ঢাকা, সোমবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১, ১৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

মারিউপোলে চরম মানবিক বিপর্যয়

প্রকাশনার সময়: ২৩ মার্চ ২০২২, ০৯:২৮

রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর অনবরত গোলাবর্ষণের কারণে ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলীয় অবরুদ্ধ শহর মারিউপোল ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। শহরটিতে লাখ লাখ মানুষ খাবার, পানি ও ওষুধের তীব্র সংকটের মুখোমুখি হয়েছেন বলে বিবিসি রেডিও ফাইভ লাইভকে দেয়া সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন মারিউপোল থেকে কোনো রকমে জীবন নিয়ে পালিয়ে আসা ২৭ বছরের তরুণী ভিক্টোরিয়া। তিনি বলেন, শহরটি একেবারে ধ্বংস করা হয়েছে। সেখানে মানুষের বাঁচার অবলম্বন আর নেই। তিনি মারিউপোল থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরের একটি গ্রামে পালিয়েছেন। মারিউপোলে পরিবারের সদস্যদের ফেলে রেখে এসেছেন তিনি।

ভিক্টোরিয়া বলেন, আমার শহর একেবারে ধ্বংস হয়ে গেছে। তিনি রাশিয়ার প্রত্যেকদিন গোলাবর্ষণের শব্দ শোনার কথা যখন বলছিলেন, তখন তার কণ্ঠ কাঁপছিল। মানুষ ভবনের বেজমেন্টে অবস্থান করছে, তবে সেটি আর নিরাপদ নেই। রাশিয়া বোমাবর্ষণ করায় শক্ত বেজমেন্টও ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। অনেক মানুষের কাছে খাবার এবং পানিও নেই। আমার পরিচিত তিনজন শিশু পানিশূন্যতায় মারা গেছে। এটি একবিংশ শতাব্দী, আমার শহরে শিশুরা পানিশূন্যতায় মারা যাচ্ছে। তারা এখন ক্ষুধার্ত।

ভিক্টোরিয়া জানান, পরিবারের অন্য সদস্যদের মারিউপোল ছেড়ে যেতে সাহায্য করতে পারেননি তিনি। তবে তাদের এই শহর থেকে অন্যত্র নিয়ে যাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে চেষ্টা চালাচ্ছেন। তিনি বলেন, আমি ইউক্রেনেই অবস্থান করব। মারিউপোলে আমার পরিবারকে রক্ষার চেষ্টা করব। মারিউপোল আমার জীবন। আমি বুঝতে পারছি না কেন, আমি রাশিয়ার কারণে আমার শহর, আমার দেশ ছেড়ে যাব। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী ইউক্রেনের কয়েকটি শহরের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার জন্য মরিয়া হয়ে গোলাবারুদ ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে আসছে।

দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ শহর মারিউপোলে হামলার তীব্রতা বাড়ানোর পাশাপাশি কর্তৃপক্ষকে সোমবার আত্মসমর্পণের চূড়ান্ত আল্টিমেটামও দিয়েছিল রাশিয়া।

কিন্তু মারিউপোলের শহর কর্তৃপক্ষ আত্মসমর্পণের আল্টিমেটাম প্রত্যাহার করে পাল্টা প্রতিরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। রুশ সৈন্যদের টানা গোলাবর্ষণে শহরটিতে হাজার হাজার বেসামরিক নাগরিকের প্রাণহানি ঘটেছে। গত কয়েক দিনে মারিউপোলের রাস্তায় রাস্তায় বেসামরিক মানুষের মরদেহ পড়ে থাকতে দেখা গেছে।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ও তার প্রধান সহযোগীদের হত্যা করতে রাশিয়ার ভাড়াটে সেনাদের এলিট একটি গ্রুপ আবারো দেশটিতে ঢুকেছে। ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর বরাত দিয়ে গত সোমবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক পোস্ট। গত রোববার সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম টুইটারে দেয়া এক বার্তায় ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, প্রেসিডেন্ট পুতিনের ঘনিষ্ঠ এক রুশ প্রোপাগান্ডাকারী এবং (ওয়াগনারের) মালিক ইয়েভজেনি প্রিগোজিনের সঙ্গে যুক্ত যোদ্ধাদের আরেকটি দল ইউক্রেনে আসতে শুরু করেছে।

ইউক্রেনের রাজনৈতিক ও সামরিক বাহিনীর শীর্ষ নেতাদের হত্যা করাই তাদের প্রধান কাজ। ৪৪ বছর বয়সি প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বরাবরই দাবি করে আসছেন যে, তিনি রাশিয়ার এক নাম্বার টার্গেট এবং তার পরিবার দুই নাম্বারে। এছাড়া চলতি মাসের শুরুতে ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্টের অন্যতম প্রধান একজন উপদেষ্টা জানিয়েছিলেন যে, এক ডজনেরও বেশিবার হত্যাচেষ্টার হাত থেকে বেঁচে গেছেন জেলেনস্কি।

নিউইয়র্ক পোস্ট বলছে, প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কিকে হত্যায় আগের কিছু প্রচেষ্টার সঙ্গে ওয়াগনার যুক্ত ছিল। রুশ প্রেসিডেন্টের সরকারি বাসভবন ক্রেমলিন-সমর্থিত প্রাইভেট আধা-সামরিক এই বাহিনীটি সারা বিশ্বের সবচেয়ে খারাপ কিছু নৃশংসতার জন্য অভিযুক্ত। একইসঙ্গে এটি পুতিনের শেফ নামে পরিচিত একজন অলিগার্কের মাধ্যমে পরিচালিত হয়।

এদিকে প্রতিরক্ষা বিভাগের প্রধান গোয়েন্দা বোর্ড অব ডিরেক্টরস’র একটি সতর্কতাকে উদ্ধৃত করে সংবাদমাধ্যম ফক্স নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্টের পাশাপাশি ভাড়াটে যোদ্ধারা জেলেনস্কির প্রধান উপদেষ্টা অ্যান্ড্রি এরমাক এবং প্রধানমন্ত্রী ডেনিস শ্যামিহালকেও হত্যার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। পোস্টে বলা হয়েছে, পুতিন ব্যক্তিগতভাবে আরেকটি হামলার (জেলেনস্কিকে হত্যার) নির্দেশ দিয়েছেন। আগের সব প্রচেষ্টা ব্যর্থতায় এবং সন্ত্রাসীদের মৃত্যুর মাধ্যমে শেষ হয়েছে। আমাদের রাষ্ট্রের শীর্ষ ব্যক্তিদের হত্যার চেষ্টা দখলদারদের কৌশলের একটি অংশ।

ফক্সে প্রকাশিত ওই পোস্টে জোর দিয়ে আরো বলা হয়েছে, ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী, স্পেশাল সার্ভিস এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ক্রেমলিনের পরিকল্পনার কথা ভালো করেই জানে। সামনে ও পেছন থেকে হওয়া যে কোনো ধরনের আগ্রাসন ব্যর্থ করে দিতে আমরা প্রস্তুত। কোনো সন্ত্রাসী হামলাই সফল হবে না।

নয়া শতাব্দী/এম

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ