আফগানিস্তানে টেলিভিশন কার্যক্রম কীভাবে চলবে, তা নিয়ে ৮ নির্দেশনা দিয়ে নতুন নিয়ম জারি করেছে তালবান সরকার। এর অংশ হিসেবে নাটকে নারীদের উপস্থিতি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তবে দেশটির নারীদের সাংবাদিকতা এখনো নিষিদ্ধ করা না হলেও টেলিভিশনের পর্দায় হাজির হওয়ার সময় তাদের ও উপস্থাপিকাদের হিজাব পরার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
সংবাদ মাধ্যম বিবিসি অনলাইনের গতকালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তবে এই নারী সাংবাদিক ও উপস্থাপিকাদের মুখ ঢাকা বোরকা পরতে হবে, না শুধু মাথা ঢাকলেই চলবে- তালেবানের নতুন নির্দেশিকায় এ বিষয়টি স্পষ্ট করা হয়নি। তবে এমন নির্দেশনা প্রসঙ্গে আফগান সাংবাদিকরা বলেছেন, তালেবানের এ নতুন নিয়মের মধ্যে কিছু বিষয় অস্পষ্ট হওয়ায় এর ব্যাখ্যার প্রয়োজন আছে।
যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো মিত্রদের সেনা প্রত্যাহারের মধ্য দিয়ে গত ১৫ আগস্ট দেশাটির কট্টর ইসলামপন্থি গোষ্ঠী তালেবান আবারো আফগানিস্তানের ক্ষমতায় ফেরে। দুই দশক পর আবারো কাবুলের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে তারা ঘোষণা দেয়, তাদের শাসনে ‘শরিয়া আইন অনুযায়ী’ নারীরা অধিকার পাবে। এর পর থেকেই দেশটির নারীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ ও আতঙ্কের সৃষ্টি হয়। আফগান নারী রাজনীতিবিদ ও বিচারপতিদের অনেকেই দেশ ছাড়েন। পাশাপাশি নারী ক্রীড়াবিদ, অভিনয় শিল্পী, সাংবাদিক, অধিকার কর্মীদের অনেকেই চলে যান আত্মগোপনে। এদিকে, বিবিসি জানিয়েছে, আফগান টেলিভিশন স্টেশনগুলোর জন্য যে নতুন নির্দেশনা জারি করেছে তালেবান, সেখানে মোট আটটি বিধি-নিষেধ দেয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, শরিয়া আইন বা আফগান ‘মূল্যবোধের’ বিরুদ্ধে যায়- এমন চলচ্চিত্র টেলিভিশনে দেখানো যাবে না। এমন কোনো ভিডিও দেখানো যাবে না, যেখানে পুরুষের শরীরের ‘ব্যক্তিগত’ কোনো অংশ প্রকাশ্যে আসে।
কমেডি কিংবা বিনোদনমূলক অনুষ্ঠানে এমন কিছু দেখানো যাবে না, যাতে ধর্মের অবমাননা হয় বা আফগানদের জন্য আপত্তিকর বলে বিবেচিত হতে পারে। তালেবান আরো বলেছে, বিদেশি সাংস্কৃতিক মূল্যবোধের প্রচার করে- এমন বিদেশি চলচ্চিত্রও আফগান টেলিভিশনে সম্প্রচার করা যাবে না।
বিবিসি লিখেছে, আফগানিস্তানের টেলিভিশন স্টেশনগুলো যেসব নাটক প্রচার করে, তার বেশিরভাগই বিদেশি। অনেক ক্ষেত্রেই সেসব নাটকে প্রধান চরিত্রে থাকে নারীরা। এ প্রসঙ্গে দেশটির সাংবাদিকদের একটি সংগঠন হুজ্জাতুল্লাহ মুজাদ্দেদির একজন সদস্য বিবিসিকে বলেছেন, নতুন এ বিধি-নিষেধ ছিল ‘অপ্রত্যাশিত’। তার ভাষায়, ওই নির্দেশনার কিছু নিয়ম বাস্তবসম্মত নয়। ফলে এটা কার্যকর করা হলে টেলিভিশন সম্প্রচারই বন্ধ হয়ে যেতে পারে। তবে ইসলামপন্থি এ গোষ্ঠীটি এখন ধীরে ধীরে তাদের পুরোনো সেই কঠোর নিয়মের দিকেই এগিয়ে যাচ্ছে বলে আশঙ্কা অনেকের।
নয়া শতাব্দী/জেআই
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ