ইচ্ছুক ইথিওপিয়ানদের অনেকেই তাদের ব্যক্তিগত নথিপত্র নিয়ে দূতাবাসে হাজির হচ্ছেন। কেউ কেউ বলছেন, তারা রাশিয়ায় উচ্চ মজুরিতে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে বলে গুজব শুনেছেন। আদ্দিস আবাবায় অবস্থিত রুশ দূতাবাসের প্রবেশদ্বারে অপেক্ষমাণ এক যুবক বিবিসিকে বলেন, তিনি সৈনিক হিসেবে ভালো বেতন বা অন্য যে কোনো কাজে নিয়োগের জন্য চাকরি খুঁজছেন। তিনি বলেন, আমি রাশিয়াকেও পছন্দ করি।
ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলীয় বন্দরনগরী মারিউপোলে এখনো লড়াই চালিয়ে যাওয়া ইউক্রেনীয় যোদ্ধাদের আত্মসমর্পণের আহ্বান জানিয়ে নতুন করে আল্টিমেটাম দিয়েছে রাশিয়া। নতুন এই সময়সীমায় গতকাল বুধবারই যোদ্ধাদের আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়েছে। এদিকে রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর অভিযান মোকাবিলা এবং চলমান যুদ্ধে ইউক্রেনকে জয়লাভে সাহায্য করতে কিয়েভকে আরো অস্ত্র পাঠানোর অঙ্গীকার করেছে যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্য মিত্র দেশগুলো। বুধবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। সংবাদমাধ্যম বলছে, রাশিয়া মারিউপোল শহরের বেশিরভাগ অংশ দখলে নেয়ার দাবি করলেও ইউক্রেনীয় যোদ্ধাদের অবশিষ্ট একটি অংশ শহরটির আজভস্টাল ইস্পাত কারখানায় অবস্থান নিয়েছে। মূলত কারখানার ভেতরে রুশ বাহিনীর হাতে সম্পূর্ণরূপে অবরুদ্ধ অবস্থায় রয়েছে তারা। এই পরিস্থিতিতে দিন দু’য়েক আগে ইউক্রেনীয় যোদ্ধাদের ওই দলটিকে আত্মসমর্পণের আল্টিমেটাম দিয়েছিল মস্কো। এমনকি আত্মসমর্পণ করা যোদ্ধাদের জীবন রক্ষার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিল দেশটি। রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মেজর জেনারেল ইগোর কোনাশেঙ্কোভ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছিলেন, আটকে পড়া ইউক্রেনীয় যোদ্ধাদের জীবন বাঁচানোর একমাত্র সুযোগ হলো স্বেচ্ছায় অস্ত্র ফেলে দেয়া এবং আত্মসমর্পণ করা।
তবে এই হুঁশিয়ারির পরও কোনো ইউক্রেনীয় যোদ্ধা আত্মসমর্পণ করেনি। পরে বুধবার নতুন করে আল্টিমেটাম বেঁধে দেয় রাশিয়া। রয়টার্স বলছে, আগে দেয়া আল্টিমেটামে কোনো ইউক্রেনীয় যোদ্ধা আত্মসমর্পণ না করায় বুধবার এই একই সময়সীমা ফের নবায়ন করে রাশিয়া। তবে আত্মসমর্পণ না করার অঙ্গীকার করেছেন ইউক্রেনীয় কমান্ডাররা। রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সম্পূর্ণ মানবিক নীতির ওপর ভিত্তি করে ২০ এপ্রিল মস্কোর স্থানীয় সময় দুপুর ২টা থেকে সামরিক কর্মকাণ্ড বন্ধ করে অস্ত্র জমা দিতে জাতীয়তাবাদী ব্যাটালিয়ন ও বিদেশি ভাড়াটে যোদ্ধাদের প্রতি আবারো আহ্বান জানাচ্ছে রাশিয়ার সশস্ত্র বাহিনী। এদিকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির উপদেষ্টা মিখাইলো পোদোলক মঙ্গলবার রাতে জানিয়েছেন, রাশিয়া বাংকার-বাস্টার বোমা দিয়ে মারিউপোলের প্রধান অবশিষ্ট দুর্গ আজভস্টাল ইস্পাত কারখানায় হামলা করছে। রয়টার্স অবশ্য তার এই দাবি স্বাধীনভাবে যাচাই করতে পারেনি। টুইটারে দেয়া এক বার্তায় তিনি আরো বলেন, সমগ্র বিশ্ব অনলাইনে শিশুদের হত্যার ছবি দেখছে এবং নীরব থাকছে।
নয়া শতাব্দী/এম
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ