ঢাকা, শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিশ্বে ৪০ শতাংশ মানুষই ক্ষুধার্ত

প্রকাশনার সময়: ১৭ অক্টোবর ২০২১, ০৫:৪৫
ছবি: সংগৃহীত

বিশ্বে এমন সময় খাদ্য দিবস পালিত হচ্ছে যখন ক্রমাগতভাবে দাম বাড়ছে। ফলে খাদ্য নিরাপত্তায় নজিরবিহীন বিপর্যয় আসতে পারে বলে জাতিসংঘ সতর্ক করেছে। এছাড়া বিশ্বব্যাপী তিন বিলিয়নেরও বেশি মানুষ স্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণের সুযোগ পায় না। যা মোট জনসংখ্যার প্রায় ৪০ শতাংশ। করোনাভাইরাসের কারণে নতুন করে ১৩২ মিলিয়ন বা তার বেশি মানুষ ক্ষুধার্ত হতে পারে বলেও সতর্কতা রয়েছে।

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে প্রতিবছর ১৬ অক্টোবর বিশ্ব খাদ্য দিবস পালিত হয়। বিশ্ব খাদ্য দিবস কেবল খাদ্য উদযাপনের জন্য নয়, বরং এটি সুবিধাবঞ্চিত জনগণের সচেতনতা বাড়ানোর জন্যও পালন করা হয়। সারা পৃথিবীতে প্রচুর মানুষ এখনো ক্ষুধায় ভুগছে। ১৯৭৯ সালে শুরু করার পর থেকে বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশে লাখ লাখ মানুষ বিশ্ব খাদ্য দিবস উদযাপন করে আসছে।

এ বছর দ্বিতীয়বারের মতো কোভিড-১৯ মহামারিকালে বিশ্ব খাদ্য দিবস পালিত হচ্ছে। করোনাভাইরাস মহামারি কৃষিখাদ্য ব্যবস্থাকে ব্যাহত করেছে এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা সৃষ্টি করেছে। এর ফলে জীবিকা ও আয় ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা এবং বৈষম্যও বৃদ্ধি পেয়েছে। এবারের বিশ্ব খাদ্য দিবস উন্নত উৎপাদন, উন্নত পুষ্টি, উন্নত পরিবেশ এবং উন্নত জীবনযাত্রার জন্য আরো দক্ষ, অন্তর্ভুক্তিমূলক, স্থিতিশীল এবং টেকসই কৃষি-খাদ্য ব্যবস্থায় রূপান্তরের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াবে, যাতে কেউ পিছিয়ে না থাকে। আমাদের কৃষি-খাদ্যব্যবস্থা যেন সকলের জন্য পর্যাপ্ত সাশ্রয়ী, পুষ্টিকর এবং নিরাপদ খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করে। এই আশায় এ বছরের বিশ্ব খাদ্য দিবস সকল ক্ষেত্রে পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানাবে।

বাংলাদেশে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার প্রতিনিধি রবার্ট সিম্পসন বলেন, করোনাভাইরাস মহামারির সময় এবার দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্ব খাদ্য দিবস পালিত হচ্ছে। এবারের বিশ্ব খাদ্য দিবসের প্রতিপাদ্য হচ্ছে আমাদের কর্ম আমাদের ভবিষ্যৎ, উন্নত উৎপাদন, উন্নত পুষ্টি, উন্নত পরিবেশ এবং উন্নত জীবন। যার মূলকথা হলো হলো যে খাদ্য আমরা বাছাই করি এবং যেভাবে আমরা তা গ্রহণ করি তা আমাদের এবং আমাদের পৃথিবী ও স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলে। তিনি বলেন, সকল খাদ্য নায়ক-কৃষক, মৎস্যজীবী, খাদ্য পরিবহনকারী মানুষ, বাজার বিক্রেতা প্রত্যেককেই যারা এই চ্যালেঞ্জিং মহামারির সময়েও আমাদের খাদ্য সরবরাহের জন্য কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছেন, তাদের প্রতি তার আন্তরিক ধন্যবাদ এবং প্রশংসা করেন। পাশাপাশি আমাদের নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য, পরিবেশের প্রতি যত্নবান হবার মধ্য দিয়ে টেকসই পরিবর্তন নিশ্চিত করার জন্য সচেষ্ট হতে হবে। যাতে করে সবাই স্বাস্থ্যকর এবং নিরাপদ খাবার পেতে পারে।

এদিকে ইথিওপিয়া, মাদাগাস্কার, দক্ষিণ সুদান এবং ইয়েমেনে প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ দুর্ভিক্ষের মতো পরিস্থিতিতে আছে। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বুরকিনা ফাসো এবং নাইজেরিয়ার ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীও প্রায় একই পরিস্থিতিতে পড়েছে বলে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে জাতিসংঘ। এমন দুর্ভিক্ষময় পরিস্থিতিতে থাকা অন্তত ৪ কোটি মানুষকে সহায়তার জন্য দ্রুত তহবিল গঠনের আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক চ্যারিটি সংস্থা দা হাঙ্গার প্রজেক্টের তথ্য অনুসারে, প্রায় ৬৯ কোটি মানুষ বিশ্বব্যাপী ভয়াবহ দারিদ্র্যের সঙ্গে বাস করছে, আর ৮৫ কোটি মানুষ দরিদ্রতার ঝুঁকিতে আছে কোভিডের কারণে। আবার এর মধ্যে ৬০ শতাংশই নারী। জাতিসংঘ খাদ্যের দাম বৃদ্ধির কারণ অনুসন্ধান করছে।

সংস্থাটি বলছে, ‘এখানে আমরা দেখছি যে খাবারের উচ্চমূল্য বিশ্বব্যাপী এসব মানুষের জন্য কী অর্থ বহন করে এবং খাদ্য দরিদ্রতা কমাতে বিকল্প আর কী আছে। কিন্তু শুরুতেই আমরা দেখব খাদ্যমূল্য বাড়ছে কেন।’ খাদ্যের আন্তর্জাতিক বড় প্রতিষ্ঠান ক্রাফট হেইনজ সতর্ক করে বলেছে যে, মহামারি-পরবর্তী পরিস্থিতি আর মুদ্রাস্ফীতির কারণে খাদ্যের উচ্চমূল্যের সঙ্গেই খাপ খাইয়ে নিতে হবে।

ভারতের মুম্বাইয়ের রাহ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ড. সারিকা কুলকার্নি ক্রাফট হেইনজের প্রধান মিগুয়েল প্যাট্রিসিওর সঙ্গে একমত যে, খাদ্যমূল্য বেশিই থাকবে। ড. কুলকার্নি ও রাহ ফাউন্ডেশন ভারতের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের জন্য একযোগে কাজ করছে।

মহামারির কারণে অনেকে দেশেই শস্য থেকে আরম্ভ করে ভোজ্যতেলসহ কাঁচামালের উৎপাদন কমেছে। মূলত করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে নেয়া পদক্ষেপের পাশাপাশি অসুস্থতা, স্বল্প উৎপাদন ও বিতরণের কারণে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। যেহেতু অর্থনীতিতে এমন পণ্যের সরবরাহ পুনরায় শুরু হয়েছে, অনেকেই হয়তো ক্রমবর্ধমান চাহিদা অনুযায়ী তা করতে পারছে না, যা দাম বাড়াতে অবদান রাখছে। পাশাপাশি উচ্চ বেতন আর জ্বালানি মূল্যও উৎপাদনকারীদের ওপর বোঝা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

দারিদ্র্য দূরীকরণ বিশেষজ্ঞ ড. কুলকার্নি বলেন, দামের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্ক আছে চাহিদা ও সরবরাহের। যেখানে জনসংখ্যা আর খাদ্য চাহিদা ক্রমাগত বাড়ছে আবার পানির স্বল্পতা, মাটির গুণাগুণ কমে যাওয়া, জলবায়ু পরিবর্তন, নতুন প্রজন্মের কৃষিকাজে অনীহাসহ নানা কারণে চাষের জমি কমে যাচ্ছে।

নয়া শতাব্দী /এমআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ