ঢাকা, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

৮০০ কোটি মানুষের অক্সিজেন আছে চাঁদে!

প্রকাশনার সময়: ১৮ নভেম্বর ২০২১, ২১:৩০

মহাকাশের অজানা রহস্যের অনুসন্ধানই শুধু নয়, বর্তমানে মহাকাশযাত্রার আরো একটি দিক ক্রমশ ফুটে উঠছে। সেটা আর কিছু নয়, এই বিষাক্ত পৃথিবী ছেড়ে অন্য কোথাও যদি মানুষের বসতি গড়ে তোলা যায়! তবে তার জন্য সবার আগে প্রয়োজন পর্যাপ্ত অক্সিজেন।

সেটা পৃথিবী থেকে বয়ে নিয়ে যাওয়ার চেয়ে চাঁদেই সরাসরি উৎপাদন করা গেলে সবচেয়ে ভালো। এবার সেই ভালোরই ইঙ্গিত দিলেন অস্ট্রেলিয়ার এক বিজ্ঞানী। জন গ্রান্ট নামের ওই বিজ্ঞানী বলছেন, চাঁদেও অক্সিজেন আছে এবং এর পরিমাণও ব্যাপক। উপগ্রহের পাথুরে স্তরের নিচেই এত বিপুল পরিমাণ অক্সিজেন মজুদ রয়েছে যা ৮০০ কোটি মানুষ স্বাচ্ছন্দ্যে ১ লাখ বছর কাটিয়ে দিতে পারবেন। তবে সেই অক্সিজেন বায়বীয় রূপে নেই।

গবেষকরা এখন রেগোলিথ থেকে অক্সিজেন আহরণের টেকসই পদ্ধতি বের করার চেষ্টা করছেন। স্থানীয় সংবাদমাধ্যম ‘দ্য কনভারসেশনে’ প্রকাশিত এক প্রবন্ধে চাঁদে অক্সিজেন থাকার বিষয়টি তুলে ধরেন তিনি।

পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহ চাঁদ নিয়ে মানুষের আগ্রহের শেষ নেই। ১৯৬৯ সালের চন্দ্রজয়েও তা শেষ হয়নি। বরং আরো বেড়েছে। এখন দুই লাখ ৩৯ হাজার কিলোমিটার দূরের এই উপগ্রহে বসতি গড়ার চিন্তা করছে সে। কিন্তু মানুষ যদি চাঁদে গিয়ে দীর্ঘ সময় থাকতে চায়, তাহলে প্রথমেই তাদের শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য অক্সিজেন এবং রকেট চালানোর জন্য পর্যাপ্ত জ্বালানি সরবরাহের প্রয়োজন হবে। এ দুটি ছাড়া চাঁদে দীর্ঘমেয়াদি উপস্থিতি কল্পনা করা যায় না।

মহাকাশ অভিযানের পাশাপাশি সম্প্রতি এমন সব প্রযুক্তির উদ্ভাবনে সময় ও অর্থ বিনিয়োগ করা হচ্ছে যা মহাকাশের বিভিন্ন সম্পদ কাজে লাগানো সম্ভব হয়। এ ক্ষেত্রে বিজ্ঞানীদের প্রধান লক্ষ্য চাঁদে অক্সিজেন তৈরির প্রতি। বিষয়টি নিয়ে ইতোমধ্যে কাজও শুরু করেছেন বিজ্ঞানীরা। গত মাসেই অস্ট্রেলিয়ান স্পেস এজেন্সি ও মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার মধ্যে একটি চুক্তি সই হয়েছে। ‘আর্টেমিস প্রোগ্রাম’ প্রকল্পের অধীনে অস্ট্রেলিয়ায় তৈরি একটি মহাকাশযান চাঁদে পাঠানো হবে। আগামী বছর ফেব্রুয়ারি মাসেই শুরু হবে আর্টেমিস প্রকল্পের প্রথম চন্দ্রাভিযান।

বিজ্ঞানীদের মতে, পৃথিবীর মতো চাঁদেও বায়ুমণ্ডল রয়েছে। তবে এটা খুবই পাতলা এবং বেশিরভাগই হাইড্রোজেন, নিওন ও আর্গনের মতো গ্যাস দিয়ে গঠিত। এই বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেননির্ভর মানুষের টিকে থাকা সম্ভব নয় বলে মনে করেন অনেক বিজ্ঞানীই। তবে অস্ট্রেলিয়ার সাউদার্ন ক্রস ইউনিভার্সিটির শিক্ষক ও খ্যাতনামা বিজ্ঞানী জন গ্রান্ট বলছেন, চাঁদে পর্যাপ্ত পরিমাণে অক্সিজেন সঞ্চিত রয়েছে। যার ওপর নির্ভর করে পৃথিবীর সব মানুষ প্রায় এক লাখ বছর টিকে থাকতে পারবে।

তবে এটা গ্যাসীয় আকারে নয় বরং রেগোলিথের ভেতরে আবদ্ধ রূপে। রেগোলিথ হলো মৃত্তিকাময় এক ধরনের মিহি শিলাচূর্ণ। মাটি সৃষ্টির প্রাথমিক অবস্থাকে রেগোলিথক বলা হয়। একজন মানুষের বেঁচে থাকতে দিনে ৮০০ গ্রাম অক্সিজেন দরকার হয়। সেই সঙ্গে রেগোলিথ প্রয়োজন হয় ১০ মিটার গভীর। বৈজ্ঞানিক এই তথ্যের ওপর ভিত্তি করেই চাঁদে অক্সিজেনের পরিমাণের হিসাবটি বের করেছেন বিজ্ঞানী গ্রান্ট। তার দাবি, চাঁদের রেগোলিথ ৪৫ শতাংশ অক্সিজেন দিয়ে গঠিত যার সবটুকুই সিলিকা, অ্যালুমিনিয়াম, লৌহ ও ম্যাগনেশিয়ামের মতো খনিজ সমৃদ্ধ।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এই রেগোলিথ থেকে কি অক্সিজেন উৎপাদন করা সম্ভব কিংবা যদি অক্সিজেন উৎপাদন করা যায়, তাহলে সেটা দিয়ে কি চাঁদে মানুষের বেঁচে থাকা সম্ভব হবে? বিশ্লেষকরা বলছেন, এই অক্সিজেন উৎপাদন প্রক্রিয়া সহজ হবে না।

চলতি বছর বেলজিয়ামভিত্তিক স্টার্টআপ স্পেস অ্যাপলিকেশনস সার্ভিসেস তিনটি পরীক্ষামূলক চুল্লি বা রিঅ্যাক্টর তৈরির ঘোষণা দিয়েছে, যেগুলো ইলেক্ট্রোলাইসিস প্রক্রিয়ায় অক্সিজেনের উৎপাদন বাড়াতে পারে। ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির অভিযানের অংশ হিসেবে ২০২৫ সাল নাগাদ এই রিঅ্যাক্টরগুলো চাঁদে পাঠানো হতে পারে।

নয়া শতাব্দী/এম

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ