ঢাকা, সোমবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১, ১৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইউক্রেনে মহাবিপদে শিশুরা 

প্রকাশনার সময়: ২৪ মার্চ ২০২২, ১০:০৫

পূর্ব ইউরোপের দেশ ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলায় এখন পর্যন্ত ১২১ শিশু নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে আরো ১৬৭ শিশু। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি দেশটিতে হামলা চালানো শুরু করে রাশিয়া। তারপর থেকে সংঘাত চলছেই। টানা ২৮ দিনের সংঘাতে বহু বেসামরিক নিহত হয়েছেন।

যুদ্ধের ভয়াবহতা থেকে রক্ষা পাচ্ছে না শিশুরাও। গতকাল বুধবার আলজাজিরার লাইভ প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে। সম্প্রতি ৯ বছর বয়সি এক কন্যা শিশু এবং ১৪ বছর বয়সি এক ছেলে শিশু নিহত হয়েছে। তারা দানেৎস্ক অঞ্চলে নিহত হয়। স্থানীয় কর্মকর্তারা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, গত ১৭ মার্চ রুশ সেনারা ১৪ বছর বয়সি এক কিশোরের সামনেই তার বাবাকে গুলি করে হত্যা করে। বুচা শহরতলিতে ওই ঘটনা ঘটেছে। ওই ঘটনায় শিশুটিও আহত হয়েছে এবং বর্তমানে সে চিকিৎসাধীন রয়েছে।

ওই বিবৃতিতে আরো জানানো হয়েছে যে, রাশিয়ার গোলাবর্ষণে ২২০টির বেশি স্কুল এবং ১৫৫টি কিন্ডারগার্টেন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রাজধানী কিয়েভসহ বিভিন্ন শহরে এখনো হামলা অব্যাহত রেখেছে রুশ সেনারা। রাজধানী কিয়েভের পর সবচেয়ে বেশি শোচনীয় অবস্থা মারিউপোলের। শহরটি এখন অবরুদ্ধ করে রেখেছে রুশ সেনারা। ইউক্রেনের দক্ষিণ সীমান্তে কৌশলগত অবস্থানের কারণে মারিউপোল শহরটি রাশিয়ান বাহিনীর ক্রমাগত হামলার লক্ষ্যবস্তু হয়ে উঠেছে। এই শহরটিকে চর্তুদিক থেকে রীতিমতো অবরুদ্ধ করে রেখেছে রুশ সামরিক বাহিনী।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, মারিউপোলে এক লাখের মতো মানুষ আটকা পড়েছেন। সেখানে চরম মানবিক বিপর্যয়ের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন তারা।

বুধবার ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট বলেন, মারিউপোলে এক লাখের মতো মানুষ অবরুদ্ধ হয়ে আছে। যা মারিউপোলের মোট জনসংখ্যার এক-চতুর্থাংশ। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার মধ্যরাতে দেয়া এক ভাষণে তিনি বলেন, তাদের কাছে কোনো খাদ্য, পানি ও ওষুধ নেই। সেখানে সম্পূর্ণ ‘অমানবিক পরিস্থিতিতে’ আটক পড়েছেন তারা। রুশ সেনাদের গোলাবর্ষণ অব্যাহত থাকায় পুরো শহর বিপর্যস্ত।

জেলেনস্কি আরো বলেন, ইউক্রেনের কর্মকর্তারা এবং মিত্ররা শহরে সহায়তা পেতে এবং আরো বেসামরিক লোকদের নিরাপদে সরিয়ে নিতে যথাসাধ্য চেষ্টা করছে। মঙ্গলবার প্রায় ৭ হাজার বেসামরিক নাগরিক শহর থেকে নিরাপদে সরে যেতে সক্ষম হয়।

জেলেনস্কি জানান, গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই মারিউপোলে নির্বিচারে গুলি চালানো হয়েছে। রাষ্ট্রীয় জরুরি কর্মী ও বাসচালকদের বন্দি করা হয়েছে। এমনকি মঙ্গলবার মারিউপোল থেকে বেসামরিক লোকদের সরিয়ে নেয়ার সময় সেখানে হামলা চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট। এদিকে গত সোমবার প্রকাশিত ওয়ান হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিবেদনে মারিউপোল শহরটিকে ‘মৃতদেহ এবং ধ্বংসপ্রাপ্ত ভবনে পরিপূর্ণ হিমায়িত নরক দৃশ্য’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে।

কূটনীতিকের বেশে রাশিয়ার গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষে কাজের সন্দেহে রুশ ৪৫ কূটনীতিককে বহিষ্কার করছে পোল্যান্ড। বুধবার পোল্যান্ডের বিশেষ নিরাপত্তা সংস্থা দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতি রাশিয়ার ওই কূটনীতিকদের বহিষ্কারের আহ্বান জানিয়েছে।

রয়টার্স এর খবরে বলা হয়েছে, পোল্যান্ডে নিয়োজিত কূটনীতিকদের বিরুদ্ধে গুপ্তচর বৃত্তির যে অভিযোগ আনা হয়েছে, তা প্রত্যাখ্যান করেছে মস্কো। পোল্যান্ডের বিশেষ নিরাপত্তা সংস্থার মুখপাত্র স্টানিসল জারিন সাংবাদিকদের বলেছেন, দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা সংস্থা ৪৫ জনকে শনাক্ত করেছে- যারা রাশিয়ান গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তা ও গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এবং তারা পোল্যান্ডে কূটনীতিকের মর্যাদা নিয়ে অবস্থান করছেন।

তিনি বলেন, রুশ ওই কর্মকর্তাদের তালিকা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। এই তালিকায় রাশিয়ান ফেডারেশনের বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তা এবং ব্যক্তিরাও রয়েছেন। কূটনীতিকের বেশে এই কর্মকর্তারা রাশিয়ার গোয়েন্দাদের সঙ্গে সমন্বয় করে পোল্যান্ড এবং তার মিত্রদের বিরুদ্ধে কাজ করতেন। এদিকে, এ ঘটনার পর ওয়ারশে নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূতকে তলব করেছে পোল্যান্ডের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। পরে সেখানে বৈঠকের পর রাষ্ট্রদূত বলেছেন, কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে, তার কোনো ভিত্তি নেই। রাষ্ট্রদূত সের্গেই আন্দ্রিভ বলেছেন, তাদের পোল্যান্ড ছেড়ে চলে যেতে হবে। এটি পোলিশ পক্ষের একটি সার্বভৌম সিদ্ধান্ত এবং তাদের নিজেদের সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকার রয়েছে। রাশিয়ারও পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়ার অধিকার আছে বলে মন্তব্য করেছেন আন্দ্রিভ। তবে কী ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হতে পারে সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানাননি তিনি।

ইউক্রেনের উপপ্রধানমন্ত্রী ইরিনা ভেরেশচুক বলেছেন, দেশের বিভিন্ন শহরে আটকে পড়া নাগরিকদের নিরাপদে সরিয়ে নিতে নয়টি মানবিক করিডোর খোলার বিষয়ে রাশিয়ার সঙ্গে একমত হওয়া গেছে। তার ফেসবুক পোস্টের বরাত দিয়ে বিবিসি এ খবর প্রকাশ করে। তবে মারিউপোল থেকে নাগরিকদের নিরাপদে সরিয়ে নেয়ার বিষয়ে রাশিয়ার সঙ্গে কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যায়নি বলে ইরিনা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, আমি আশা করছি, মারিউপোলে আটকে পড়া বাসিন্দারা চাইলে বেরদিয়ানস্ক হয়ে শহর ছাড়তে পারবেন। সেখানে তাদের জন্য মানবিক সহায়তার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এ ছাড়া ২৪টি বাস অপেক্ষা করছে তাদের বহনের জন্য। এর আগেও বেশ কয়েকবার মারিউপোল থেকে বেসামরিক মানুষ সরিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা ভেস্তে গেছে। ইউক্রেনের মারিউপোলে বেশ কিছুদিন ধরে হামলা চালাচ্ছে রুশ সেনারা।

ইতোমধ্যে শহরের অবকাঠামোর ৯০ শতাংশ ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে বলে খবর মিলেছে। মারিউপোলে সংঘাত ভয়াবহ রূপ নেয়ার অন্যতম কারণ হলো— এ শহর আজভ সাগরের এমন এক জায়গায় অবস্থিত যা কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

এ ছাড়া এটি ক্রিমিয়া উপদ্বীপে রাশিয়ান বাহিনী এবং পূর্ব ইউক্রেনে মস্কো-সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদী সেনাদের বিভক্ত করে রেখেছে। যদি এ শহর দখলে নেয়া যায় তবে ক্রিমিয়া পর্যন্ত রুশ সেনাদের অবাধ পদচারণার সুযোগ তৈরি হবে।

নয়া শতাব্দী/এম

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ