ঢাকা, শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

মানুষের চামড়ায় বাঁধানো বই! 

প্রকাশনার সময়: ১৪ নভেম্বর ২০২১, ২২:৪৩

ইন্টারনেটের কল্যাণে পৃথিবী এখন হাতের মুঠোয়। মোবাইল কিংবা কম্পিউটারে এক ক্লিকেই বিশ্ব চলে আসে চোখের সামনে। এরপরও বইপ্রেমীদের কাছে বইয়ের কদর কমেনি এতটুকুও। আর প্রিয় বইয়ে যদি থাকে চামড়ার মলাট তাহলে তো কথাই নেই। বই পড়তে ভালোবাসেন এমন মানুষের পছন্দের তালিকার ওপরের সারিতেই থাকবে চামড়ায় বাঁধানো বই। তবে, পৃথিবীতে মোট ৫০টির মতো চামড়ার বই আছে, যেগুলো সংগ্রহ করতে গেলে আঁতকে উঠবেন সাধারণ বইপ্রেমীরা! কারণ, সেসব বইয়ের মলাট মানুষের চামড়া দিয়ে বাঁধানো।

শুনতে অবিশ্বাস্য মনে হলেও সত্যিই এমনটা ঘটেছে। ২০১৪ সালে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগার থেকে উদ্ধার করা একটি বই নিয়ে শোরগোল পড়ে যায়। সেই বইয়ের ইতিহাস খুঁজতে গিয়ে জানা যায়, মানুষের চামড়া দিয়ে নাকি বাঁধানো হয়েছে বইটি।

সিএনএনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি লাইব্রেরিতে রক্ষিত ওই বইটির মলাট মানুষেরই চামড়া দিয়ে বাঁধাই করা হয়েছিল বলে নিশ্চিত করেছে কর্তৃপক্ষ। ফ্রেঞ্চ ঔপন্যাসিক আর্সেন হোইসি-এর লেখা বই ‘দাস ডেস্টিনিস ডে এলইন’-এর কভার নিয়ে সন্দেহ হওয়ার পর বিজ্ঞানী ও পর্যবেক্ষকরা ব্যাপক অনুসন্ধান চালান।

বইটির মলাটে মানুষের চামড়াই ব্যবহার করা হয়েছে বলে ৯৯ দশমিক ৯৯ ভাগ নিশ্চিত হন তারা। ১৮৮০’র দশকের মাঝামাঝি সময়ে আত্মা নিয়ে ধ্যান এবং পরকালীন জীবনকে বিষয়বস্তু করে লেখা ওই বইটি একজন চিকিৎসক বন্ধুর কাছে দিয়েছিলেন লেখক। বইপ্রেমী ওই চিকিৎসক লুডবিক বোল্যান্ড এক অপরিচিত মানসিক সমস্যাগ্রস্ত নারীর চামড়া দিয়ে বাঁধাই করেছিলেন বইটি। মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণে ওই নারীর মৃত্যু হয়েছিল। অবশ্য কেন এই ‘উদ্ভট’ কাজটি করেছিলেন তার ব্যাখ্যাও বইয়ের ভেতরই লিখে গিয়েছিলেন ডাক্তার বোল্যান্ড। তিনি লেখেন- ‘মানব আত্মা নিয়ে লেখা একটি বই অবশ্যই মানুষের চামড়া দিয়ে বাঁধাই হওয়ার দাবি রাখে।’

এরপর দুনিয়ায় মোট ৫০টি বই আলোচনায় আসে। দাবি ওঠে সেগুলোর মলাটও মানুষের চামড়া দিয়ে তৈরি। বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরে এগুলোর মধ্যে ১৮টিকে মানুষের চামড়ায় বাঁধানো বই বলে চিহ্নিত করেন বিশেষজ্ঞরা।

জানা যায়, মানুষের চামড়া দিয়ে বইয়ের মলাট করাকে এ যুগে উদ্ভট বা ঘৃণ্য কাজ বলে মনে করা হলেও এক সময় এর প্রচলন ছিল। ডা. বোল্যান্ড লিখেছেন, ষোড়শ শতাব্দী থেকে ‘এনথ্রোপোডার্মিক’ শব্দটি বেশ প্রচলিত, যার অর্থ হচ্ছে মানুষের চামড়া দিয়ে বই মলাট করা।

ওই শতকে এর প্রচলন ছিল। তখন কেউ অপরাধ করলে তার চামড়ায় তা লিখে দেয়া হতো। অনেক সময় কেউ মরে যাওয়ার পর তার চামড়া দিয়ে বইয়ের মলাট বানিয়ে তাকে স্মরণীয় করে রাখার অংশ হিসেবে স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবদের অনুরোধও করে যেতেন। একই নোটে তার সংগ্রহে থাকা আরেকটি বই ‘সাভিয়েরিন পাইনাস’ও মানুষের চামড়ায় বাঁধাই করা বলে নিজের লেখা চিরকুটে উল্লেখ করে যান বোল্যান্ড। সতেরশ’ শতকের লেখা ওই বইটি বর্তমানে লন্ডনের ‘ওয়েলকাম’ লাইব্রেরিতে রয়েছে। ইতিহাস যাচাই করলে বোল্যান্ডের এইসব কথা অযৌক্তিক মনে হবে না। অষ্টাদশ কিংবা উনবিংশ শতকে বহু অঞ্চলে বহুল প্রচলিত ছিল এই রীতি। যাকে বলা হয় ‘এনথ্রোপোডার্মিক বিবলিওপেগি’। তবে আস্তে আস্তে এই প্রথা বিলুপ্ত হয়ে গেলেও বিশ শতকের শুরুর দিকেও কোথাও কোথাও ব্যবহার হতো এই ঘৃণ্য বই-বাঁধাইয়ের পদ্ধতি।

১৮২৮ সালে স্কটল্যান্ডের এডিনবরায় ১৬টি ধারাবাহিক হত্যাকাণ্ড ঘটে। সে সময় তদন্তে ধরা পড়ে, এই খুনগুলো করেছিলেন উইলিয়াম বার্ক এবং উইলিয়াম হেয়ার নামের দুই ব্যক্তি। তারা মৃতদেহগুলি রবার্ট নক্স নামের এক শরীরবিদ্যা বিশেষজ্ঞকে বিক্রি করেন। নক্স সেগুলো তার পরীক্ষার কাজে ব্যবহার করতেন। ১৮২৯ সালে খুনের অপরাধের দায়ে বার্কের ফাঁসি হয়। পরে তার চামড়া দিয়ে বাঁধানো হয় একটি বই। সেই বই এখনো দেশটির জাদুঘরে সংরক্ষিত রয়েছে। মানুষের চামড়া দিয়ে ১৮৬৩ সালে বাঁধানো বইটির নাম ‘ডি হিউম্যানি কর্পোরিস ফ্যাব্রিকা’। এর লেখক আন্দ্রে ভেসালিয়াস নামে ১৬ শতকের এক চিকিৎসক। তাকে আধুনিক শরীরবিদ্যা চর্চার জনক হিসেবে গণ্য করা হয়।

সেই গ্রন্থের একটি কপি মানুষের চামড়া দিয়ে বাঁধান হোসে শাভায়ে নামে এক বাঁধাইকর। কথিত আছে, শাভায়ে নাকি সারা জীবনে মানব-ত্বক ব্যবহার করে চারটি বই বাঁধিয়েছিলেন। ১৯০৩ সালে নিউইয়র্কের গ্রোলিয়ের ক্লাবে বই বাঁধাই-সংক্রান্ত এক প্রদর্শনী আয়োজিত হয়। তার একটি অংশে রাখা হয় উদ্ভট কিছু বই। সেখানে ছিল জার্মান চিত্রকর হোলবাইনের বিখ্যাত ছাপাই ছবির সিরিজ ‘ডান্স অব ডেথ’-এর একটি সংকলন গ্রন্থ। ১৯ শতকে বাঁধানো এই বইটিতেও ব্যবহার হয়েছিল মানুষের চামড়া।

নয়া শতাব্দী/এম

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ