ঢাকা, সোমবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১, ১৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

৭০ দশকেও এমন সংকট দেখেছে শ্রীলঙ্কা

প্রকাশনার সময়: ০৬ এপ্রিল ২০২২, ১৯:০৯

দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কা নিজ ইতিহাসের অন্যতম দুঃসময় পার করছে। অর্থনৈতিক, জ্বালানি ও খাদ্যসহ নানাবিধ সংকটে নিমজ্জিত উপমহাদেশের দেশটি।

তবে দেশটির জন্য এমন সংকট নতুন নয়। ১৯৭৪ সালে একই ধরনের সংকটের মুখোমুখি হয়েছিল শ্রীলঙ্কা। সেবারও খাদ্য ও অর্থের মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতে নেমে এসেছিল বিপর্যয়। লঙ্কার ওই সংকট নিয়ে নিউ ইয়র্ক টাইমসে একটি বিশেষ প্রতিবেদন ছাপা হয়েছিল ওই বছরের ১৩ মে। যার শিরোনাম ছিল ‘শ্রীলঙ্কা, খাদ্যের অভাবে ও অর্থনৈতিক সংকটের মুখোমুখি’।

প্রতিবেদনটিতে শ্রীলঙ্কার দুর্যোগের কারণগুলো বিশ্লেষণ করা হয়।

সে সময় দেশটির প্রধানমন্ত্রী শ্রীমাভো বন্দরনায়েকে স্বীকার করে নেন পরিস্থিতি। তিনি বলেন, ‘এ অর্থনৈতিক সংকট আমাদের শ্বাসরোধ করে রেখেছে। আমরা আক্ষরিক অর্থেও টিকে থাকার জন্য লড়াই করছি।’

ওই বছর তীব্র সমালোচনার মুখে পড়া বন্দরনায়েকের সরকার তখন স্লোগান নির্ধারন করে, ‘প্রোডিউস অর পেরিশ’, ‘উৎপাদন অথবা মৃত্যু’।

নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনটিতে আরও উল্লেখ করা হয় যে, ওই সময় ১ কোটি ৩০ লাখ জনসংখ্যার দেশটির জনগণ শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও খাদ্যে দক্ষিণ এশিয়ায় অগ্রগামী ছিল। তাদের বিপর্যয়ের অন্যতম কারণ ছিল বাড়তে থাকা খাদ্য আমদানির খরচ ও স্থির রপ্তানি আয়।

এর সঙ্গে যোগ হয় সরকারের কৃষিজমির অব্যবস্থাপনা, কৃষকদের স্বল্প প্রণোদনা, ভূমি সংস্কারের নামে ব্যক্তিগত জমি দখল। পাশাপাশি চা ও রাবার রপ্তানিকে খাদ্য উৎপাদনের চেয়ে গুরুত্ব দেয়ার মতো বৃটিশ ঔপনিবেশিক ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখার মতো বিষয়গুলো সমৃদ্ধশীল এক দেশকে চাল ও গমের জন্য প্রায় ভিক্ষা করতে বাধ্য করে।

১৯৭৫ সালের এপ্রিলে শ্রীলঙ্কার কাছে মাত্র দুই মাসের চাল মজুদ ছিল। চীন থেকে ৪০ হাজার টনের একটি চালান তাদের সে সমূহ বিপদ থেকে সে সময় রক্ষা করে। সে সময় অস্ট্রেলিয়া, পাকিস্তান, সোভিয়েত ইউনিয়ন, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, এমনকি খাদ্য সমস্যায় থাকা ভারতও শ্রীলঙ্কার কাছে চাল বিক্রি করে।

খাদ্য সংকট নিয়ে এক লঙ্কান অর্থনীতিবিদ মন্তব্য করেন, ‘দেশে এখন প্রতি সপ্তাহের হিসেবে চলছে। এক সপ্তাহে কতটুকু খাবার এসেছে আর গ্রহণ করা হচ্ছে সেটা আমরা হিসাব করছি। এর বেশি আমাদের পক্ষে এ মুহূর্তে চিন্তা করা সম্ভব নয়।’

দুই বিলিয়ন ডলারের ঋণ

খাদ্য সংকটের সঙ্গে শ্রীলঙ্কার কাঁধে চেপেছিল বৈদিশিক ঋণের বোঝা। তাদের কাছে অন্যান্য দেশের ঋণের পরিমাণ প্রায় ২ বিলিয়ন ডলারে গিয়ে ঠেকে ও ক্রেডিট পজিশনের অবস্থা খারাপ থাকায় ক্রমবর্ধমান ঋণও তারা পাচ্ছিল না। ১৯৭৪ সালে দেশটি তার বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ, প্রায় ৩০ কোটি ডলার, চাল ও গম আমদানিতে ব্যয় করে। এ খরচ হত দুই বছরে বেড়ে তিন গুণ হয়েছে।

চা, রাবার ও নারিকেল রপ্তানি করে শ্রীলঙ্কা বৈদেশিক মুদ্রার ৮০ শতাংশ আয় করত। এ মূল রপ্তানি পণ্যগুলোর উৎপাদনে ঘাটতি থাকায় খাদ্য আমদানিতে টান পড়ে। চা, রাবার ও নারিকেল উৎপাদন ঘাটতির মূল কারণ ছিল সারের ঘাটতি, আমলাতান্ত্রিক বিধিনিষেধ ও নতুন সরঞ্জামে স্বল্প বিনিয়োগ।

নিউ ইয়র্ক টাইমসকে ওই অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘দেশটি রপ্তানির চেয়ে ৫০ শতাংশ বেশি আমদানি করছে। তারা দেউলিয়া হয়ে যাচ্ছে কারণ তাদেরকে খাদ্যের পেছনে অনেক বেশি ব্যয় করতে হচ্ছে। পেট্রলিয়াম, সার ও ম্যানুফাকচারড প্রোডাক্টের পেছনে ব্যয় করার জন্য তাদের হাতে বেশি অর্থ নেই।’

জনসংখ্যা বৃদ্ধি

শ্রীলঙ্কার মোট জনসংখ্যার অধিকাংশ করদাতা ছিল না সে সময়। এরপরও তাদেরকে প্রতি সপ্তাহে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা, শিক্ষা ও খাদ্য প্রদানের বহু দশক পুরনো ব্যবস্থা অর্থনৈতিকভাবে অকার্যকর প্রমাণিত হয়। দেশটির জনসংখ্যা ২৫ বছরে দ্বিগুণ হয়েছে। এছাড়াও সরকার অবাস্তবভাবে হ্রাসকৃত মূল্যে গম, চিনি ও আটার ভর্তুকি দিয়েছে।

শ্রীমাভো বন্দরনায়েকের ১৯৭৩ সালে ক্ষমতায় আসার পেছনে অন্যতম প্রতিজ্ঞা ছিল আরও বেশি পরিমাণে বিনামূল্যে চাল বিতরণ করা।

দেশটির জনসংখ্যার অর্ধেক ছিল অনূর্ধ্ব ৩০। তাদের সবার জন্য ছিল বিনামূল্যে শিক্ষার ব্যবস্থা। তবে দেশের অর্থনীতি কৃষিভিত্তিক হওয়ায় দেশে বেকারের সংখ্যা ছিল প্রায় ৭ লাখ। দেশটির অস্থিতিশীল অবস্থার অন্যতম কারণও ছিল এটি।

শ্রীলঙ্কায় সত্তরের দশকের শুরুতে বেসরকারী বিনিয়োগের সুযোগও একেবারে সীমাবদ্ধ ছিল। কোনও সংস্থাকে জাতীয়করণের পদক্ষেপকে সরকার উত্সাহিত করত। এ পদক্ষেপগুলোর কারণে কার্যত বিদেশি বিনিয়োগ বন্ধ হয়ে যায়।

কর দেয়ার পর মাসে সর্বোচ্চ ৩৩০ ডলারের আয়ের সীমা বেঁধে দেয়া ও ৫০ একর জমির বেশি মালিক না হতে দেয়ার সীমাবদ্ধতা বিনিয়োগ এবং উৎপাদনকে আরও হ্রাস করে।

নয়া শতাব্দী/এস

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ