ঢাকা, রোববার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬
বিবিসির সঙ্গে সাক্ষাৎকারে মুসকান খান

‘যখন ভয় পাই, তখন আল্লাহর নাম নিই’

প্রকাশনার সময়: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০৮:৪৮

‘আমি আল্লাহু আকবর বলেছিলাম কারণ আমি খুব ভয় পেয়েছিলাম এবং যখন আমি ভয় পাই, তখন আল্লাহর নাম নিই।’ কথাগুলো বলছিলেন কর্নাটকের মান্ডা জেলার একটি প্রি-ইউনিভার্সিটি কলেজের বি.কম দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী মুসকান খান।

গত দুই দিনে মুসকানের একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। যাতে দেখা গেছে যে তিনি হিজাব পরে তার স্কুটি পার্ক করে ক্লাসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন; কিন্তু বেশ কিছু মানুষ তাকে অনুসরণ করছে।

দেখা যায়, গেরুয়া রঙের স্কার্ফ পরিহিত একদল ব্যক্তি ‘জয় শ্রী রাম’ স্ল্লোগানে ছাত্রীটির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে আর চিৎকার করছে। ওই ছাত্রীও তখন ভিড়ের দিকে ফিরে দু’হাত তুলে ‘আল্লাহু আকবার’ বলে চিৎকার করতে থাকেন। ওই ঘটনা আর ভিডিওটি পুরো দেশেই আলোচনার ঝড় তুলেছে। আর এরপর কর্নাটকের আলোচিত ওই শিক্ষার্থী মুসকান খানের সঙ্গে কথা বলেছে বিবিসি হিন্দি সার্ভিস।

আপনার সঙ্গে সেদিন কী হয়েছিল?

আমি আগে থেকে কিছুই জানতাম না । সবসময় যেভাবে কলেজে যাই, সেভাবেই গেলাম। বাইরে থেকে আসা একদল লোক সেখানে বললো যে বোরকা পরে কলেজের ভেতরে যাবে না। কলেজে যেতে হলে বোরকা ও হিজাব খুলে ভেতরে যেতে হবে। তুমি যদি বোরকা পরে থাকতে চাও, তবে বাড়ি ফিরে যাও।

আমি ভিতরে এলাম। ভেবেছিলাম চুপচাপ চলে যাব; কিন্তু সেখানে অনেক স্ল্লোগান উঠছিল। ‘বোরকা গাড়’, ‘জয় শ্রী রাম’-এর মতো স্ল্লোগান উঠছিল। আমি ভেবেছিলাম ক্লাসে যাব। কিন্তু ছেলেগুলো আমাকে এমনভাবে অনুসরণ করছিল যেন তারা সবাই আমাকে আক্রমণের চেষ্টা করছে। তারা ছিল ৪০ জনের মতো। আমি ছিলাম একা। কারো মধ্যে আমি মনুষ্যত্ব লক্ষ্য করিনি। হঠাৎ তারা আমার কাছে এসে চিৎকার করতে লাগল। কারো কারো হাতে ছিল কমলা রঙের স্কার্ফ। আর আমার মুখের সামনে এসে স্কার্ফ দোলাতে দোলাতে বলতে লাগল, ‘জয় শ্রী রাম, চলে যাও, বোরকা খুলে ফেল।’

আপনি কতদিন ধরে হিজাব পরছেন?

প্রি-ইউনিভার্সিটিতে যাওয়ার পর থেকে আমি হিজাব পরে আসছি। কলেজে কোনো সমস্যা হয়নি। সবকিছু আগের মতোই ছিল। আমরা হিজাব পড়ে ক্লাসে যাচ্ছিলাম। আমরা বোরকা পরি না। শুধু হিজাব পরি। চুল আড়াল করে ক্লাসে যাই। কিন্তু ওই লোকেরা আমাকে ক্যাম্পাসে ঢুকতেও দিচ্ছিল না। তারা অনেক বহিরাগত ছিল এবং কলেজের ছাত্র ছিল কম। বেশিরভাগই ছিল বহিরাগত।

ওই লোকগুলো কী বলছিল?

তারা বলছিলেন বোরকা খুলে ফেল, না হলে কলেজে যেতে পারবে না। তারা সবাই আমাকে ভয় দেখাচ্ছিল। আমার সামনে চার মেয়ে এসেছিল। গেট তালাবদ্ধ ছিল। তারপর কোনোমতে প্রিন্সিপাল এলেন। অধ্যক্ষ ও শিক্ষকরা আমাকে রক্ষা করেন। ছেলেরা তাদের সঙ্গে কথা বলতে ভেতরে গিয়েছিল। কিন্তু বেরিয়ে এসে একই কাজ করল। আমি কাঁদিনি। আমি এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছি।

আপনি কী বললেন...?

আমি বললাম ‘আল্লাহু আকবার’। কারণ আমি ভয় পেয়েছিলাম। ভয় পেলে আল্লাহর নাম নিই। আল্লাহর নাম নিলেই আমার সাহস বেড়ে যায়।

হিজাব সম্পর্কে আপনার মতামত কী?

কলেজে আমাদের প্রিন্সিপাল নিজেই বলেছিলেন যে তুমি হিজাব পরে আসতে পার। এই বাইরের লোকগুলো এসে এমন চমক তৈরি করছে। তিনি নিজেই বললেন, আগে যেভাবে আসতে, এসো। কোনো সমস্যা নেই।

কার হিজাব পরা উচিত বলে আপনি মনে করেন?

হ্যাঁ, আমার এটি পরিধান করা উচিত।

এ বিষয়ে আপত্তি থাকলে আপনার মতামত কী হবে?

ভারতের সংবিধানে আমার বিশ্বাস আছে। ইনশাআল্লাহ, আমরা হাইকোর্টের আদেশের অপেক্ষায় আছি।

এই মুহূর্তে যে হিজাব বনাম গেরুয়া বিতর্ক চলছে তা কি অন্যান্য ছাত্রদের সঙ্গে আপনার সম্পর্ককে প্রভাবিত করবে?

আমি এখানে হিন্দু বা মুসলিম কোনো জাতপাত ছড়াচ্ছি না। আমি শুধু আমার শিক্ষার জন্য, আমার অধিকারের জন্য দাঁড়িয়েছি। আমরা হিজাব পরছি বলে আমাদের ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না। আমরা বছরের পর বছর ধরে এটি পরছি। এটি নতুন কিছু নয়। কিন্তু এই লোকগুলো এমনভাবে বলছে যে তুমি যদি এটা পরে আস, তাহলে আমরা এটা (গেরুয়া) পরে আসব। ছেলেরা আমার কলেজের প্রিন্সিপালকে বলছে, সে যদি বোরকা পরে আসে, তাহলে আমরাও এসব সরাব না। (গেরুয়া, গামছা-পাতা ইত্যাদি)।

আমাদের কোনো সমস্যা নেই। তারা যে কোনোভাবে আসতে পারে। আমাদের শুধু হিজাব পরার অনুমতি দরকার। যেভাবেই তারা আসুক না কেন, তা নিয়ে আমাদের মাথাব্যথা নেই। আমাদের শুধু দরকার শিক্ষা। আমাদের অধ্যক্ষ আমাদের সঙ্গে আছেন। শিক্ষকরা আমাদের সঙ্গে আছেন। বাইরে থেকে এসে কিছু লোক কেবল নজর কাড়ার চেষ্টা করছে। আর সংবিধানের প্রতি আমাদের আস্থা আছে। হাইকোর্ট থেকে নেতিবাচক কিছুই আসবে না।

সূত্র: বিবিসি

নয়া শতাব্দী/এসএম

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ