ইউক্রেনের ওডিসা বন্দরে ফের কার্গো জাহাজে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এতে জাহাজটি সমুদ্রের পানিতে ডুবে গেছে।
ওডিসা বন্দরে জাহাজে বিস্ফোরণের কয়েক ঘণ্টা আগে ইউক্রেনের আরেক বন্দর অলিভিয়াতে অবস্থানরত বাংলাদেশি একটি জাহাজে বোমা বা মিসাইল হামলার ঘটনা ঘটে এবং এতে একজন নিহত হন। বৃহস্পতিবার (৩ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউক্রেনের ওডিসা বন্দরে বিস্ফোরণের পর ডুবে যাওয়া কার্গো জাহাজটি এস্তোনিয়ার মালিকানাধীন এবং এর নাম হেল্ট। বিবিসি বলছে, বিস্ফোরণের সময় জাহাজটিতে ছয় জন ক্রু অবস্থান করছিলেন এবং ডুবে যাওয়ার আগে তারা সবাই জাহাজটি থেকে বেরিয়ে আসেন।
অবশ্য হেল্ট জাহাজটি ডুবে গেলেও ক্রুদের সবাইকে উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ইউক্রেনের কর্মকর্তারা। হেল্ট নামের এস্তোনিয়ার এই জাহাজটি বেশ কিছু দিন আগে ওডিসা বন্দর ছাড়ার পর উপকূলে নোঙর করা অবস্থায় ছিল।
তবে তালিন-ভিত্তিক ভিস্তা শিপিং এজেন্সির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইগোর ইলভেস বৃহস্পতিবার বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে বলেন, মার্শাল দ্বীপপুঞ্জের পতাকাবাহী এবং এস্তোনিয়ার মালিকানাধীন হেল্ট নামের এই কার্গো জাহাজের দুই ক্রুকে সাগরে ভাসমান অবস্থায় পাওয়া যায় এবং অন্য চারজনের খোঁজ পাওয়া যায়নি।
তিনি বলেন, ‘জাহাজটি পুরোপুরি ডুবে গেছে। এছাড়া দু’জন ক্রুকে পানির ওপরে একটি ভেলায় ভাসমান অবস্থায় পাওয়া যায় এবং চারজন এখনও নিখোঁজ রয়েছেন। আমি জানি না তারা এখন কোথায় আছেন।’
ইগোর ইলভেসের ধারণা, জাহাজটিতে মাইন আঘাত করে থাকতে পারে। তার ভাষায়, ‘এটি অনেক বড় সমস্যা। তাদেরকে (জাহাজের ক্রু) কেউই সাহায্য করতে পারছে না। ইউক্রেনের কর্মকর্তারাও সেখানে যেতে পারছেন না, কারণ এই সাগর রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে।’
ইলভেস বলেন, জাহাজের ছয় জন ক্রুর মধ্যে চারজন ইউক্রেনের নাগরিক, একজন করে রুশ ও বেলারুশের নাগরিক।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ভোরে ইউক্রেনে ঢুকে হামলা শুরু করে রাশিয়ান সৈন্যরা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের প্রথম দেশ হিসেবে রাশিয়ার সশস্ত্র বাহিনী স্থল, আকাশ ও সমুদ্রপথে ইউক্রেনে এই হামলা শুরু করে। একসঙ্গে তিন দিক দিয়ে হওয়া এই হামলায় ইউক্রেনের বিভিন্ন শহরে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র পড়েছে বৃষ্টির মতো।
সর্বাত্মক হামলা শুরুর পর এই এক সপ্তাহেই পূর্ব ইউরোপের এই দেশটির বহু শহর কার্যত ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে। সামরিক অবকাঠামোর বাইরে রাশিয়ার হামলার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে আবাসিক ভবন, স্কুল ও হাসপাতাল। সামরিক অভিযান শুরুর পর থেকে ইউক্রেনের বন্দরে অবস্থানরত কমপক্ষে ৩টি বাণিজ্যিক জাহাজে হামলার ঘটনা ঘটেছে।
এর আগে গত বুধবার ইউক্রেনে আটকে থাকা বাংলাদেশি জাহাজ ‘বাংলার সমৃদ্ধি’ রকেট হামলার শিকার হয়। হামলায় জাহাজের থার্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. হাদিসুর রহমান (৩৩) নিহত হন। তিনি বরগুনার বেতাগী উপজেলার ৩ নম্বর হোসনাবাদ ইউনিয়নের আব্দুর রাজ্জাক হাওলাদারের ছেলে।
সিরামিকের কাঁচামাল ‘ক্লে’ পরিবহনের জন্য জাহাজটি গত ২২ ফেব্রুয়ারি তুরস্ক থেকে ইউক্রেনের অলভিয়া বন্দরের জলসীমায় পৌঁছায়। সেখান থেকে কার্গো নিয়ে ইতালি যাওয়ার কথা ছিল জাহাজটির। শেষ মুহূর্তে পাইলট না পাওয়ায় ইউক্রেনের জলসীমা থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি ‘বাংলার সমৃদ্ধি’।
নয়া শতাব্দী/এম
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ