ঢাকা, সোমবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১, ১৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইউক্রেনে অস্ত্রের ঢল নামাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র

প্রকাশনার সময়: ০৭ এপ্রিল ২০২২, ০৮:৪৩

ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযানের শুরুর দিকেই দেশটির গুরুত্বপূর্ণ বন্দরনগরী মারিউপোল অবরোধ করে রুশ সেনারা। পাল্টা জবাব দিলেও অবরোধ ভাঙতে পারেনি ইউক্রেনের সেনারা। এরই মধ্যে কয়েকদফা আলোচনার মাধ্যমে শহর থেকে অনেক বেসামরিক নাগরিক বেরিয়ে গেলেও এখনো ১ লাখ ২০ হাজারের বেশি বাসিন্দা আটকা পড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে মারিওপোল শহরের পতন সময়ের ব্যাপার বলেই মনে হচ্ছে। রিপাবলিক ওয়ার্ল্ডের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পুতিনের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত রাশিয়ার প্রদেশ চেচনিয়ার প্রধান রমজান কাদিরভ টেলিগ্রাম প্ল্যাটফর্মের একটি পোস্টে দাবি করেছেন, মারিউপোলে ইউক্রেন নৌবাহিনীর ৩৬ স্বতন্ত্র মেরিন ব্রিগেডের ৫০৩ ব্যাটালিয়নের প্রায় ২৬৭ সেনা রুশ বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেছে।

পোস্টে তিনি আরো বলেন, ইউক্রেনীয় সেনারা (আত্মসমর্পণ) সঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছে এবং রাশিয়ার কাছে তারা সম্পূর্ণ নিরাপদ। একই সঙ্গে তিনি দাবি করেছেন, ইউক্রেনের প্রধান শহরগুলো রুশ সেনাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে রমজান কাদিরভের দাবির বিষয়ে কোনো মন্তব্য করা হয়নি। এর আগে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ইউক্রেনীয় সেনা ও বিদেশি ভাড়াটে সৈনিকদের নিরাপদে শহর ত্যাগের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। যেসব সেনা মারিউপোল শহর ত্যাগ করতে চান, তারা চাইলে অস্ত্র ত্যাগ করে যেতে পারেন। এমনকি অস্ত্র ত্যাগকারীদের নিরাপত্তার নিশ্চয়তাও দেয়া হয়েছে মস্কোর পক্ষ থেকে। যদিও এমন প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে ইউক্রেন। রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, নিজেদের সেনাদের জীবন বাঁচানোর ব্যাপারে আগ্রহী নয় কিয়েভ। এমন পরিস্থিতিতে দ্য টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাশিয়া এরই মধ্যে মারিউপোলের মেয়র হিসেবে মস্কোপন্থি একজনকে ঠিক করে ফেলেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ইউক্রেন সরকারের বিরোধী পক্ষ ও রাশিয়াপন্থি দলের স্থানীয় কাউন্সিলর কোস্তিয়ানতিন ইভাশ্চেঙ্কোকে শহরের মেয়র হিসেবে ঘোষণা করেছে মস্কোপন্থি দল। বর্তমানে ইউক্রেনের মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালনরত ভাদিম বয়চেঙ্কো বলেছেন, মারিওপোলের বর্তমান পরিস্থিতি মানবতার বিপর্যয়েরও বাইরে। এর আগে বয়চেঙ্কো বলেছিলেন, রুশ হামলায় শহরের ৯০ শতাংশ আবাসিক ভবন ধ্বংস হয়েছে ও শহরের ৫ হাজার বাসিন্দা নিহত হয়েছে। রাশিয়ার জন্য মারিউপোলের দখল নেয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ শহর দখল নিতে পারলে রুশঅধ্যুষিত ইউক্রেনের দোনবাস অঞ্চলের সঙ্গে ক্রিমিয়ার সরাসরি যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে, যুক্তরাজ্যের জয়েন্ট ফোর্স কমান্ডের সাবেক কমান্ডার জেনারেল স্যার রিচার্ড ব্যারনস এমনটাই মনে করেন। এ ছাড়াও মারিউপোল যদি দখল করা সম্ভব হয় কৃষ্ণ সাগরে ইউক্রেনের উপকূলের ৮০ শতাংশ এলাকা রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। ফলে সমুদ্রপথে ইউক্রেনের বাণিজ্য পথ বন্ধ হবে দেশটি বিশ্ব থেকে সমুদ্র পথে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। আজভ সাগরের তীরবর্তী ইউক্রেনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বন্দর মারিউপোলে অবস্থিত। এই পথ দিয়েই দেশটি মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশে স্টিল, কয়লা ও ভুট্টা রফতানি করে।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলায় এখন পর্যন্ত বহু শিশু প্রাণ হারিয়েছে। দেশটির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রুশ সৈন্যদের হামলায় কমপক্ষে ১৬৭ শিশু নিহত হয়েছে এবং আহত হয়েছে আরো ২৭৯ জন। এক মাসের বেশি সময় ধরে দেশটিতে সংঘাত চলছেই। ইউক্রেনের প্রসিকিউটর জেনারেলের কার্যালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, রাশিয়ার ক্রমাগত গোলাবর্ষণ এবং বোমা হালায় প্রায় ৯২৭টি স্কুল এবং অন্যান্য শিক্ষা ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সবচেয়ে বেশি শিশুর মৃত্যু হয়েছে পূর্বাঞ্চলীয় দোনেৎস্ক অঞ্চলে। সেখানে রাশিয়ার হামলায় ৮১ শিশু প্রাণ হারিয়েছে। অপরদিকে রাজধানী কিয়েভে ৭৮ শিশু এবং খারকিভ অঞ্চলে ৬৪ শিশু নিহত হয়েছে।

এদিকে বুচা শহরের মেয়র আনাতোলি ফেদোরুক জানিয়েছেন, সেখানে ৩২০ বেসামরিক নাগরিককে গুলি করে হত্যা করেছে রুশ সৈন্যরা। ওই শহর দখলের সময় এসব নিরীহ মানুষকে হত্যা করা হয়। ওয়ার্ড টুনাইটকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ফেদোরুক বলেন, তিনি ব্যক্তিগতভাবেই রুশ বাহিনীর হাতে বহু মানুষের হত্যাকাণ্ডের সাক্ষী। তিনি বলেন, আমার চোখের সামনেই অনেক কিছু হয়েছে। ফেদোরুক বলেন, সেখানে তিনটি বেসামরিক গাড়িতে করে লোকজন কিয়েভে যাওয়া চেষ্টা করছিল এবং তাদের গুলি করে হত্যা করা হয়। তিনি আরো অভিযোগ করেন, রুশ বাহিনী শহর দখলের সময় স্থানীয় রাজনীতিবিদদেরও নিস্তার দেয়নি।

রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়তে ইউক্রেনকে আরো ১০ কোটি মার্কিন ডলারের সমরাস্ত্র দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। এর মধ্যে অত্যাধুনিক ড্রোন ও ট্যাংকবিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্রও থাকবে। গত মঙ্গলবার মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর ও পেন্টাগন পৃথকভাবে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেছেন, ইউক্রেনের জরুরি ভিত্তিতে এ ধরনের অস্ত্র প্রয়োজন। তিনি জানান, ২০২১ সালের আগস্ট থেকে ইউক্রেনে এ নিয়ে ষষ্ঠবার নিরাপত্তা সহায়তা পাঠাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের বিবৃতিতে জানানো হয়, ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত ১৭০ কোটি ডলারের অস্ত্র পাছিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ক্ষমতাগ্রহণের পর থেকে দেশটিকে মোট ২৪০ কোটি ডলারের অস্ত্র দেয়া হয়েছে। ব্লিঙ্কেন জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি আরো ৩০টির বেশি দেশ ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা দিচ্ছে। মিত্রদের সঙ্গে মিলে ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় আরো সহায়তা দেয়া হবে বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।

এদিকে ডয়েচে ভেলে খবরে বলা হয়েছে, মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন জানিয়েছেন, ইউক্রেনে ট্যাংকবিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্রযুক্ত অত্যাধুনিক সুইচব্লেড ড্রোন পাঠাবে যুক্তরাষ্ট্র। তিনি বলেন, আমরা যত দ্রুত সম্ভব সুইচব্লেড ৬০০ ও ৩০০ ড্রোন ইউক্রেনে পাঠাব। সম্প্রতি মার্কিন কংগ্রেসে ইউক্রেনের জন্য পাস হওয়া ১ হাজার ৩৬০ কোটি ডলার তহবিলের অংশ হিসেবে এসব সহায়তা দেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ব্লিঙ্কেন।

তুরস্কে রাশিয়া ও ইউক্রেনের সরকারি প্রতিনিধিদের মধ্যে যে শান্তি সংলাপ চলছে তা ভণ্ডুল করতে মরিয়া যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা। বুচা শহরে গণহত্যার জেরে বিশ্বজুড়ে রাশিয়াকে যুদ্ধপরাধী রাষ্ট্র হিসেবে প্রচার করা সেই চেষ্টারই প্রকাশ বলে জানিয়েছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ল্যাভরভ। গত মঙ্গলবার একটি ভিডিওবার্তা প্রকাশ করেছে রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

নয়া শতাব্দী/এম

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ