ঢাকা, শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

চীনের জাতীয় ‘নায়ক’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা চান শি

প্রকাশনার সময়: ১২ নভেম্বর ২০২১, ২২:৩৫

দুই পূর্বসূরির যোগ্য উত্তরসূরি হিসেবে প্রেসিডেন্ট শি জিন পিংয়ের মর্যাদাকে আরও দৃঢ় করতে একটি ‘ঐতিহাসিক প্রস্তাব’ পাস করেছে দেশটির ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টি। গত বৃহস্পতিবার এটি পাসের মধ্য দিয়ে চীনের রাজনৈতিক ইতিহাসে অপর দুই ‘মহানায়ক’ ‘মাও’ এবং ‘দেং’ এর সমসমর্যাদায় আসীন হতে যাচ্ছেন শি।

সংবাদমাধ্যম বিবিসি অনলাইনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার চীনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক সম্মেলনের ষষ্ঠ পরিকল্পনা অধিবেশনে এ প্রস্তাব পাস করা হয়। প্রস্তাবটির মূল লক্ষ্য শি জিন পিংকে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিষ্ঠাতা মাও সেতুং ও তার উত্তরসূরি দেং জিয়াও পিংয়ের মতো পূজনীয় ব্যক্তিত্ব হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা।

এদিকে এ প্রস্তাব পাসের মধ্য দিয়ে শি জিন পিং তার ক্ষমতাকে আরও সংহত করেছেন বলে অভিমত রাজনীতি বিশ্লেষকদের। চীনের সমকালীন ঘটনাভিত্তিক সংবাদ সংকলন ‘চায়না নিকান’-এর সম্পাদক অ্যাডাম নি মনে করেন, শি জিন পিং ‘চীনের জাতীয় অগ্রযাত্রার মহাকাব্যে নিজেকে ‘নায়ক’ হিসেবে প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালাচ্ছেন।

পাশাপাশি এ ঐতিহাসিক প্রস্তাবনা রূপায়নের মধ্য দিয়ে শি নিজেকে কমিউনিস্ট পার্টি এবং অধুনিক চীনের মহান আখ্যানের কেন্দ্রে তুলে এনেছেন। যা তার ক্ষমতার পরিপূর্ণ বিকাশ ঘটিয়েছে। আবার ভবিষ্যতে শিকে ক্ষমতায় নিয়ে যেতেও এই প্রস্তাবণাই অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে সহায়তা করবে বলে জানান অ্যাডাম।

বৃহস্পতিবার চীনা কমিউনিস্ট পার্টির শীর্ষ নেতৃত্বের চার দিনব্যাপী ষষ্ঠ পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে এবারের প্রস্তাবটি পাস করা হয়। এটি চীনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক সম্মেলন।

চীনের কমিউনিস্ট পার্টির ১৯তম কেন্দ্রীয় কমিটির পূণকালীর্ন ও স্থায়ী ৩৭০ জনেরও বেশি সদস্য চার দিনের রুদ্ধদ্বার অধিবেশনে এ প্রস্তাব নিয়ে কাজ করেন। এ প্রস্তাবের দলিলে দলটির একশ’ বছরের ইতিহাসের সারসংক্ষেপ তলে ধার হয়। এতে দলের গুরুত্বপূর্ণ অর্জনসমূহের পাশাপাশি ভবিষ্যত কর্মপরিকল্পনাও রয়েছে।

আগামী বছর অনুষ্ঠেয় দলটির জাতীয় কংগ্রেসের আগে এটা ছিল চীনা কমিউনিস্ট পার্টির নেতাদের সব শেষ বড় সম্মেলন। ওই কংগ্রেসে শি জিন পিং রেকর্ড তৃতীয় মেয়াদে চীনের প্রেসিডেন্ট হওয়ার প্রস্তাব দেবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এদিকে বিশেষজ্ঞদের অভিমত, বৃহস্পতিবার পাস হওয়া প্রস্তাবটি শি জিন পিংয়ের ক্ষমতাকে সুসংহত করেছে। আবার তার প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালনের পথও সুগম করেছে।

নতুন এ পদক্ষেপ শি জিন পিংকে তার পূর্ববর্তী চীনা নেতাদের থেকে স্বাতন্ত্র দান করবে বলে জানিয়েছেন ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সিঙ্গাপুরের শিক্ষক ড. চং জা ইয়ান । তার মতে, শি জিন পিংয়ের মতো এতটা কর্তৃত্ব সাবেক নেতা হু জিনতাও ও জিয়াং জেমিনেরও ছিল না। মাও সে-তুং ও দেং জিয়াও পিং-পূর্ববর্তী রীতি ভঙ্গের উপায় হিসেবে প্রস্তাব পাস করেন। সে তুলনায় আরো কতৃত্ববাদী শি জিন পিং তার প্রস্তাবে ক্ষমতা জারি রাখার ওপর জোর দিচ্ছেন।

প্রসঙ্গত, চীনা কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ নিয়ে তিনবার এমন প্রস্তাব পাস হয়েছে । এর আগে ১৯৪৫ সালে মাও সে-তুংয়ের সময় ও ১৯৮১ সালে দেং জিয়াও পিংয়ের সময় এমন প্রস্তাব পাস করা হয়। দুই মেয়াদের বেশি প্রেসিডেন্ট হতে না পারার সীমাবদ্ধতা ২০১৮ সালে বাতিল করে চীন।

চীনের নেতা হিসেবে ক্ষমতায় আসার পর থেকে শি চিন পিং তার ক্ষমতা দৃঢ় করার পাশাপাশি ক্রমাগত তা বৃদ্ধি করেছেন। ২০১৭ সালে দলের গঠনতন্ত্রে তার চিন্তাধারা অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এমন পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে মাও সে-তুংয়ের পর চীনের সবচেয়ে শক্তিশালী রাজনীতিক হিসেবে আবির্ভূত হন তিনি।

নয়া শতাব্দী/এম

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ