ঢাকা, রোববার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

জরুরি অবস্থার মেয়াদ বাড়াল জান্তা

প্রকাশনার সময়: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০৪:৫৩

মিয়ানমারের সেনা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলকারী সামরিক বাহিনী দেশটিতে জরুরি অবস্থার মেয়াদ ৩১ জুলাই পর্যন্ত বাড়িয়েছে।

মঙ্গলবার (১ ফেব্রুয়ারি) দেশটির জাতীয় প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা কাউন্সিল এক বিবৃতিতে জানিয়েছে এ তথ্য।

জান্তাপ্রধান মিন অং হ্লেইংয়ের অনুরোধে ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট মিন্ট সোয়ে এ বিষয়ক একটি আদেশে স্বাক্ষর করেছেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে কাউন্সিলের বিবৃতিতে।

মঙ্গলবার মিয়ানমারের রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত টেলিভিশন চ্যানেল এমআরটিভিতে দেওয়া এক ভাষণে জান্তাপ্রধান এ সম্পর্কে বলেন, ‘সহিংসতা ও সংঘাত দূর না হলে দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক পর্যায়ে পৌঁছানো সম্ভব নয়। কায়াহ, শিন, সাগাইংসহ দেশের বিভিন্ন প্রদেশ ও অঞ্চলে এখনও সহিংসতা চলছে। আমরা সেইসব অঞ্চলের সংঘাত নিয়ন্ত্রণে আনার সর্বাত্মক চেষ্টা করছি।’

২০২১ সালের ১ ফেব্রয়ারি ক্ষমতা দখলের পর মিন অং হ্লেইং প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন- পরিস্থিতি শান্ত হলেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে মিয়ানমারে। তারপরের বার ঘোষণা দেন- ২০২২ সালের আগস্টে নির্বাচন হবে।

কিন্তু মঙ্গলবারের ভাষণে এ বিষয়ে কিছু বলেননি হ্লেইং।

দীর্ঘ কয়েক দশক সামরিক শাসনাধীনে থাকার পর ২০০৮ সালের সংশোধিত সংবিধান অনুযায়ী ২০১০ সাল থেকে জাতীয় নির্বাচন শুরু হয় মিয়ানমারে। সংশোধিত সংবিধানে দেশটির পার্লামেন্টের মোট আসনের ২৫ শতাংশ ও দেশের গুরুত্বপূর্ণ ৩ টি মন্ত্রণালয় সামরিক বাহনীর জন্য বরাদ্দ রাখা হয়।

কিন্তু ২০২০ সালের নভেম্বরের নির্বাচনে মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চি নেতৃত্বাধীন দেশটির রাজনৈতিক দল এনএলডির বিপুল বিজয় সাংবিধানিক সেই হিসাব ওলট-পালট করে দেয়। ভূমীধস সেই জয়ে জাতীয় পার্লামেন্টের ৮৩ শতাংশ আসনে এনএলডি প্রার্থীরা বিজয়ী হন।

ফলে, নির্বাচনের পর বেসামরিক প্রশাসনের সঙ্গে ক্ষমতার ভাগাভাগির প্রশ্নে অস্বস্তি শুরু হয় মিয়ানমার সেনাবাহিনীতে। এর প্রেক্ষিতেই নির্বাচনে ভোট জালিয়াতি হয়েছে বলে অভিযোগ তুলে ভোটার তালিকা প্রকাশে নির্বাচন কমিশন বরাবর দাবি জানায় সেনাবাহিনী।

সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে এ বিষয়ে বলা হয়, নভেম্বরের নির্বাচনে দেশজুড়ে অন্তত ৮৬ লাখ ভোট জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে বলে তথ্য রয়েছে তাদের কাছে। এসব তথ্য যাচাই-বাছাই করার জন্য ভোটার তালিকা প্রয়োজন।

তবে নির্বাচন কমিশন সেই তালিকা প্রকাশ করেনি। সেনাবাহিনীর অভিযোগ খারিজ করে দিয়ে মিয়ানমারের নির্বাচন কমিশন এ বিষয়ে বলেছে, যে অনিয়মের অভিযোগ তোলা হয়েছে তার কোনো বাস্তব ভিত্তি নেই। নির্বাচনের যথার্থ্যতা বা সুষ্টুতা নিয়ে প্রশ্ন করার মতো কোনও অনিয়ম গত নভেম্বরের নির্বাচনে ঘটেনি।

তারপরই ১ ফেব্রুয়ারি সেনাপ্রধান মিন অং হ্লেইংয়ের নেতৃত্বে অভ্যুত্থান ঘটায় সেনা বাহিনী। বন্দি করা হয় মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী অং সান সু চি ও তার দল এনএলডির বিভিন্ন স্তরের কয়েক হাজার নেতাকর্মীকে।

এদিকে সামরিক বাহিনীর অভ্যুত্থানের পরই ক্ষোভে ফুঁসে ওঠেন দেশটির গণতন্ত্রকামী জনগণ। রাজধানী নেইপিদো, বৃহত্তম শহর ইয়াঙ্গুন, দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মান্দালয়সহ দেশজুড়ে শুরু হয় জান্তাবিরোধী বিক্ষোভ।

বিক্ষোভের প্রথম পর্যায়ে তা দমাতে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা লাঠি, রবার বুলেট ও জলকামান ব্যবহার করলেও সামরিক বাহিনীর নির্দেশে এক পর্যায়ে প্রাণঘাতী আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার শুরু করে।

দেশটির রাজনৈতিক কারাবন্দিদের সহায়তা দানকারী বেসরকারি সংস্থা অ্যাসিসটেন্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনার্সের তথ্য অনুযায়ী, অভ্যুত্থানের পর গত এক বছরে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে নিহতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ১ হাজার ৫০০; আর বর্তমানে রাজনৈতিক কারণে মিয়ানমারের কারাগারগুলোতে বন্দি আছেন ১২ হাজারেরও বেশি কয়েদি। সূত্র: ব্লুমবার্গ

নয়া শতাব্দী/জিএস

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ