শ্রীলঙ্কায় চলমান অর্থনৈতিক সংকট আরো ঘনীভূত হচ্ছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের সংকটের পর এবার জীবন রক্ষাকারী ওষুধের ঘাটতি দেখা দিয়েছে দ্বীপরাষ্ট্রটিতে। হৃদরোগ, ক্যান্সারসহ প্রাণঘাতি রোগের ওষুধ আমদানি করতে না পারায় ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম। এমন অবস্থায় দেশটির চিকিৎসকদের শীর্ষ সংগঠন ওষুধ সংকটের কারণে জাতীয় স্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে। গত মঙ্গলবার দ্য গভর্নমেন্ট মেডিকেল অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন (জিএমওএ) এক বৈঠক শেষে এ ঘোষণা দেয়। হাসপাতাল ও চিকিৎসকরা বড় ধরনের ওষুধ সংকটে পড়ায় চিকিৎসা জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে সংগঠনটি।
পর্যটনসমৃদ্ধ দক্ষিণ এশিয়ার দেশ শ্রীলঙ্কায় গত বছরের শেষ থেকেই অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ হতে থাকে। দেশটি স্বাধীনতার পর সবচেয়ে বাজে অর্থনৈতিক পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছে। মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় জ্বালানি ও খাদ্য সংকট বেড়ে গেছে। পর্যাপ্ত গ্যাস ও জ্বালানি তেল সরবরাহ না থাকায় ব্যাহত হচ্ছে বিদ্যুৎ উৎপাদন। এতে দিনে অর্ধেকের বেশি সময় লোডশেডিং হচ্ছে দেশটিতে। বেঁচে থাকার প্রয়োজনীয় উপকরণ পেতে টানাটানি পড়ে যাওয়ায় ক্ষুব্ধ জনগণ রাস্তায় নেমে এসেছেন। অব্যাহত সংকটের মুখে গণবিক্ষোভে দাবি উঠেছে প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসের পদত্যাগের। পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরে গত সোমবার দেশটির ২৬ জন মন্ত্রী একযোগ পদত্যাগ করেছেন। তাদের মধ্যে রাজাপাকসে পরিবারের অন্যতম সদস্য নমাল রাজাপাকসেও আছেন। অর্থনৈতিক দুরবস্থা সামাল না দিতে পেরে পদত্যাগ করেছেন শ্রীলঙ্কার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরও। গদি বাঁচাতে বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসার ও সর্বদলীয় সরকার গঠনের আহ্বান জানালেও তারা অস্বীকার করেছে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে হাত মেলাতে। শ্রীলঙ্কার বেশির ভাগ পণ্যই আমদানি-নির্ভর। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ তলানিতে নেমে আসায় এর ভয়াবহ প্রভাব পড়েছে ওষুধ আমদানিতে। শ্রীলঙ্কার ৮৫ শতাংশ ফার্মাসিউটিক্যাল পণ্যই আমদানি করতে হয়। এর মূল্য পরিশোধ করতে হয় মার্কিন ডলারে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভে পর্যাপ্ত ডলার না থাকলে ওষুধসহ প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি করা সম্ভব নয়। গত মাসেই শ্রীলঙ্কা চেম্বার অব ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রি সতর্ক করে বলেছিল, ৫ শতাংশ ওষুধ ফুরিয়ে গেছে। এর ফলে পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে যেতে পারে। দেশটির আন্তর্জাতিক মানের চিকিৎসাব্যবস্থা ধ্বংসের জন্য সরকারকে দায়ী করেছে শ্রীলঙ্কান চিকিৎসকদের শীর্ষ সংগঠন জিএমওএ। এক বিবৃতিতে সংগঠনটি বলেছে, দেশের চিকিৎসাব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে পড়া ঠেকাতে সরকার ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণলায় ব্যর্থ হয়েছে। রাজধানী কলম্বোর ন্যাশনাল হাসপাতালের হূদরোগ বিশেষজ্ঞ গোতাবায়া রানাসিংহে বলেছেন, হাসপাতালটির ওষুধ শেষ হয়ে যাওয়ায় রোগীদের জীবন ঝুঁকির মুখে। হূদরোগের জরুরি ওষুধ-পথ্য, উচ্চ রক্তচাপ ও হার্ট অ্যাটাকের ওষুধ শেষ হয়ে গেছে। তিনি বলেন, ‘আমি শুনেছি, ক্যান্সারের ওষুধও পাওয়া যাচ্ছে না। এটা খুবই উদ্বেগজনক খবর।’ খাদ্য ও জ্বালানি সংকট মোটাদাগে চোখে পড়লেও ওষুধ সংকট নিয়ে এখনো তেমন আলোচনা হচ্ছে না। গোতাবায়া রানাসিংহে বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের সঙ্গে চিকিৎসা-সামগ্রীর সংকট দেশটিতে নতুন করে উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। ওষুধ সংকট তো কেবল শুরু। একজন চিকিৎসক রোগী দেখার পর ব্যবস্থাপত্রে কোনো ওষুধের নাম লিখতে পারছেন না।
নয়া শতাব্দী/এম
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ