ঢাকা, শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

১৯৭২ ইতিহাসের সবচেয়ে বড় বছর

প্রকাশনার সময়: ১৬ নভেম্বর ২০২১, ০৩:৪৬

বছরের সবচেয়ে বড় দিন ২১ জুন আর সবচেয়ে বড় রাত ২২ ডিসেম্বর। এ তথ্য কমবেশি সবারই জানা। তবে যদি প্রশ্ন করা হয় ইতিহাসের সবচেয়ে বড় বছর কোনটি? তাহলে সাধারণভাবেই উত্তর আসবে লিপইয়ারের বছর। যা প্রতি চার বছর পর ফেব্রুয়ারি মাসে একদিন বেড়ে ২৯ দিনে মাস শেষ হয়। আর তাই ওই বছরকে ৩৬৫ দিনের পরিবর্তে ৩৬৬ দিনে বছর গণনা করা হয়ে থাকে। পৃথিবীর সূর্যকে একবার প্রদক্ষিণ করে আসতে সময় লাগে ৩৬৫ দিনের কিছু বেশি। এই সময়টা হলো ৩৬৫ দিন ৫ ঘণ্টা ৪৮ মিনিট ৪৭ সেকেন্ড। অর্থাৎ, আমরা প্রতি বছরে কয়েক ঘণ্টা কম হিসাব করি। এই কয়েক ঘণ্টার সমাধান মেলাতেই এসেছে লিপইয়ার। প্রতি চার বছরে এই হিসাব না করা সময়টা মিলে প্রায় এক দিন হয়ে যায়। সেজন্য চার বছর পর পর একটা দিন বাড়তি হিসাব করা হয়। সেই বছরে থাকে ৩৬৬ দিন আর বাড়তি দিনটাই হলো ২৯ ফেব্রুয়ারি। এরকম বছরকেই বলা হয় লিপইয়ার বা অধিবর্ষ। কিন্তু এই লিপইয়ারকে যদি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বছর বলা হয় তাহলে ভুল হবে। কেননা, ইতিহাসের সবচেয়ে বড় বছর হলো ১৯৭২ সাল।

লিপইয়ার হওয়ার পাশাপাশি আরো একটি কারণে ১৯৭২-ই হলো এখন পর্যন্ত দীর্ঘতম বছর। বছরের গড় সময়ের তুলনায় দু’ সেকেন্ড বড় ছিল এই সাল। ১৯৭২ সালে দু’ সেকেন্ড অতিরিক্ত সময় থাকার কারণ হলো লিপসেকেন্ড। নিজের অক্ষের চারপাশে ঘুরতে পৃথিবীর সময় লাগে মোটামুটি ২৪ ঘণ্টা এবং সূর্যের চারপাশে ঘুরতে মোটামুটি ৩৬৫ দিন। পৃথিবীর এই ঘোরার ওপর নির্ভর করেই দিনরাত, জোয়ার-ভাটা এবং ঋতু পরিবর্তনের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক বিষয়গুলো ঘটে থাকে। তবে পৃথিবীর গতি সব সময়ই এক থাকে না। পৃথিবীর এই গতি নির্ভর করে অনেকগুলো প্রাকৃতিক বিষয়ের ওপর। কখনো পৃথিবীর গতি সামান্য বেড়ে যায় আবার কখনো সামান্য কমেও যায়। জোয়ার-ভাটা, অগ্ন্যুৎপাত এই সমস্ত প্রাকৃতিক ঘটনাবলিই এর জন্য দায়ী। পৃথিবী নিজের অক্ষের চারপাশে একপাক দিতে যে ২৪ ঘণ্টা সময় নিয়ে থাকে তার ওপর ভিত্তি করেই আন্তর্জাতিক সময় নির্ধারণ করা হয়। ২৪ ঘণ্টায় ৮৬ হাজার চারশো সেকেন্ড রয়েছে। দেখা গিয়েছে, পৃথিবীর গতি ধীরে বা দ্রুত হয়ে গিয়ে অনেক সময়ই দু’ সেকেন্ডের পার্থক্য হয়ে যায়। এই দু’ সেকেন্ডের পার্থক্যের যদি সঠিক বিন্যাস না করা যায় তা হলে আমাদের জীবনযাত্রায় অনেক প্রভাব পড়বে।

ওই বাড়তি দু’ সেকেন্ডকে পৃথিবীর আহ্নিক গতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখতে বিজ্ঞানীরা জেনে-বুঝেই বছরের কোনো একটি দিনের এক মিনিটে ৬০ সেকেন্ডের সঙ্গে আরো এক সেকেন্ড সময় যোগ করে দিয়ে থাকেন। ফলে ওই নির্দিষ্ট মিনিটে ৬০-এর বদলে ৬১টি সেকেন্ড থাকবে। বছরের এই বাড়তি এক সেকেন্ডকে বলা হয় লিপ সেকেন্ড। কোন বছর লিপ সেকেন্ড ঘড়িতে যোগ করা হবে তা নির্ধারণ করে আন্তর্জাতিক আর্থ রোটেশন অ্যান্ড রেফারেন্স সিস্টেমস সার্ভিস। ১৯৭২ সাল থেকে লিপ সেকেন্ড যোগ করা শুরু হয়। ৩০ জুন এবং ৩১ ডিসেম্বর এই দুই দিনেই মূলত লিপ সেকেন্ড যোগ করা হয়। সহজ করে বোঝাতে গেলে এই সময় এক সেকেন্ডের জন্য ঘড়িকে থামিয়ে দেয়া হয়। যে বছর এই লিপ সেকেন্ড যোগ করা হয় তার অনেক আগে থেকেই ঘোষণা করে দেয়া হয়। ১৯৭২ সালই একমাত্র বছর যে বার ৩০ জুন এবং ৩১ ডিসেম্বর দু’বার লিপ সেকেন্ড যোগ করা হয়েছিল। ফলে অন্যান্য বছরের তুলনায় ওই বছরে দু’ সেকেন্ড বেশি সময় গণনা করা হয়েছিল। ১৯৭২ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত মোট ২৭ বার লিপ সেকেন্ড যোগ হয়েছে। যেমন, ১৯৭২ থেকে ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত ৩১ ডিসেম্বরে লিপ সেকেন্ড যোগ করা হয়। তবে, ১৯৮০ সালে কোনো লিপ সেকেন্ড যোগ করা হয়নি। এরপর ১৯৮১ থেকে ১৯৮৩ দু’বছর ৩০ জুন যোগ করা হয়। তারপর ১৯৮৪ সালেও কোনো লিপ সেকেন্ড যোগ করা হয়নি। সর্বশেষ ২০১৬ সালে যোগ করা হয়েছিল লিপ সেকেন্ড। ২০১৫ সালের ৩০ জুন যেমন লিপ সেকেন্ড যোগ করার ফলে বিশ্বের শেয়ারবাজার একেবারে ভেঙে পড়েছিল। ওই বছর ব্যাপক সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিল টুইটার, ইনস্টাগ্রাম, অ্যামাজনও। ২০১৬ সালের পরে আর কোনো লিপ সেকেন্ড যোগ করা হয়নি। যদিও এখনো লিপ সেকেন্ডের বিকল্প কোনো উপায় বের করতে পারেনি বিজ্ঞানীরা।

নয়া শতাব্দী/এসএম

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ