ঢাকা, শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

পৃথিবীর বাইরে থেকে এসেছে কাচের টুকরো!

প্রকাশনার সময়: ০৫ নভেম্বর ২০২১, ০৫:৪৭

মরুভূমির মাইলের পর মাইল এলাকাজুড়ে পুরু বালির স্তরের ওপর ছোট, বড়, মাঝারি আকারের রাশি রাশি কাচের টুকরো এলো কোথা থেকে? কারা নিয়ে এলো? এত রাশি রাশি কাচ তৈরি হলো কীভাবে ধু-ধু মরুভূমিতে?

প্রায় এক দশকেরও বেশি সময়ের এই সব কৌতূহলের কিছুটা অবসান ঘটালেন এ বার বিজ্ঞানীরা। গবেষণায় জানা গেল, মরুভূমির মাইলের পর মাইল এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে থাকা এই রাশি রাশি কাচে রয়েছে এমন সব পদার্থ, যা পৃথিবীর বাইরে কোনো ভিন্ন মুলুক থেকে আসা। এই কাচ পৃথিবীতে তৈরি হতে পারে না।

আমেরিকার ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ববিদদের গবেষণাপত্রটি বুধবার প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান গবেষণা পত্রিকা ‘জিওলজি’তে।

পৃথিবীর বাইরে ভিন্ন মুলুক থেকে আসা রাশি রাশি কাচ ছড়িয়ে থাকার সেই রহস্যে মোড়া মুলুকটির নাম চিলির আটাকামা মরুভূমি। এক দশকেরও কিছু সময় আগে যে মরুভূমির ৭৫ কিলোমিটার (প্রায় ৫০ মাইল) এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে থাকা রাশি রাশি কাচের টুকরোর প্রথম হদিস মিলেছিল। আর সেই সময় থেকেই যাবতীয় কৌতূহলের সূত্রপাত। কোথা থেকে এল, কারা নিয়ে এল এই রাশি রাশি কাচের টুকরো। অদ্ভুত আকারের সেই কাচের টুকরোগুলো। বিভিন্ন আকারের। একটার সঙ্গে অন্যটার মিল নেই কোনো। মরুভূমির বিভিন্ন জায়গায় অনেকটা এলাকাজুড়ে সেগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। যেন কাচের টুকরোর বিশাল আবর্জনা।

কোনোটা খুব ছোট, কোনোটা মাঝারি আকারের। কোনোটা আবার কাচের বড় বড় টুকরা। দৈর্ঘ্যে ৫০ সেন্টিমিটার (বা, ২০ ইঞ্চি)। প্রায় দু’ফুট।

‘‘সেই রাশি রাশি কাচের টুকরোগুলোর কোনোটা খুব এবড়ো-খেবড়ো, কোনোটা আবার একেবারেই মসৃণ, আবার কোনো কোনো কাচের টুকরো দেখে মনে হতে পারে, সেগুলোকে কোনোভাবে ভাঁজ করা হয়েছে বা দুমড়ানো-মোচড়ানো হয়েছে। পেরেকের নিচের দিকটার মতো। আর সেগুলো হয়েছে অন্তত ১২ হাজার বছর আগের কোনো ঘটনায়’’, বলেছেন প্রধান গবেষক ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ভূতত্ত্ববিদ পিটার শ্যুলজ।

আগের গবেষণাগুলো জানিয়েছিল, ১২ হাজার বছর আগে হয়তো কোনো সুবিশাল উল্কাখ- আছড়ে পড়েছিল আটাকামা মরুভূমির বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে। পৃথিবীতে ঢোকার সময় বায়ুম-লের সঙ্গে সংঘর্ষে জ্বলে উঠেছিল উল্কাখণ্ডটি। তখনই তার থেকে ছিটকে বেরিয়ে আসতে থাকে অত্যন্ত উত্তপ্ত পাথরের রাশি রাশি টুকরো। সেগুলো এসে পড়ে মরুভূমির ওপর। সেই তাপে গলে যায় মরুভূমির বালি ও মাটি। তার থেকেই সম্ভবত তৈরি হয়েছিল এই রাশি রাশি কাচ। কাচের টুকরো।

বিভিন্ন গবেষণা এর আগে আরও একটি কারণ দেখিয়েছিল। সেই সব গবেষণার বক্তব্য ছিল, পৃথিবী যখন ভয়ংকর উষ্ণ ছিল কয়েক লাখ বা কয়েক কোটি বছর আগে তখনো তৈরি হতে পারে এই কাচ, ভূগর্ভের অত্যধিক তাপে।

এবারের গবেষণায় অধ্যাপক শুলজ ও তার সতীর্থরা মরুভূমির বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে ছড়ানো কাচের টুকরোর ৩০০টি নমুনা সংগ্রহ করে সেগুলোকে ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপের নিচে রেখে পরীক্ষা করেন। সেই কাচ কোন কোন রাসায়নিক পদার্থ দিয়ে তৈরি, তা জানার চেষ্টা করেন স্পেকট্রোস্কোপি পদ্ধতিতে।

ভূতত্ত্ববিদ শুলজ বলেছেন, ‘পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে এই প্রথম প্রমাণ মিলল এই কাচ পৃথিবীতে তৈরি হয়নি। তৈরি হতে পারে না। তা পৃথিবীর বাইরে কোনো ভিন্ন মুলুক থেকেই এসেছিল আটাকামা মরুভূমিতে। আর সেগুলো নিয়ে এসেছিল কোনো সুবিশাল উল্কাখণ্ড। তাপ বিকীরণ আর বাতাসের জন্যই তৈরি হয়েছে এই রাশি রাশি কাচ আর তাদের বিভিন্ন আকার, আকৃতি। ওই কাচে মিলেছে জারকন্স-এর মতো পদার্থ। যা প্রচণ্ড তাপে রূপান্তরিত হয়ে গিয়ে হয়েছিল খনিজ পদার্থ ‘ব্যাডেলেইট’। যা হওয়ার জন্য ১ হাজার ৬৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার প্রয়োজন হয়। পৃথিবীতে কোনো দাবানল বা ভূপৃষ্ঠের কোনো প্রাকৃতিক ঘটনায় যে তাপমাত্রায় পৌঁছানো সম্ভব হয়নি এখনো। শুধু তাই নয়, এই রাশি রাশি কাচের টুকরোর রাসায়নিক বিশ্লেষণ করে যে খুব মিহি খনিজের অস্তিত্বের প্রমাণ মিলেছে, সেগুলো পৃথিবীতে বিরলতম। বরং সেগুলো পাওয়া যা উল্কাখণ্ডেই। তার মধ্যে অন্যতম পদার্থটি হল ‘কিউবানাইট’। পৃথিবীতে এই পদার্থটি বিরলতম। নেই বললেই হয়। ২০০৪ সালে নাসার ‘স্টারডাস্ট’ মিশন ‘ধূমকেতু ওয়াইল্ড-২’ থেকে প্রথম এই পদার্থটির হদিস পায়। এটি পৃথিবীর বাইরের ভিন্ন মুলুকেরই পদার্থ। তাই এই কাচের টুকরোগুলো পৃথিবীর বাইরে থেকেই এসেছিল আটাকামা মরুভূমিতে, এই ধারণায় পৌঁছলেন বিজ্ঞানীরা।

নয়া শতাব্দী/এমআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ