ঢাকা, রোববার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

কর্নাটকে যেভাবে হিজাব আন্দোলনের শুরু

প্রকাশনার সময়: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৬:৫৫

ভারতে হিজাব আন্দোলন করে বিশ্বজুড়ে ভাইরাল ভারতের কর্ণাটক রাজ্যের শিক্ষার্থী বিবি মুসকান খান। ওই শিক্ষার্থী মান্দিয়া প্রাক বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের বাণিজ্য শাখার ছাত্রী। স্বভাবতই প্রশ্ন উঠেছে কেন এই আন্দোলন, কারা এর পেছনে বা কোথায় এবং কখন এর সূত্রপাত?

আনন্দবাজার খবর সূত্রে জানা যায়, ‘সমতা, অখণ্ডতা এবং জনশৃঙ্খলা’ বজায় রাখার দোহাই দিয়ে স্কুল-কলেজে হিজাব বাতিল করার সরকারি সিদ্ধান্ত থেকেই এই আন্দেলনের সূত্রপাত। যে সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে কর্ণাটক হাইকোর্টে মামলা করেছেন উদুপির একটি সরকারি কলেজের পাঁচ ছাত্রী।

আনন্দবাজার আর এক প্রতিবেদনে জানিয়েছেন, কর্ণাটকের উদুপি জেলা প্রশাসন সম্প্রতি হিজার পরে ছাত্রীদের ক্লাসে যাওয়া নিয়ে কিছু বিধিনিষেধ জারি করে। নির্দেশিকায় বলা হয়, ‘হিজাব পরে ছাত্রীরা কলেজ ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে পারবেন না। স্কার্ফ পরে কলেজ ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে পারবেন। তবে সে স্কার্ফের রঙ হবে দোপাট্টার রঙে। ক্যাম্পাস ও কলেজ ক্যান্টিনে আর অন্য কোনও পোশাক পরতে দেয়া হবে না।’

জেলা প্রশাসন কর্তৃক এমন ঘোষণার পরেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন সেখানকার শিক্ষার্থীরা। হিজাব পরে কলেজ ক্যাম্পাসে প্রবেশ এবং ক্লাস করার অধিকারের দাবিতে আন্দোলন প্রথম শুরু করেন মুসলিম কলেজছাত্রীরা। পরে তাতে যোগ দিয়েছে ছাত্রসমাজও। ওই আন্দোলনের জেরে ক্রমে অশান্ত হচ্ছে রাজ্যটির বিভিন্ন এলাকা।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে, হিজাব পরার অধিকারের দাবিতে গত শনিবার কর্ণাটকের উপকূলীয় শহর কুন্দাপুরের ভান্ডারকরস আর্টস অ্যান্ড সায়েন্স ডিগ্রি কলেজের গেটে বিক্ষোভ করেন সংখ্যালঘু ছাত্রীরা। অভিযোগ রয়েছে- কলেজের নিরাপত্তারক্ষীরা ছাত্রীদের হিজাব পরে ক্যাম্পাসে ঢুকতে বাধা দিয়েছেন। সে সময় স্থানীয় কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মুসলিম ছাত্ররাও বিক্ষোভে যোগ দেন। এর আগে গত শুক্রবার কুন্দাপুরের অন্য একটি কলেজের গেটে ছাত্রীদের হিজাব-বিক্ষোভের সমর্থনে জড়ো হয়েছিলেন বেশ কিছু কলেজছাত্র।

যদিও এমন পরিস্থিতিতে কর্ণাটকের শিক্ষামন্ত্রী ও বিজেপি নেতা বি সি নাগেশের দাবি- বিক্ষোভকারী ছাত্রীরা আগে হিজাব পরতেনই না। প্রশাসনিক নির্দেশিকা জারির পরে অশান্তি বাঁধানোর জন্যই তাঁরা বিক্ষোভ শুরু করেছেন। প্রয়োজনে এ বিষয়ে প্রশাসনিক হস্তক্ষেপের হুঁশিয়ারিও দেন তিনি।

এদিকে সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, একজন ছাত্রী একটি স্কুটি চালিয়ে কলেজে প্রবেশ করছেন। এসময় তাকে প্রবেশ করতে দেখে গেরুয়া ওড়না পরা একদল তরুণ তাকে উদ্দেশ্য করে- জয় শ্রীরাম স্লোগান দিতে শুরু করে। একসময় শত শত তরুণের সামনে একাই প্রতিবাদ জানিয়ে তাদের স্লোগানের জবাবে ওই ছাত্রী ‘আল্লাহু আকবার’ বলে স্লোগান দেন। এরপর কলেজ চত্বরে থেমে এক ব্যক্তিকে উদ্দেশ্য করে ওই ছাত্রী বলেন, ‘আমি বোরকা পরলে সমস্যা কী?’

ঘটনার বিবরণ দিয়ে গণমাধ্যমকে মুসকান বলেন, ‘গত সপ্তাহ থেকে এটা শুরু হয়েছে। আমি বরাবরই বোরখা আর হিজাব পরতে অভ্যস্ত। ক্লাসে বোরখা খুলে হিজাব পরে নেই। হিজাব এখন যেন আমার অঙ্গ হয়ে গিয়েছে। কলেজের প্রিন্সিপালও কোনও দিন কিছু বলেননি। বহিরাগতরা এটা শুরু করেছে। এই পরিস্থিতিতে প্রিন্সিপাল আমাদের বোরখা আনতে মানা করেছেন। কিন্তু হিজাবের দাবিতে আমাদের প্রতিবাদ জারি থাকবে।’ মুসকান জানান, ‘আমার হিন্দু বন্ধুরাও আমার সঙ্গে আছে। সকাল থেকে একের পর এক ফোন পাচ্ছি। আমি আশ্বস্ত।’

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে মুসকান এনডিটিভির এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘আমি ভীত ছিলাম না। আমি সেখানে গিয়েছিলাম অ্যাসাইনমেন্ট জমা দিতে। কিন্তু তারা আমাকে ভেতরে যেতে দিচ্ছিল না। কারণ, আমি বোরকা পরে গিয়েছিলাম। কোনোভাবে একসময় আমি ভেতরে প্রবেশ করি। এ সময় তারা আমাকে উদ্দেশ্য করে জয় শ্রীরাম স্লোগান দিচ্ছিল। তখন আমিও আল্লাহু আকবার বলে চিৎকার শুরু করি।’

নয়া শতাব্দী/জেআই

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ