ঢাকা, রোববার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

কিয়েভের পতন সময়ের ব্যাপার!

প্রকাশনার সময়: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৭:০৬ | আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৮:১৫
ছবি : এপি

ইউক্রেনে সামরিক হামলার দ্বিতীয় দিন আজ। ইতোমধ্যেই হতাহত হয়েছে শতাধিক। দুইপক্ষই তুমুল লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে বিভিন্ন আন্তকর্জাতিক গণমাধ্যম।

এরই মধ্যে শুক্রবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে ভারি ট্যাংক নিয়ে ঢুকে পড়েছে রাশিয়ান সেনারা। প্রশ্ন উঠেছে পরাশক্তিধর রুশ সেনাদের কাছ থেকে কিয়েভকে রক্ষা করতে পারবে ইউক্রেনীয় সেনারা?

এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা নিউজউইক ম্যাগাজিনকে বলেছেন, ‘বিমান ও আর্টিলারি হামলা শেষ হওয়ার পরেই স্থলপথে আসল যুদ্ধ শুরু হবে। আমার মনে হয়, দ্রুতই কিয়েভের পতন ঘটবে। ইউক্রেনের সেনাবাহিনী হয়তো একটু বেশিদিন লড়াই করতে পারবে, কিন্তু শেষ অবধি তারা টিকতে পারবে না।’

এদিকে শুক্রবার সকাল থেকেই কিয়েভে শোনা যাচ্ছে বোমাবর্ষণের শব্দ। ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, রুশ সৈন্যদের একটি মিসাইল প্রতিহত করেছে ইউক্রেনের অ্যান্টি-মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেম। কিন্তু নগরীর আরেক প্রান্তে রাশিয়ান মিসাইলের হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে একটি আবাসিক ভবন।

সংবাদমাধ্যম ডেইলি মেইল সূত্রে জানা গেছে, ভিন্ন একটি আক্রমণে ইউক্রেনের একটি এসইউ-২৭ জেট বিমান ভূপাতিত করেছে রাশিয়ার মিসাইল।

পূর্বের ডনবাসের পরে এবার উত্তর-পশ্চিমের বেলারুশ সীমান্ত দিয়ে ইউক্রেনে অভিযান শুরু করেছে রুশ বাহিনী। বৃহস্পতিবার থেকেই পশ্চিম ইউক্রেনের সীমান্তরক্ষীদের ঘাঁটিগুলিতে লাগাতার গোলা ও রকেট ছুঁড়তে শুরু করেছিল সৈন্যরা। শুক্রবার ভোররাত থেকে বেলারুশের মঝয়র সেনাঘাঁটি থেকে সীমান্ত পেরিয়ে রুশ ট্যাঙ্কবাহিনী ঢুকতে শুরু করে ইউক্রেনে।

যুদ্ধের দ্বিতীয় দিনে রাজধানী কিয়েভসহ ইউক্রেনের বিভিন্ন শহরে রাশিয়ার ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র হানাও অব্যাহত। যুদ্ধের দ্বিতীয় দিনে চলছে বিমান হামলাও। এরই মধ্যে ইউক্রেনের বিমানবাহিনী এবং এয়ার ডিফেন্স ইউনিটগুলোও সাধ্যমত প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা চালাচ্ছে।

এদিকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি পশ্চিমা নেতৃত্বদের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে জানিয়েছেন, ‘রুশ সৈন্যদের মুখে ইউক্রেনকে একা ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।’

এদিকে রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতের প্রথম দিনে নিহত ১৩৭ জন ইউক্রেনীয়কে নিজেদের ‘হিরো’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি। গতকাল মধ্যরাতে জাতির উদ্দেশ্যে প্রকাশিত এক ভিডিওতে তিনি এই কথা বলেন। তিনি আরও জানান, ইউক্রেন নতি স্বীকার করবে না, বরং শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত লড়াই করে যাবে।

জেলেনস্কি জানিয়েছেন, শত্রুসৈন্য ইতোমধ্যেই কিয়েভে ঢুকে পড়েছে। মার্কিন কর্মকর্তাদের আশঙ্কা, সপ্তাহখানেকের মধ্যেই কিয়েভকে চারদিক থেকে ঘিরে ফেলবে রাশিয়া।

এদিকে শুক্রবার চেরনোবিল পারমাণবিক শক্তি কেন্দ্র দখল করে নেওয়ার মাধ্যমে ইউক্রেন দখলের দিকে আরও এক ধাপ এগিয়ে গেছে রাশিয়া। ইউক্রেন সরকারের ঘনিষ্ঠ এক সূত্রে খবর পাওয়া গেছে, রাশিয়া যে আগামী ৯৬ ঘন্টার মধ্যে কিয়েভকে ঘিরে ফেলবে- এ ব্যাপারে তারা একমত। তবে তাদের বিশ্বাস, এখনই সরকারের পতন হবে না।

ডেইলি মেইল সূত্র আরও জানিয়েছে, মার্কিন সেক্রেটারি অব স্টেট অ্যান্টনি ব্লিংকেন বলেছেন, কিয়েভকে চারদিক থেকে ঘিরে ইউক্রেনীয় সৈন্যদের হয় আত্মসমর্পণ কিংবা নিশ্চিহ্নের পথে যেতে বাধ্য করবেন পুতিন। ফলে ইউক্রেনের পতন হতে এক সপ্তাহের বেশি লাগবে না।

এদিকে বৃহস্পতিবার রাতে ভ্লাদিমির পুতিনের সাথে কথা বলেছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাঁক্রো। তিনি পুতিনকে কিয়েভ দখল করা থেকে বিরত থাকতে বললে পুতিন তাকে যুদ্ধের পক্ষে এক ‘দীর্ঘ-ক্লান্তিকর’ যুক্তি শোনান।

ক্রেমলিন জানিয়েছে, ফরাসি প্রেসিডেন্টের উদ্যোগেই এই কলের আয়োজ়ন করা হয়। মাঁক্রো ও পুতিন একে অপরের সাথে যোগাযোগ বজায় রাখবেন বলে কথা দিয়েছেন।

৯০ দিনের মধ্যে দেশের নাগরিকদের নিরাপদে সরিয়ে নিতে একটি ফরমান স্বাক্ষর করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি। তবে ১৮-৬০ বছর বয়সী পুরুষদের দেশ ছাড়ার উপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।

রুশ সৈন্যরা চেরনোবিল দখলের পর এ ফরমান স্বাক্ষর করেন জেলেনস্কি। কিন্তু চেরনোবিলে নিউক্লিয়ার স্টোরেজের অবস্থা এখনো অজানা। ফলে রেডিয়েশন লিকের আশঙ্কা করা হচ্ছে যা পুরো ইউরোপের জন্য বিপদ ডেকে আনবে।

এরই ইউক্রেনের ওডেসা উপকূলে তুরস্কের একটি জাহাজ বোমার আঘাতে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে বলে দাবি করেছে তুরস্ক। তুরস্ক ন্যাটোর একজন সদস্য এবং তাদের আশঙ্কা, ইউক্রেন-রাশিয়া সংঘাত খুব দ্রুত ইউরোপের অন্য দেশগুলোতেও ছড়িয়ে পড়বে।

ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনকে কেন্দ্র করে সর্বশেষ রাশিয়ার উপর আরও কিছু নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। রাশিয়ার ব্যাংক, রাষ্ট্র-নিয়ন্ত্রিত কোম্পানি ও হাই-টেক খাতগুলোর উপর এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে। তবে আন্তর্জাতিক বাজারকে নির্বিঘ্ন রাখতে রাশিয়ান তেল ও গ্যাসকে নিষেধাজ্ঞার বাইরে রেখেছে আমেরিকা।

রাশিয়ান সৈন্যদের আক্রমণের মুখে রাজধানী কিয়েভ থেকে মাত্র ১৫ মাইল দূরে একটি প্রধান বিমানঘাঁটির নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে ইউক্রেনের সৈন্যরা। রাশিয়ার কিয়েভ দখলের আশঙ্কার মধ্যেই দেশে কারফিউ জারি করেছে ইউক্রেন সরকার এবং বেসামরিক নাগরিকদের বোমা থেকে বাঁচতে আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ডেইলি মেইল অনলাইনকে এক সূত্র জানায়, ‘তারা এখন কিয়েভে বোমা ফেলবে। সরকার আমাদেরকে আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে বলেছে।’

রুশ প্রতিরক্ষা বিভাগ জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার যুদ্ধের প্রথম দিনে স্থল, আকাশ এবং নৌপথে ইউক্রেনের উপর মোট ২০৩টি হামলা চালানো হয়েছে। ধ্বংস করা হয়েছে মোট ৮৩টি পূর্বনির্দিষ্ট লক্ষ্য। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এটিই রুশ ফৌজের বৃহত্তম অভিযান।

তবে মার্কিন কর্মকর্তাদের মতে, এই মুহূর্তে রাশিয়া যা করছে তা আক্রমণের প্রাথমিক পর্যায়মাত্র। রাশিয়ার ১৯০,০০০ সৈন্যের বেশিরভাগই এখনো রিজার্ভ হিসেবে আছে। তাদের লক্ষ্য, প্রথমে জনসংখ্যাবহুল প্রধান অঞ্চলগুলো দখলে নেওয়া এবং ইউক্রেন সরকারকে উচ্ছেদ করা।

ইউক্রেনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, প্রথম দিনের যুদ্ধে ১৩৭ জন নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন ৩০০ জন। সূত্র: ডেইলি মেইল

নয়া শতাব্দী/জেআই

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ