ঢাকা, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের স্বস্তির বার্তা

প্রকাশনার সময়: ১৪ মার্চ ২০২২, ২১:৪৭

ইউক্রেন যুদ্ধের প্রতিক্রিয়ায় ক্রমেই বাড়তে বাড়তে জ্বালানি তেলের দাম ১৪ বছরের মধ্যে রেকর্ড করার পর উদ্বেগের মধ্যে অবশেষে এসেছে স্বস্তি। ব্যারেলপ্রতি ক্রুড অয়েল বা অপরিশোধিত তেলের দাম ১৩৯ ডলার থেকে কমে তা ১০০ ডলারের কাছাকাছি নেমে এসেছে।

গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া ইউক্রেনে হামলার পর থেকে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছিল তেলের দাম। দেড় শ ডলার ছুঁয়ে ফেলে কি না, এই শঙ্কার মধ্যে সপ্তাহখানেক ধরে তা কমে ১০৮ থেকে ১২০ ডলারের মধ্যে ওঠানামা করছিল।

সোমবার বড় পতনে ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট অপরিশোধিত তেল ১০২ ডলার ৫৫ সেন্টে নেমে এসেছে। ব্রেন্ট অপরিশোধিত তেলের দর প্রায় একই পরিমাণ কমে ১০৬ ডলার ১৯ সেন্টে বিক্রি হচ্ছে।

রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুদ্ধের অবসান ঘটাতে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে নতুন করে আলোচনায় বসার কূটনৈতিক প্রচেষ্টার খবরে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের ঊর্ধ্বগতি থেমেছে।

বহুজাতিক বিনিয়োগ ব্যাংক এবং আর্থিক পরিষেবা প্রতিষ্ঠান ইউবিএস গ্রুপের বিশ্লেষক জিওভান্নি স্টাউনোভো বলেন, ‘ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে নতুন আলোচনার পাশাপাশি চীনে নতুন করে লকডাউন শুরু হতে পারে- এমন খবরে তেলের দাম নিম্নমুখী হয়েছে।’

চীন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম তেল আমদানিকারক দেশ। যুক্তরাষ্ট্রের পর সবচেয়ে বেশি তেল আমদানি করে দেশটি। ২০২০ সালের শুরুতে চীন থেকে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস দেশটিতে নতুন করে সংক্রমণ দেখা দিয়েছে। সাংহাই থেকে শেনজেন পর্যন্ত নতুন করে প্রাদুর্ভাবের সূত্রপাত হয়েছে। ১৩ মার্চ ১ হাজার ৪৩৭ জনের দেহে করোনার সংক্রমণ পাওয়া গেছে।

জ্বালানি তেল উৎপাদনে যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরবের পর তৃতীয় বৃহত্তম দেশ হলো রাশিয়া। প্রতিদিন দেশটি প্রায় ৫০ লাখ ব্যারেল অপরিশোধিত তেল রপ্তানি করে।

এই তেলের অর্ধেকের বেশি যায় ইউরোপের বিভিন্ন দেশে। যুক্তরাজ্যের চাহিদার ৮ শতাংশ তেল রপ্তানি করে রাশিয়া।

ইউক্রেন সীমান্তে সেনা মোতায়েন করে রেখে অবশেষে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি দেশটিতে হামলা চালানো শুরু করে রাশিয়া। প্রতিরোধ করছে ইউক্রেনের সেনারাও। এরই মধ্যে তিন দফা ইউক্রেন-রাশিয়ার বৈঠক হয়েছে; তবে কার্যত যুদ্ধ বন্ধ নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি।

যুদ্ধ শুরুর পরই পশ্চিমাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিতে শুরু করে। দেয়া হয় অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞাও।

একপর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্যসহ অনেক দেশ রাশিয়া থেকে জ্বালানি তেলসহ নানা পণ্য আমদানি নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।

করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন আতঙ্কে গত বছরের নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট তেলের দাম কমতে কমতে ৬৬ ডলারে নেমে গিয়েছিল। ব্রেন্ট তেলের দর কমে হয়েছিল ৬৮ ডলার।

তিন-চার দিন ওই একই জায়গায় স্থির ছিল তেলের বাজার। কিন্তু ওমিক্রন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়লেও করোনার নতুন ওই ধরনে আক্রান্ত হয়ে মানুষ খুব একটা মারা না যাওয়ায় এই ভাইরাস নিয়ে আতঙ্ক বেশ খানিকটা কেটে যায়। এতে বিশ্বে তেলের চাহিদা বাড়বে- এ সম্ভাবনা সামনে রেখে আবার বাড়তে শুরু করে দাম।

২০২০ সালের ডিসেম্বর থেকে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়তে শুরু করে। করোনা মহামারির মধ্যেও টানা বেড়েছে তেলের দাম। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করায় তা আরও ঊর্ধ্বমুখী হয়।

গত বছরের অক্টোবরের শেষ দিকে দুই ধরনের তেলের দামই ৮০ ডলার ছাড়িয়ে যায়। সে সময় বাংলাদেশ সরকারও ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে এক লাফে ১৫ টাকা বাড়িয়ে নতুন দাম ৮০ টাকা নির্ধারণ করে।

২০২০ সালের ডিসেম্বরে আন্তর্জাতিক বাজারে গড়ে প্রতি ব্যারেল তেলের দাম ছিল ৪২ ডলার। ২০২১ সালের জানুয়ারিতে ছিল ৪৯ ডলার। এর পর থেকে গড়ে প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম ছিল ফেব্রুয়ারিতে ৫৩ ডলার, মার্চে ৬০, এপ্রিলে ৬৫, মে মাসে ৬৪, জুনে ৬৬, জুলাইয়ে ৭৩ এবং আগস্টে ৭৪ ডলার। অক্টোবরে এই দাম ৮৫ ডলারে ওঠে।

নয়া শতাব্দী/এস

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ