পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের ওপর দেখা দেয়া দুর্যোগের মেঘ সরছেই না। পার্লামেন্ট ভেঙে দিয়ে অন্তর্বর্তী নির্বাচন আদেশ খারিজ করে দিয়েছে দেশটির সর্বোচ্চ আদালত। পার্লামেন্ট চালুর পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাবের বাতিল হওয়া ভোট পুনরায় আয়োজন করার নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।
শনিবারই অনাস্থা প্রস্তাবের ভোট অনুষ্ঠিত হবে। এরই মধ্যে বিজয়ের সম্ভাবনা দেখতে শুরু করেছে ইমরান বিরোধীরা।
এমন প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও হাল ছাড়ার সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছেন তারকা ক্রিকেটার থেকে রাজনীতিতে এসে প্রধানমন্ত্রী বনে যাওয়া ইমরান খান। আজ তিনি মন্ত্রিসভার বৈঠকে অংশ নেবেন এবং তার দল তেহরিক-ই-ইনসাফের একটি বৈঠকেও অংশ নেবেন।
পাকিস্তানের রাজনীতিতে সংকট ও তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার হুমকির মুখে থাকার মধ্যেই তিনি টুইটবার্তায় জানিয়েছেন, আজ তিনি জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন।
সে বার্তায় শেষ পর্যন্ত লড়ার ঘোষণা দিয়ে ইমরান খান বলেন, ‘জাতির উদ্দেশে আমার বার্তা পরিষ্কার, পাকিস্তানের জন্য আমি লড়াই করছি ও শেষ বল পর্যন্ত লড়ে যাব।’
ইমরান খান এমন সময় এ বার্তা দিলেন যখন পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি উমর আতা বান্ডিয়ালসহ পাঁচ সদস্যের আপিল বিভাগ দেশটির পার্লামেন্টের স্পিকার আসাদ কাসিরকে শনিবার সকাল ১০টায় পার্লামেন্টে অনাস্থা প্রস্তাবের ভোট আয়োজনের ব্যবস্থা করতে বলেছেন।
আদালত জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব সফল হলে বিধানসভা নতুন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করবে। এমন পরিস্থিতিতে বিশ্লেষকরা বলছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের ভাই শাহবাজ শরিফের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
গত ৮ মার্চ ইমরান বিরোধীরা অনাস্থা ভোটের আবেদন করলে ৩ এপ্রিল ভোটের দিন নির্ধারণ হয়। কিন্তু ৩ এপ্রিল ডেপুটি স্পিকার কাসিম সুরি এই প্রস্তাবকে ‘অসাংবিধানিক’ বলে খারিজ করে দেন। তিনি বলেন, এই প্রস্তাব বিদেশিদের চক্রান্তে আনা হয়েছে। তাই এর ওপর ভোটাভুটি হতে পারে না।
এরপর ইমরান খান সংসদ ভেঙে দিতে দেশের রাষ্ট্রপতিকে আহ্বান জানালে তিনি সেই অনুযায়ী কাজ করেন। জানানো হয়, ৯০ দিনের মধ্যে হবে পরবর্তী জাতীয় নির্বাচন। তবে সেদিনই বাধ সাধেন দেশের প্রধান বিচারপতি উমর আতা বান্ডিয়াল। তিনি বলেন, পার্লামেন্ট ভেঙে দেয়ার সিদ্ধান্তে তার অনুমোদন লাগবে।
পাঁচদিন পর বৃহস্পতিবার এক আদেশে সুপ্রিম কোর্ট অনাস্থা প্রস্তাব বাতিলের আদেশকেই বাতিল করে দেয়। সেই সঙ্গে সংসদ পুনর্বহাল করে শনিবার ১০ টায় অনাস্থা প্রস্তাবের ওপর ভোটের আয়োজন করতে স্পিকার আসাদ কাসিরকে নির্দেশ দেয়া হয়।
রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে ইমরান খান যা বলছেন
পাকিস্তানের রাজনৈতিক অস্থিরতার জন্য বিদেশি শক্তি, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী করে আসছেন ইমরান খান। তিনি দাবি করেছিলেন, তার বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাবে হাত রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের। একটি ‘হুমকি দেয়া চিঠি’ তার হাতে আসার দাবি করলেও কার পক্ষ থেকে চিঠিটি এসেছে তা এতদিন প্রকাশ করেননি ইমরান।
সাবেক আইন প্রণেতাদের সঙ্গে এক বৈঠকে তিনি বলেছিলেন, পাকিস্তানে হুমকি দেয়া চিঠি পাঠিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু।
তিনি জানান, ডোনাল্ড লু ও যুক্তরাষ্ট্রে পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত আসাদ মাজিদের মধ্যে একটি বৈঠকে এই চিঠি প্রদানের ঘটনা ঘটে।
ভারত সফরের সময় হিন্দুস্তান টাইমসকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ‘হুমকিপূর্ণ বার্তা’ দেয়ার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লুকে প্রশ্ন করা হলে তিনি ইমরান খানের অভিযোগ অস্বীকার করেন।
এ ছাড়া লু বলেন, যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে এবং পাকিস্তানের সাংবিধানিক প্রক্রিয়া ও আইনের শাসনকে যুক্তরাষ্ট্র সম্মান ও সমর্থন করে।
গত ৩১ মার্চ জাতির উদ্দেশে দেয়া এক ভাষণে ইমরান খান বাইরের দেশ থেকে আসা হুমকির চিঠির বিষয়ে বলেছিলেন এবং এই ষড়যন্ত্রের পেছনে যুক্তরাষ্ট্রকেই দায়ী করেছিলেন।
নয়া শতাব্দী/এস
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ