ঢাকা, শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

বছরে ৪২ দিন কথা বলেন না ৯ গ্রামের মানুষ!

প্রকাশনার সময়: ১৮ নভেম্বর ২০২১, ২২:১৩

কারো সঙ্গে ঝগড়া কিংবা অভিমান হলে আমরা সাধারণত কথা বলা বন্ধ করে দেই। তবে সেটা কত দিনের জন্য? স্বাভাবিকভাবে এত মানুষের ভিড়ে একজনের সঙ্গে হয়তো কথা না বলে থাকা যায়। তাই বলে পুরো গ্রামই যদি কথা না বলে? তাও আবার একদিন দু’দিনের জন্য নয়, টানা ৪২ দিন!

হ্যাঁ প্রতি বছরের জানুয়ারির ১৪ থেকে ফেব্রুয়ারির ২৫ তারিখ পর্যন্ত ভারতের হিমাচল প্রদেশের মানালির কুলু জেলার ৯ গ্রাম উঝির গোশাল, সোলাং, শানাগ, কোঠি, পালচান, রুয়ার, কুলং, মাঝাচ ও বুড়ুয়া গ্রামের বাসিন্দারা কোন কথাই বলেন না। সোলাং ও রুয়ার মতো গ্রামে আবার চুপ থাকার সঙ্গে সঙ্গে বন্ধ থাকে কৃষিকাজও!

মাঘ মাসে মকর সংক্রান্তির সময় থেকে এই রীতি চালু হয়; কিন্তু ৪২ দিন একটানা কেন চুপ করে থাকেন এই গ্রামগুলোর বাসিন্দারা? কারও মতে, এই সময় গভীর ধ্যান করে ঈশ্বর স্বর্গের পথে ফিরে যান। স্বর্গে যাওয়ার পথে অসুবিধার মুখে যাতে না পড়েন, তাই এই রীতি। তবে এ নিয়ে পৌরাণিক মতও রয়েছে। বিপাশা নদীর পাশে ঋষি গৌতম তপস্যা করছিলেন।

তার তপস্যা যাতে ভঙ্গ না হয়, তাই নাকি এই ব্যবস্থা। বহু প্রাচীন একটি মন্দিরও রয়েছে এখানে। মকর সংক্রান্তির দিন লোহিতে পূজার্চনার পর বন্ধ করে দেয়া হয় মন্দির। গৌতম ঋষি ছাড়াও বেদব্যাস ও কাঞ্চন নাগের মূর্তিও রয়েছে এই মন্দিরে। মানালির গোশাল গ্রামের মন্দিরটি এই সময়ে পর্যটকদের জন্যও বন্ধ থাকে। মন্দিরে কোনো রকম পূজাও হয় না, ভারতীয় সংবাদ সংস্থাকে এমনটাই জানান পুরোহিত।

ভারতের একটি সংবাদ মাধ্যমকে উঝি উপত্যকার বাসিন্দা সুরেশ কুমার বলেন, ‘আমাদের দেবতার প্রতি বিশ্বাস আছে, তাই উপত্যকার মানুষ যুগ যুগ ধরে এই ধর্মীয় আচার পালন করে আসছে। ওই ৪২ দিন আমরা আমাদের বাড়িতে রেডিও এবং টেলিভিশন সেট বন্ধ করে দেই এবং গ্রামের চত্বরে মোবাইল ফোন সাইলেন্ট মুডে রাখি।’ শানাগ পঞ্চায়েতের বাসিন্দা প্রতাপ ঠাকুর বলেছেন, ‘কথিত আছে যে মকর সংক্রান্তিতে এক মাসেরও বেশি সময় ধরে স্বর্গে দেবতাদের সমাবেশ শুরু হয় এবং আমাদের দেবতা গৌতম ঋষিও সভার জন্য চলে যান।

তিনি ৪২ দিন পর ফিরে আসেন এবং বছরের ভবিষ্যদ্বাণী করেন। এই সময়ের মধ্যে, তিনি গ্রামগুলোতে নীরবতা চান। তাই এ সময়ে মন্দিরে কোনো পূজা হয় না এবং দেবতার প্রত্যাবর্তন না হওয়া পর্যন্ত তা বন্ধ থাকে। মেঝেতে কাদা ছড়িয়ে মন্দিরটি বন্ধ করে দেয়া হয়।

এটা বিশ্বাস করা হয় যে, যখন মন্দিরটি আবার খোলা হয়, যদি কাদার ওপর একটি ফুল আসে, এটি গ্রামবাসীদের জন্য সুখের প্রতীক। যদি কাঠকয়লা দেখা যায়, তবে এটি ইঙ্গিত দেয় যে গ্রামে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটবে এবং আগামী এক বছর ফসল ভালো হবে না।’

অবশ্য বিজ্ঞানীরা বলছেন ভিন্ন কথা। তারা বলেছেন, বরফ ঢাকা এই জায়গাগুলোতে রোদের আভাস মিললে তবেই খোলে মন্দির। এতটাই বেশি বরফ পড়ে এই জায়গাগুলোতে যে, শীতকালে কর্মক্ষমতাই থাকে না স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে। বেশিরভাগ সময়টাই প্রচণ্ড ক্লান্ত লাগে। তাই কথা বলার বা বাড়ি হতে বেরোনোর সুযোগ প্রায় থাকে না। তবে চুপ করে বসে থাকলেও গ্রামের মানুষ এই সময় হেডফোনে গান শোনেন, বেড়াতে যান, বাড়ির কাজ-কর্ম করেন। এই সময়ে কোনো পর্যটককেও কথা বলার কোনো সুযোগই দেন না গ্রামের বাসিন্দারা।

নয়া শতাব্দী/এম

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ