বৈশ্বিক মহামারি করোনা পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যসেবা বিঘ্নিত হওয়ায় গত এক দশকের মধ্যে প্রথমবারের মতো বিশ্বজুড়ে ফের বাড়ছে যক্ষ্মার প্রকোপ।
করোনার এই ধাক্কা নিরাময়যোগ্য যক্ষ্মা (টিবি) মোকাবিলায় কয়েক দশকের অগ্রগতিকে ম্লান করে দিয়েছে বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জানিয়েছে।
বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে সংস্থাটি প্রধান টেড্রোস আধানম গেব্রেইয়েসুস বলেছেন, এটি একটি উদ্বেগজনক খবর; যা এই প্রাচীন কিন্তু প্রতিরোধ এবং নিরাময়যোগ্য রোগে আক্রান্ত লাখ লাখ মানুষের রোগ নির্ণয়, চিকিৎসা ও সেবার শূন্যতা রোধ করার জন্য বিনিয়োগ এবং উদ্ভাবনের জরুরি প্রয়োজনে বৈশ্বিক জাগরণের আহ্বান হিসাবে কাজ করবে।
২০২০ সালের বার্ষিক টিবি প্রতিবেদনে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসা ক্রমবর্ধমান হারে বিঘ্নিত হওয়ায় যক্ষ্মা নির্মূলের অগ্রগতির আরো অবনতি ঘটেছে। বিশ্বজুড়ে বর্তমানে প্রায় ৪১ লাখ মানুষ যক্ষ্মায় ভুগছেন। রোগটি নির্ণয় না করায় এবং আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা না দেওয়ায় ২০১৯ সালের ২৯ লাখের তুলনায় বর্তমানে তা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, করোনা মহামারি যক্ষ্মা রোগীদের জন্য আরো খারাপ পরিস্থিতি তৈরি করেছে। কারণ বৈশ্বিক স্বাস্থ্যসেবা তহবিল করোনা মোকাবিলায় ব্যয় হওয়ায় এই পরিস্থিতির তৈরি হয়েছে। এছাড়া লকডাউনের কারণে যক্ষ্মায় আক্রান্তরা যথাযথ চিকিৎসাসেবা পেতেও ব্যাপক বেগ পোহাচ্ছেন।
প্রতিরোধমূলক এই রোগের চিকিৎসা নেওয়ার পরিমাণও কমেছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। ২০২০ সালে ২৪ লাখ মানুষ যক্ষ্মার চিকিৎসার জন্য চিকিৎসকের কাছে গেলেও ২০১৯ সালের তুলনায় তা ২১ শতাংশ কম।
টেড্রোস বলেছেন, এই প্রতিবেদন আমাদের আশঙ্কাকেই নিশ্চিত করেছে যে, মহামারির কারণে যক্ষ্মার বিরুদ্ধে বহু বছরের অপরিহার্য স্বাস্থ্যসেবার অগ্রগতি ব্যাহত হতে পারে। ২০২০ সালে বিশ্বজুড়ে এই রোগে ১৫ লাখ মানুষ মারা গেছেন। অথচ ২০১৯ সালে বিশ্বে যক্ষ্মায় প্রাণ যায় ১২ লাখ মানুষের।
যক্ষ্মা আসলে কি? এতো মানুষ মরছে কেন?
চিকিৎসক ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মতে এটি জীবাণুঘটিত মারাত্মক সংক্রামক রোগ, যা মাইকো-ব্যাকটেরিয়াম টিউবারকুলোসিস নামক জীবাণু দিয়ে হাঁচি-কাশির মাধ্যমে সংক্রমণ ঘটিয়ে থাকে।
একনাগাড়ে তিন সপ্তাহের বেশি কাশি, জ্বর ও বুকে ব্যথা এ রোগটির প্রধান লক্ষণ। কফ পরীক্ষা করাই হচ্ছে এ রোগ নির্ণয়ের একমাত্র নির্ভরযোগ্য উপায়।
যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির বিশেষজ্ঞরা জানায়, এটি একটি কমিউনিকেবল ডিজিজ এবং আক্রান্ত ব্যক্তি চিকিৎসা না নিলে তার দ্বারা আরও দশজন পর্যন্ত আক্রান্ত হবার আশংকা থাকে। খোলা জায়গা কমে যাচ্ছে এবং বাড়ছে বায়ুদূষণ - যা যক্ষ্মার ঝুঁকি বাড়াতেও সহায়তা করছে। রোগ-নির্ণয়ে দেরী করাটাও একটা বড় চ্যালেঞ্জ।
নয়া শতাব্দী/এমআর
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ