ঢাকা, শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিশ্ববাজারে তীব্র জ্বালানি সংকট

প্রকাশনার সময়: ১৩ অক্টোবর ২০২১, ২১:০০

প্রাণঘাতি করোনাভাইরাসের কারণে গত দেড় বছরের অধিককাল জুড়ে সারা বিশ্ব প্রায় অচল হয়ে পড়ে। চাকরি হারান বহু মানুষ। জীবিকা হারায় লক্ষ লক্ষ মানুষ। মানুষের আয় কমে যায়। দ্রব্যমূল্য বেড়ে যায়। তবে সবচেয়ে বড় ধাক্কা লাগে অর্থনীতিতে। ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটের মুখে পতিত হতে যাচ্ছে সারা বিশ্ব। আজ মার্কিন গণমাধ্যম সিএনএন’র বরাতে জানা যায় বিশ্বজুড়ে চরম জ্বালানি সংকট দেখা দিয়েছে।

দেশে দেশে করোনা বিধিনিষেধ জারি ও সীমান্ত বন্ধ ইত্যাদি কারণে গত বছর বিশ্ববাজারে জ্বালানির চাহিদা ব্যাপক কমে যায়। চলতি বছর আবার সবকিছু খুলতে শুরু করায় বিশ্বব্যাপী জ্বালানির চাহিদা আবার ফিরেছে পূর্ববর্তী অবস্থায়। কিন্তু চাহিদার সাথে তাল মিলিয়ে সরবরাহ বাড়ানো সম্ভব হয়নি।

তাই চাহিদার চাপে ও সরবরাহের ঘাটতিতে ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক জ্বালানি তেলের দাম ব্যারেল প্রতি বেড়েছে ১২০ ডলার। গত বছরের এপ্রিলে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক যে জ্বালানি তেলের দাম ছিল ব্যারেলপ্রতি ঋণাত্মক ৪০ ডলার এখন তা ঠেকেছে ৮০ ডলারে। বিগত সাত বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো সোমবার (১১ অক্টোবর) দেশটিতে প্রতি ব্যারেল তেলের দাম ৮০ ডলার ছাড়ায়। ইতিপূর্বে ২০১৪ সালের ৩১ অক্টোবর তেলের দাম ৮০ ডলারের ওপরে উঠেছিল।

আমেরিকান অটোমোবাইল অ্যাসোসিয়েশনের (এএএ) তথ্যানুযায়ী, সোমবার গ্যাসোলিনের গড় মূল্যও বিগত সাত বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। গত সপ্তাহে গ্যাসোলিনের দাম সাত সেন্ট বেড়ে প্রতি গ্যালন দাঁড়িয়েছে ৩ দশমিক ২৭ ডলারে যা গত বছরের প্রায় দ্বিগুণ।

বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, জ্বালানীর এই উচ্চমূল্য মূল্যস্ফীতির হারও বাড়িয়ে তুলবে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পরিবারের মাসিক বাজেটে চাপ পড়বে। বিষয়টি প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে নতুন রাজনৈতিক চাপে ফেলবে। বিদ্যমান পরিস্থিতি অনুযায়ী, গ্যাসোলিনের দাম আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

পাশাপাশি প্রাকৃতিক গ্যাসের দামও এতটাই বাড়ছে যে ইউরোপ-এশিয়ার কারখানায় বিদ্যুতের জন্য তুলনামূলকভাবে সস্তা জ্বালানি উৎসে পরিণত হতে পারে অপরিশোধিত তেল।

সোমবার (১১ অক্টোবর) মার্কিন বহুজাতিক বিনিয়োগ ব্যাংক ও আর্থিক সেবা প্রতিষ্ঠান সিটি গ্রুপ তার পূর্বাভাসে প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত তেলের দাম বাড়ার আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছে, চলতি বছরে অপরিশোধিত তেলের দাম ৯০ ডলার পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে।

তারা বলছে, এ শীতে জ্বালানির দাম হবে আকাশচুম্বী। প্রাকৃতিক গ্যাসের মাধ্যমে শীতের এ চাহিদা মেটানো সম্ভব হবে না। ফলে আশঙ্কা করা যাচ্ছে, গ্যাসের চেয়ে তেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর ওপর নির্ভরশীলতা বৃদ্ধি পাবে। ফলে তেলের দাম আরও বাড়তে পারে। প্রতি ব্যারেল তেলের দাম ১০০ ডলারও হয়ে যেতে পারে।

সিটি গ্রুপের আশঙ্কা, সামনের শীতে ফেব্রুয়ারির মধ্যেই ইউরোপে গ্যাসের সংকট দেখা দিতে পারে। ইউরোপে প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম গত বছর প্রতি মিলিয়ন বিটিইউ ছিল ২ ডলারের কম। অথচ এই শরতে দাম বেড়ে ৫৫ ডলারের কাছাকাছি পৌঁছেছে।

এদিকে জ্বালানি নিয়ে বিপাকে চীনও। দেশটিতে শুধু গ্যাসের দামই বাড়েনি, কয়লার দামও আকাশচুম্বী। চীনের উত্তরাঞ্চলের বন্যায় কয়েক ডজন কয়লাখনি বন্ধ হয়েছে। ফলে বিশ্বব্যাপী বেড়ে গেছে কয়লার দাম। চীনে বিদ্যুৎ ও ইস্পাতসহ প্রায় সব শিল্পেই কয়লা মূল কাঁচামাল। এমনিতে দুই মাস ধরে বিদ্যুৎ সংকটে থাকার পর কয়লার দাম বাড়ায় তা মরার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বহু কলকারখানা বন্ধ রয়েছে বিদ্যুৎ সংকটের কারণে।

নয়া শতাব্দী/এম

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ