বিশ্বের সবচেয়ে নিপিড়ীত অঞ্চলের একটি ফিলিস্তিন। ইসরায়েলের নিত্যনতুন অত্যাচারে জর্জরিত ফিলিস্তিনিরা। বাড়ি থেকে উচ্ছেদ এবং কারণে-অকারণে গ্রেফতার নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। তারই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার আল আকসায় ফজরের নামাজে আসা মুসল্লিদের ওপর বিনা কারণে হামলা করে ইসরায়েলি বাহিনী। এদিন নিয়ম ভেঙে তারা আল আকসায় প্রবেশ করে। গ্রেফতার করে চার শতাধিক ফিলিস্তিনিকে।
বিভিন্ন ভিডিওতে দেখা গেছে, মসজিদের ভেতরে মুহুর্মুহু টিয়ার গ্যাস ও রাবার বুলেট ছোঁড়া হচ্ছে। মসজিদের ভেতর মনে হচ্ছে যেন যুদ্ধক্ষেত্র। মুসল্লিরা ছোটাছুটি করছেন। অনেকে শুয়ে পড়েন।
আল জাজিরার এক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, পবিত্র রমজান মাস এলে আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠে ইসরায়েল। চলতি বছরের পবিত্র রমজান মাসেও ইসরায়েল অধিকৃত ফিলিস্তিনের মাটিতে বড় ধরনের উত্তেজনা দেখা দিচ্ছে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, এর পরিপ্রক্ষিতে গাজা উপত্যকার বাসিন্দারা গত বছরের রমজানের মতোই আরেকটি যুদ্ধ লেগে যেতে পারে।
গত ২২ মার্চ থেকে ইসরায়েলের ভেতরে ক্ষুব্ধ ফিলিস্তিনিদের হামলা বা ‘সশস্ত্র অপারেশন’ বেড়ে গেছে। এসব ঘটনায় ১৪ জন নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে আছেন ইসরায়েলি তিন পুলিশ কর্মকর্তা। ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে ৩৬ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
বিধিনিষেধ থাকা সত্ত্বেও শুক্রবার আল-আকসা প্রাঙ্গণে প্রবেশ করেন ইসরায়েলি উগ্রবাদীরা। তাদের হামলায় অন্তত ১৫২ ফিলিস্তিনি আহত হন।
ইসরায়েলি পুলিশের দাবি, আল-আকসা মসজিদ প্রাঙ্গণে পাথর ছুড়ছিলেন একদল বিক্ষোভকারী। তাদের ছত্রভঙ্গ করতেই সেখানে প্রবেশ করে তারা। আটক করা হয় ৩০০ জনকে। তবে ফিলিস্তিনি সূত্র বলছে, ৪০০ জনের বেশি ফিলিস্তিনিকে আটক করা হয়েছে।প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা ফিলিস্তিনি বিক্ষোভকারীদের ওপর রাবার বুলেট ছুড়েছেন। বিক্ষোভকারীরাও ইসরায়েলি বাহিনীকে লক্ষ্য করে পাথর ছোড়েন।
Wallahi a deja vu!
— Abier (@abierkhatib) April 15, 2022
Inside AlAqsa mosque few minutes ago #AlAqsaUnderAttack #Israel pic.twitter.com/uGsjVczpAy
আহত ব্যক্তিদের বেশির ভাগকেই হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে জানিয়ে ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্ট বলেছে, আল-আকসার একজন নিরাপত্তাপ্রহরীর চোখে গুলি করা হয়েছে। ইসরায়েলি বাহিনী মসজিদ প্রাঙ্গণে অ্যাম্বুলেন্স ও চিকিৎসাকর্মীদের ঢুকতেও বাধা দিয়েছে। এতে আহত ব্যক্তিদের উদ্ধারে সমস্যা হয়।
ইসরায়েলি পুলিশের দাবি, ফজরের নামাজ শেষে ফিলিস্তিনিদের ‘সহিংস’ ভিড় ঠেকাতে তারা মসজিদ প্রাঙ্গণে ঢুকে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। তবে প্রত্যক্ষদর্শী এক ফিলিস্তিনি আলোকচিত্রী বলেন, ইসরায়েলি বাহিনী নির্মমভাবে অভিযান চালিয়ে মসজিদ প্রাঙ্গণ খালি করে দেয়। মসজিদের কর্মী, সাধারণ মানুষ, যুবক, এমনকি প্রবীণদের ওপর হামলা চালায় তারা। ছোড়ে রাবার বুলেট। করে মারধর। এতে অনেকে আহত হন। এমনকি চিকিৎসকদেরও ছাড়েনি পুলিশ।
আল আকসার দামেস্ক গেট থেকে আল জাজিরার সাংবাদিক নাজওয়ান আল-সামরি বলেন, ইসরাইলি পুলিশ বাহিনী অজুহাত ছাড়াই আল-আকসা মসজিদ প্রাঙ্গণে হামলা চালিয়েছে এবং কিবলি প্রার্থনা হলের কাছে মুসল্লিদের উপর হামলা করেছে।
সাধারণত রমজান মাসে আল আকসায় মুসল্লিদের প্রচন্ড ভিড় হয়। গত বছর রমজানে আল-আকসায় সপ্তাহব্যাপী বিক্ষোভ ও অভিযানের পর অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ১১ দিনের যুদ্ধ সংগঠিত হয়। সেই যুদ্ধে কমপক্ষে ২৩২ ফিলিস্তিনি এবং ১২ জন ইসরাইলি নিহত হয়।
নয়া শতাব্দী/এস
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ