হিমালয়ের পাদদেশে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত চীনের ইয়ুনান ও সিচুয়ান প্রদেশের মোসুও গোষ্ঠীকে বলা হয় ‘নারীদের রাজ্য’। এটি পৃথিবীর বিলুপ্তপ্রায় মাতৃপ্রধান ও নারী শাসিত সমাজগুলোর মধ্যে একটি। তারা নিজেদেরকে ‘না’ নামেও পরিচয় দিয়ে থাকে। আদতে মাতৃতান্ত্রিক এই গোষ্ঠীতে নারীরাই হলেন কর্তা।
মূলত মায়ের নেতৃত্বে বড় পরিবারে থাকতে অভ্যস্ত মোসুও সম্প্রদায়ের মানুষেরা৷ তাদের মধ্যে ‘স্বামী’ বা ‘পিতা’ বলে কিছু আসলে নেই৷ যেহেতু পুরুষের যৌন সংসর্গ ছাড়া সন্তান উৎপাদন সম্ভব নয়, তাই মোসুও সমাজে পুরুষের প্রয়োজন ভবিষ্যত বংশধর তৈরির জন্য।
এই সম্প্রদায় ‘ওয়াকিং ম্যারেজে’ বিশ্বাসী, অর্থাৎ একজন পুরুষ চাইলে একজন নারীর বাড়িতে যেতে পারেন এবং রাতটি তার সঙ্গে কাটাতে পারেন৷ তবে স্বামী-স্ত্রী একসঙ্গে বসবাসের বিধান নেই এই সম্প্রদায়ে৷
একজন পুরুষ, নারীকে বলে- আজ রাতে আমি তোমার বাসায় কাটাব। মোসুওদের বাসায় প্রত্যেক নারীর আলাদা ঘর থাকে। পুরুষ এসে রাতে তার পছন্দের নারীর দরোজায় পাথর দিয়ে টোকা মারে ও তার ঘরে রাত কাটায়।
ওই পুরুষকে সূর্য ওঠার আগেই কিন্তু ঘর থেকে চলে যেতে হয় তার নিজের বাসায়। মোসুও সম্প্রদায় এটাকে বলে পথচলতি বিয়ে। তারা কখনই এই পথচলতি বিয়েকে স্থায়ী কোন এই সম্পর্ক হিসাবে দেখে না, বা দেখার প্রয়োজনীয়তাও অনুভব করে না। তাদের যুগল সম্পর্ক শুধু রাতের ওই মুহূর্তটির জন্যই স্থায়ী হয়।
এদিকে, মোসুও সম্প্রদায়ের জীবন-ধারণ পদ্ধতি দেখতে বছরে লাখো মানুষ ভিড় জমায় চীনের সিচুয়ান প্রদেশ ও তিব্বতের শেষ সীমানায়। অন্যান্য পর্যটকবান্ধব দেশগুলোর মতোই মোসুও সম্প্রদায়ের মানুষও বছরে অনেক অর্থ উপার্জন করে থাকে। এ ছাড়া মোসুও নারীরা হস্তশিল্পে পারদর্শী। পোশাক, জুয়েলারি তৈরিসহ হস্তশিল্পে দক্ষতা থাকায় সেগুলো তারা আগত দর্শনার্থীদের কাছে বিক্রি করে অর্থ উপার্জন করেন।
নয়া শতাব্দী/এমআর
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ