বিশ্বের সবচেয়ে সুরক্ষিত ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান হিসেবে সুনাম রয়েছে সুইস ব্যাংকের। হিসাবের পাশাপাশি হিসাবধারীর পরিচয় এবং অন্য যেকোনো তথ্যের সর্বোচ্চ গোপনীয়তা রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ সুইজারল্যান্ডের এই ব্যাংকটি। কিন্তু সেই সুইস ব্যাংকের ১৮ হাজারের বেশি হিসাবের নথি ফাঁস হয়েছে। সম্প্রতি ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, এসব ফাঁস হওয়া নথিতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের স্বৈরশাসক, দুর্নীতিবাজ গোয়েন্দা কর্মকর্তা, নিষেধাজ্ঞার কবলে থাকা ব্যবসায়ী, মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী, মাদক ও মানব পাচারকারীর অ্যাকাউন্টের তথ্য রয়েছে। তাদের অ্যাকাউন্টে জমা থাকা অর্থের পরিমাণ সব মিলিয়ে ১০০ বিলিয়ন ডলারের বেশি।
ক্রেডিট সুইচের এসব তথ্য ফাঁস করেছেন ব্যাংকটির এক স্বঘোষিত হুইসেলব্লোয়ার (গোপন তথ্য ফাঁসকারী)। তিনি ব্যাংকটির ১৮ হাজারের বেশি হিসাব সম্পর্কিত তথ্য জার্মান সংবাদ মাধ্যম সুইডডয়চে সেইটুংকে সরবরাহ করেন। এরপর সেসব নথি বিশ্লেষণের কাজে যুক্ত হয় অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের সংগঠন অর্গানাইজিং ক্রাইম অ্যান্ড করাপশন রিপোর্টিং প্রজেক্ট এবং নিউইয়র্ক টাইমস, গার্ডিয়ান, লা মঁদেসহ ৩৯ দেশের ৪৮টি সংবাদমাধ্যম।
গার্ডিয়ান জানায়, ফাঁস হওয়া এসব নথির মধ্যে ১৯৪০ এর দশক থেকে শুরু করে বর্তমান সময় পর্যন্ত তথ্য রয়েছে। এসব অ্যাকাউন্টের ৩০ হাজারের বেশি মালিকের মুখোশ উন্মোচন করা হয়েছে। গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়, ক্রেডিট সুইসের ১৫ লাখ গ্রাহকের মধ্যে কেবল একটি অংশের তথ্যই এসেছে ফাঁস হওয়া নথিতে। এসব অ্যাকাউন্টের মালিকদের অনেকে এরই মধ্যে মারা গেছেন, অনেক অ্যাকাউন্ট বন্ধও হয়ে গেছে। অনেক অ্যাকাউন্ট এখনো চালু রয়েছে।
ক্রেডিট সুইস ব্যাংকের যেসব গ্রাহকের তথ্য ফাঁস হয়েছে, তাদের মধ্যে রয়েছেন জর্ডানের রাজা দ্বিতীয় আবদুল্লাহ এবং মিসরের সাবেক একনায়ক হুসনি মোবারকের দুই ছেলে। রয়েছেন পাকিস্তানের সাবেক গোয়েন্দা প্রধান, যিনি ১৯৮০-এর দশকে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশ থেকে শত শত কোটি ডলার আফগানিস্তানের মুজাহিদীনদের পাঠিয়েছিলেন।
সুইস সিক্রেটস অনুসন্ধানে আরো অন্তত ৪০ জনের নাম পেয়েছেন সাংবাদিকরা, যারা বিভিন্ন সময়ে ডজনখানেক দেশের গোয়েন্দা দফতরের কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তাদের মধ্যে ভেনেজুয়েলার সাবেক আর্মি ক্যাপ্টেন কার্লোস লুই অ্যাগুইলেরা বোর্হাস, ইউক্রেনের সিকিউরিটি সার্ভিসের সাবেক প্রধান ভ্যালেরি খোরশকোভস্কি, মিসরের সাবেক গুপ্তচর আশরাফ মারওয়ানের নাম রয়েছে। ভেনেজুয়েলা, ইউক্রেন, জার্মানি, নাইজেরিয়া, উজবেকিস্তান, ইরাক, জর্ডান, ইয়েমেনের বেশ কয়েকজন গোয়েন্দা কর্মকর্তার নামও উঠে এসেছে।
ফাঁস হওয়া নথি বিশ্লেষণ করে আরো দেখা যায়, শুধু ধনকুবেরদেরই সেবা দিচ্ছে না ক্রেডিট সুইস ব্যাংক, নানা মাধ্যম থেকে সতর্কতা জারি করার পরও বিভিন্ন মানুষকে সেবা দিয়েছে তারা (দ্য গার্ডিয়ান)।
নয়া শতাব্দী/এসএম
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ