সুইজারল্যান্ডভিত্তিক দৈনিক লে টেম্পসকে এক সাক্ষাৎকারে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) সাবেক প্রধান প্রসিকিউটর কার্লা দেল পন্তে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে ‘যুদ্ধাপরাধী’ হিসেবে অ্যাখা দিয়েছেন। এ সময় তিনি পুতিনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক গ্রেফতারি পরোয়ানার আহ্বান জানান।
সাক্ষাৎকারে কার্লা দেল পন্তে বলেন, 'পুতিন একজন যুদ্ধাপরাধী।
এর আগে গত ১৬ মার্চ পুতিনকে যুদ্ধাপরাধী বলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। সে সময় বাইডেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি মনে করি তিনি (ভ্লাদিমির পুতিন) একজন যুদ্ধাপরাধী।
বাইডেন পুতিনকে 'যুদ্ধাপরাধী' বলে অভিহিত করার পর, ক্রেমলিন ত্বরিত এক প্রতিক্রিয়ায় একে 'অগ্রহণযোগ্য' এবং 'ক্ষমার অযোগ্য' বাগাড়ম্বর বলে আখ্যা দেয়।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি মারিউপোলের শিশু ও প্রসূতি হাসপাতালে রাশিয়ার হামলাকে বর্ণনা করেছেন যুদ্ধাপরাধ হিসেবে। যদি তা না-ও হয় - তবুও সব যুদ্ধেরই কিছু নিয়ম-কানুন আছে, বলে চলেছে ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অফ দা রেডক্রস, সংক্ষেপে যা রেডক্রস হিসেবেই বিশ্বব্যাপী সুপরিচিত।
জেনেভা কনভেনশন নামে পরিচিত বিভিন্ন চুক্তির মধ্যে এবং নানা আন্তর্জাতিক আইন ও সমঝোতার মধ্যেই এসব নিয়ম-কানুন নিহিত আছে।
মারিউপোলে শহরের একটি শিশু ও প্রসূতি হাসপাতালে গত বুধবার এই হামলা চালিয়েছিলো রাশিয়া - যার তীব্র নিন্দা করেছে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়।
এরপর জেলেনস্কি একে যুদ্ধাপরাধ বলে অভিহিত করেন।
গত ২৪ শে ফেব্রুয়ারি রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা শুরু করে এবং জবাবে পশ্চিমা বিশ্ব নজিরবিহীন নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে দেশটির ওপর।
যুদ্ধাপরাধ বলতে কী বোঝায়?
বেসামরিক নাগরিকদের ওপর ইচ্ছাকৃত হামলা করা যাবে না- এমনকি এমন কোন অবকাঠামোতেও হামলা করা যাবে না যা তাদের বেঁচে থাকার জন্য অপরিহার্য। কিছু অস্ত্রও নিষিদ্ধ, কারণ এসব অস্ত্র ব্যবহার করলে সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যেমন অ্যান্টি-পার্সোনেল ল্যান্ডমাইন, কেমিক্যাল ও বায়োলজিক্যাল অস্ত্র। অসুস্থ বা আহতকে অবশ্যই সেবা দিতে হবে। এর মধ্যে অসুস্থ সেনারাও থাকবেন, যাদের যুদ্ধবন্দী হিসেবে অধিকার হবে। আরও কিছু আইন আছে যেগুলোতে নির্যাতন বা একটি গোষ্ঠীকে ধ্বংস করতে চালানো গণহত্যাকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
ইউক্রেনে যুদ্ধাপরাধের কী কী অভিযোগ আছে
ইউক্রেন বলছে, শিশু ও প্রসূতি হাসপাতালে রাশিয়া যে হামলা চালিয়েছে তা যুদ্ধাপরাধ। এ ঘটনায় তিন জন নিহত হয়েছে আর হাসপাতালের ১৭ জন কর্মী ও রোগী আহত হয়েছে। এছাড়া রাশিয়ান সৈন্যরা পলায়নরত ইউক্রেনিয়ান বেসামরিক নাগরিকদের লক্ষ্যবস্তু করেছে - এমন খবরও পাওয়া গেছে। এছাড়া খারকিভ শহরে বেসামরিক এলাকায় ক্লাস্টার বোমা নিক্ষেপেরও প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে।
তবে ইউক্রেন বা রাশিয়া কেউ এ ধরণের অস্ত্র ব্যবহারের ওপর নিষেধাজ্ঞায় স্বাক্ষর করেনি। তা সত্ত্বেও এসব ঘটনাগুলো যুদ্ধাপরাধ হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে।
যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে রাশিয়া ভ্যাকিউম বা থারমোব্যারিক বোমা ব্যবহার করেছে। বলা হয়, বিস্ফোরক দিয়ে তৈরি বোমার চেয়েও মারাত্মক বিধ্বংসী এই ভ্যাকিউম বোমা।
এই বোমা দুই ধাপে কাজ করে। প্রথম ধাপের বিস্ফোরণে মেঘের মতো বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে জ্বালানি তেল।দ্বিতীয় ধাপ হচ্ছে, এই জ্বালানি তেলের মেঘ আবার বিস্ফোরিত হয়ে আগুনের গোলার মতো তৈরি হয়, বড় ধরনের শক ওয়েভ বা শব্দ তরঙ্গের ধাক্কা তৈরি করে এবং আশপাশের সব অক্সিজেন শুষে নেয়।
নয়া শতাব্দী/এম
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ