জাপানি রাজকুমারী মাকো তার কলেজজীবনের বন্ধু কিই কুমুরোকে বিয়ে করেছেন। এর মধ্য দিয়ে রাজকীয় মর্যাদা হারালেন মাকো। মঙ্গলবার স্থানীয় সময় সকাল ১০টায় বিয়ে নিবন্ধনের উদ্দেশ্যে তিনি রাজপ্রসাদ থেকে বের হন।
সংবাদ মাধ্যম বিবিসি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, দীর্ঘদিনের প্রেমিককে জীবনসঙ্গী হিসেবে বেছে নিতে কেবল পদমর্যাদাই বিসর্জন দেননি মাকো, রাজপরিবারের বিয়েতে রীতিসিদ্ধ সব আচার-অনুষ্ঠানও বাদ দিয়েছেন। জাপানি পত্রিকা কিয়োডোর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাজকুমারী মাকো গতকাল স্থানীয় সময় সকাল ১০টার দিকে বিয়ে নিবন্ধনের জন্য টোকিওর রাজপ্রসাদ থেকে বের হন। এ সময় বেশ কয়েকবারই তিনি তার বাবা ক্রাউন প্রিন্স ফুমিহিতো ও ক্রাউন প্রিন্সেস কিকোকে মাথা নুয়ে সম্মান জানান। বাড়ি থেকে বের হওয়ার আগে তিনি ছোটবোনকে জড়িয়ে ধরেছিলেন বলেও জানিয়েছে সংবাদমাধ্যমটি।
আইএইচএ’র বরাত দিয়ে দেশটির টেলিভিশন নেটওয়ার্ক সিটিভি জানিয়েছে, মাকো ও কুমুরোর বিয়ে সংক্রান্ত কাগজপত্র রাজপ্রাসাদের এক কর্মকর্তা জমা দেন এবং সঙ্গে সঙ্গেই তা অনুমোদিত হয়।
জাপানের আইন অনুযায়ী, রাজপরিবারের কোনো মেয়ে যদি সাধারণ ঘরের কাউকে বিয়ে করেন, তাহলে তাকে পদবি ছাড়তে হয়। তবে রাজপরিবারের পুরুষ সদস্যদের জন্য এ ধরনের কোনো বিধান নেই।
পরিবার ছাড়ার সময় নারী সদস্যদের এককালীন অর্থ দেওয়ার যে রীতি রয়েছে, তা নিতেও অস্বীকৃতি জানিয়েছেন মাকো। এর মধ্য দিয়ে তিনিই হলেন জাপানের রাজপরিবারের প্রথম নারী সদস্য, যিনি অর্থ ও আচার-অনুষ্ঠান দুটিই পরিত্যাগ করলেন।
গত কয়েক বছর ধরেই স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো মাকো ও কুমুরোর নামে একাধিক সংবাদ প্রকাশ করে এই যুগলকে নাজেহাল করেছে। যে কারণে রাজকুমারীকে তীব্র মানসিক অবসাদে ভুগতে হয়েছে বলেও এর আগে জানায়, ইমপেরিয়াল হাউসহোল্ড এজেন্সি (আইএইচএ) ।
এদিকে মঙ্গলবার এই নবদম্পতির বিয়ের বিরুদ্ধে জাপানে বিক্ষোভও হয়েছে। রাজধানী টোকিওর একটি পার্কে মাকো-কুমুরোর বিয়ের বিরুদ্ধে হওয়া বিক্ষোভে অনেককে কুমুরোর পরিবারে বিশেষ করে তার মা’র অর্থনৈতিক ইস্যু নিয়ে স্লোগান দিতে দেখা গেছে।
এ সময় এক সংবাদ সম্মেলনে মাকো জানান, তার বিয়ে যদি জনগণের জন্য কোনো ধরনের সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়, তবে তার জন্য তিনি আন্তরিকভাবে ‘দুঃখপ্রকাশ করছেন’।
দেশটির সম্প্রচার মাধ্যম এনএইচকে জানিয়েছে, মাকো বলেছেন, ‘সমস্যা সৃষ্টির জন্য আমি খুবই দুঃখিত, আমি তাদের কাছে কৃতজ্ঞ যারা আমাকে সবসময় সমর্থন দিয়ে গেছেন। আমার কাছে কিই হচ্ছে এমন একজন, যার জায়গায় অন্য কাউকে রাখা যায় না। বিয়ে আমাদের জন্য জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছিল।’
পাশাপাশি কুমুরো জানান, তিনি মাকোকে ভালোবাসেন এবং তার সঙ্গেই জীবন কাটাতে চান। তিনি আরও বরেন, ‘আমি মাকোকে ভালোবাসি। আমরা একটাই জীবন পাই। সে জীবনটা যেন আমরা ভালোবাসার কারও সঙ্গেই কাটাতে পারি, তাই চাই আমি।’
কুমুরো যুক্তরাষ্ট্রে আইন পেশায় কর্মরত থাকায় এ দম্পতি এখন থেকে যুক্তরাষ্ট্রেই থাকবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তাদের এ সিদ্ধান্তের সঙ্গে ব্রিটিশ রাজপরিবারের সদস্য প্রিন্স হ্যারি ও তার স্ত্রী মেগান মার্কলের যুক্তরাষ্ট্রে চলে আসার তুলনা হচ্ছে। এ নবদম্পতি ইতোমধ্যেই একটি ডাকনামও পেয়ে গেছে, ‘জাপানের হ্যারি মেগান’।
মাকো যখন থেকে কুমুরোর সঙ্গে তার সম্পর্কের কথা ঘোষণা করেন, তখন থেকেই কুমুরোকে মেগানের মতোই গণমাধ্যমের ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে থাকতে হয়েছে।
বিয়ের তিন দিন আগে ৩০তম জন্মদিন পালন করা মাকো জাপানের সম্রাট নারুহিতোর ভাইঝি। টোকিওর ইন্টারন্যাশনাল ক্রিশ্চিয়ান ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সময় ২০১২ সালে কুমুরোর সঙ্গে পরিচয় হয় তার। এর ৫ বছর পর দু’জন বাগদান সারেন। এই যুগল প্রথমে ২০১৮ সালেই বিয়ে সারার পরিকল্পনা করেন; কিন্তু পরে তা পিছিয়ে যায়।
সেসময় কুমুরোর মা তীব্র অর্থনৈতিক সংকটে ভুগছিলেন। এ সময় কুমুরো তার একসময়ের বাগদত্তার কাছ থেকে ঋণ নিয়েও তা শোধ দিতে পারেননি। এ কারণেই মাকো ও কুমুরোর বিয়ে পিছিয়ে গেছে বলে স্থানীয় গণমাধ্যমে গুঞ্জন শুরু হয়। পরে রাজপ্রাসাদ এক বিবৃতিতে জানায়, বিয়ে পেছানোর সঙ্গে কুমুরোর মায়ের অর্থনৈতিক সংকটের কোনো যোগসূত্র নেই। তবে মাকো’র বাবা ফুমিহিতো ‘রাজকুমারীর বিয়ের আগেই অর্থ সংক্রান্ত বিষয়টির মীমাংসা হওয়া দরকার’ বলে মন্তব্য করেন।
নয়া শতাব্দী/এম
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ