মহামারি করোনাভাইরাসের ডেল্টা সংক্রমণের ক্ষেত্রেও মৃত্যু ঠেকাতে টিকা ৯৯ শতাংশ কার্যকর ভূমিকা রাখছে বলে ভারতীয় গবেষকরা জানিয়েছে। পুনেভিত্তিক ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজির (এনআইভি) গবেষকরা এমন দাবি করেছেন।
ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়ার গতকাল শনিবারের এক প্রতিবেদনে এনআইভির গবেষকদের গবেষণার এই ফল তুলে ধরা হয়েছে। টিকাগ্রহণকারীদের সংক্রমণ এবং মৃত্যু নিয়ে কোভিড-১৯ মহামারিকালে এটাই ভারতে সবচেয়ে বড় গবেষণা বলে সংবাদপত্রটি জানিয়েছে। প্রকাশিতব্য এই গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, ভারতে সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ের মূল কারণ হচ্ছে ডেল্টা, যে ধরনটি ২০২০ সালের অক্টোবরে ভারতের বিদর্ভে প্রথম শনাক্ত হয়। গবেষণার জন্য গত মার্চ থেকে জুন এই তিন মাসের মধ্যে তিনটি রাজ্য- মহারাষ্ট্র, কর্নাটক, পশ্চিমবাংলা বিভিন্ন রাজ্য থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এরপর সেই সব নমুনার জিন বিশ্লেষণ করা হয়। এ গবেষণায় এনআইভির গবেষকরা যেসব নমুনার জিনোম সিকোয়েন্সের ভিত্তিতে ফলাফল পেয়েছেন, তাতে করোনাভাইরাসের আলফা, কাপ্পা, ডেল্টার সঙ্গে ডেল্টা প্লাস নমুনাও রয়েছে। এই গবেষণায় তুলনামূলক কম বয়সীদের গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। গবেষণা চালানো ৪৪ শতাংশের বয়স ছিল ৩১ থেকে ৫৬ বছর বয়সী। আর ৬৫ শতাংশই পুরুষ। গবেষণায় আসা ব্যক্তিদের ৭১ শতাংশই ছিল সংক্রমণের লক্ষণযুক্ত। এরমধ্যে ৬৯ শতাংশের উপসর্গ ছিল জ্বর, গায়ে ব্যথা, মাথা ব্যথা, সর্দি ছিল ৫৬ শতাংশের। ৪৫ শতাংশের কাশি এবং ৩৭ শতাংশের গলা ব্যথার মতো উপসর্গ ছিল।
গত বছর করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে স্বস্তির নিঃশ^াস ফেলা ভারতের নাভিঃশ্বাস ওঠে চলতি বছর দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রকোপে। গত এপ্রিলে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা নজিরবিহীনভাবে বেড়ে গেলে প্রবল চাপে পড়ে দেশটি। এরপর ভারত টিকাদানের ওপর গুরুত্ব বাড়ায়। নিজেদের চাহিদা মেটাতে পাশাপাশি কোভিড টিকা রফতানিতে নিষেধাজ্ঞাও দেয় বিশ্বে টিকা উৎপাদনকারী সর্ববৃহৎ এ দেশটি।
এনআইভির গবেষক ড. প্রজ্ঞা যাদব টাইমস অব ইন্ডিয়াকে বলেন, ‘গবেষণায় যে গুরুত্বপূর্ণ দিকটি আমরা দেখতে পেয়েছি, তা হলো মৃত্যু ঠেকাতে টিকা ৯৯ শতাংশ কার্যকারিতা দেখাচ্ছে। এমনকি তা অতিসংক্রমণশীল ডেল্টার দাপটের মধ্যেই।’ ড. প্রজ্ঞা আরো বলেন, ‘গবেষণায় দেখা গেছে, অধিকাংশই কোভিড-১৯ রোগী ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত। এদের মাত্র নয় শতাংশকে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হয়েছে। আর মৃত্যু হয়েছে মাত্র শূন্য দশমিক ৪ শতাংশের।’
ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, গতকাল শনিবার পর্যন্ত ৪ কোটি ডোজ টিকা দেয়া হয়েছে। যারা অর্থ, ১৩৬ কোটি মানুষের দেশ ভারতে ২ কোটির মতো মানুষ টিকার কমপক্ষে একটি ডোজ করে পেয়েছেন। শনিবার ভারতে আরো ৩৮ হাজার নতুন রোগী শনাক্তের খবর পাওয়া যায়। এ নিয়ে দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যা পৌঁছেছে ৩ কোটি ১০ লাখ ৬৪ হাজারে।
নয়া শতাব্দী/এসইউ
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ