যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের এক ডজনেরও বেশি দেশ তাদের জলসীমার পরিবেশ সুরক্ষায় নেওয়া পদক্ষেপ আরো বাড়ানোর অঙ্গীকার করেছে। গত মঙ্গলবার জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলনে দেশগুলোর নেতারা এ প্রতিশ্রুতি দেন। তবে এতে সমুদ্রে চলমান ধ্বংসযজ্ঞ পাল্টে দেয়ার আকাক্সক্ষা নেই বলে অভিযোগ পরিবেশকর্মীদের।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, যুক্তরাজ্যের গ্লাসগোতে গত রোববার জলবায়ুবিষয়ক সম্মেলনে মিলিত হন বিশ্বনেতারা। তাদের পক্ষ থেকে এখনো পর্যন্ত যেসব প্রতিশ্রুতি এসেছে, সমুদ্র রক্ষার প্রতিশ্রুতি তার মধ্যে একটি। বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি প্রাক-শিল্পায়ন যুগের তাপমাত্রার চেয়ে সর্বোচ্চ দেড় ডিগ্রি ওপরে রাখার লক্ষ্য নিয়ে এবার কপ-২৬ নামের এ সম্মেলন শুরু হয়েছে।
এতে অংশ নেওয়া দেশগুলোর প্রতি জলবায়ু পরিবর্তন ও সমুদ্রের মধ্যে সম্পর্কের বিষয়টিকে স্বীকৃতি দেয়ারও আহ্বান জানিয়েছেন বিজ্ঞানী ও পরিবেশকর্মীরা । টেকসই সমুদ্র ব্যবস্থাপনা পৃথিবীর জলবায়ু নিয়ন্ত্রণে রাখার ক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারে বলে যুক্তি তাদের।
এরই অংশ হিসেবে মঙ্গলবার মার্কিন জলবায়ু দূত জন কেরি ১৫তম দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের ‘সমুদ্রসীমা রক্ষার অঙ্গীকারে’ সইয়ের ঘোষণা দেন। ইন্দোনেশিয়া, জাপান, কেনিয়া, চিলি ও নরওয়ের মতো সমুদ্রনির্ভর অর্থনীতির দেশগুলো আগেই এ অঙ্গীকারে স্বাক্ষর করে।
সমুদ্র রক্ষার এ প্রতিশ্রুতিতে সমুদ্রভিত্তিক নবায়নযোগ্য জ্বালানি, শিল্পকারখানার কার্বন নিঃসরণ হ্রাস ও গবেষণায় আরও বিনিয়োগের কথা বলা হয়েছে। তবে এতে মাছ ধরা শিল্পের মতো সমুদ্রের সম্পদ শুষে নেওয়া বিভিন্ন খাতে সরকারগুলোর বার্ষিক বিপুল পরিমাণ ভর্তুকি তুলে দেয়ার উল্লেখ নেই। এতে উদ্বেগ জানিয়েছেন পরিবেশকর্মীরা।
পরিবেশ নিয়ে কাজ করা বেসরকারি সংস্থা গ্রিনপিস এ প্রতিশ্রুতিকে ‘দুর্বল’ অ্যাখ্যা দিয়েছে। গ্রিনপিস ইউকের লুইজা ক্যাসন বলেছেন, ‘আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে সামুদ্রিক অভয়ারণ্যের একটি নেটওয়ার্ক তৈরিতে পদক্ষেপ দেখতে চাই। যার মধ্যে আমাদের সমুদ্রের কমপক্ষে ৩০ শতাংশ থাকবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা চাই এমন এলাকা যেখান থেকে বাণিজ্যিকভাবে কিছু তোলা হবে না। যেখানে প্রকৃতি ও মাছের সংখ্যা পুনরুদ্ধার ও বাড়তে পারে।’
রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে যুক্তরাষ্ট্রের ইএসআরআইর প্রধান বিজ্ঞানী ও সমুদ্রবিজ্ঞানী ডন রাইট বলেছেন, টেকসই সমুদ্র ব্যবস্থাপনা নিয়ে পরিকল্পনা করার ক্ষেত্রে কপ-২৬ এ অংশ নেওয়া প্রতিনিধিদের জন্য জলবায়ু পরিবর্তন ও সমুদ্রের মধ্যে সম্পর্ক বুঝতে পারা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।তার মতে, ‘সমুদ্রে মানুষের কর্মকাণ্ডের ফলে সৃষ্ট কার্বন নিঃসরণকে আমরা এখন একেবারেই গুরুত্ব দিচ্ছি না। যেগুলো সমুদ্রতলের শান্তি ভঙ্গ করছে সেই মাছ ধরার ট্রলার বহরের মতো কর্মকাণ্ডকে বিবেচনাতেই রাখছি না। কার্বন নিঃসরণ ও দূষণের হিসাব করার সময় সমুদ্রকেও অন্তর্ভুক্ত করতে হবে আমাদের। তিনি বলেছেন, আমার আশা, কপ-২৬ এ সমস্যাকে স্বীকার করে নেবে।’ ১৩ দিনের এ সম্মেলনে বিশ্বনেতারা যেসব সমঝোতায় পৌঁছেছেন তার মধ্যে ২০৩০ সালের মধ্যে বন উজার বন্ধ এবং ২০৩০ সালের মধ্যে মিথেন গ্যাস নির্গমন ২০২০ সালের তুলনায় ৩০ শতাংশ কমানোর অঙ্গীকারও রয়েছে।
প্রসঙ্গত, পৃথিবীর তিন ভাগের মধ্যে দু’ভাগই পানি। এ ছাড়াও সমুদ্র উষ্ণতা ও কার্বনডাই অক্সাইড দুই-ই শুষে নেয় এবং পরে তা গ্রহজুড়ে ছড়িয়ে দেয়।
নয়া শতাব্দী/এম
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ