ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১০ অক্টোবর ২০২৪, ২৫ আশ্বিন ১৪৩১, ৬ রবিউস সানি ১৪৪৬

৪.৫ মাত্রার ভূমিকম্প না ইরানের পারমাণবিক বোমার পরীক্ষা!

প্রকাশনার সময়: ১০ অক্টোবর ২০২৪, ১১:৫৪

গত ৫ অক্টোবর। ইরানের সেমনান প্রদেশ। সেখানে ৪.৫ মাত্রার ভূমিকম্প রেকর্ড করা হয়। এই ঘটনা এমন এক সময়ে ঘটেছে যখন ইসরাইলের সঙ্গে উত্তেজনাকর এক অবস্থার মুখোমুখি দেশটি। এমন সময় এই ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ছিল ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার নিচে এবং ইরানের একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাছাকাছি। ফলে পশ্চিমা মিডিয়ায় নতুন এক বিতর্ক শুরু হয়েছে। কেউ কেউ মনে করছেন, ইরান প্রথমবার তার পারমাণবিক বোমার পরীক্ষা চালিয়েছে। তার কারণে ভূমিকম্পের সৃষ্টি হয়েছে। তবে এ বিষয়ে ইরানের কোনো সুস্পষ্ট বক্তব্য পাওয়া যায়নি। বিভিন্ন সংবাদ সূত্রকে উদ্ধৃত করে এ খবর দিয়েছে অনলাইন হিন্দুস্তান টাইমস।

এতে বলা হয়, ভূমিকম্পের সময় এবং ইরানের পারমাণবিক সক্ষমতা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, তারা পারমাণবিক বোমার পরীক্ষা চালিয়েছে। তবে এ বিষয়ে নিশ্চিত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। ইরানের কোনো কর্মকর্তাও বিষয়টি নিশ্চিত বা প্রত্যাখ্যান করেননি। তবে কিছু মানুষ মানচিত্র এবং গ্রাফ শেয়ার করে ব্যাখ্যা করেছেন, কেন এটা পারমাণবিক বোমা হতে পারে।

আমেরিকার ভূতাত্ত্বিক জরিপের (ইউএস জিয়োলজিক্যাল সার্ভে) দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, মাটির ১০ কিলোমিটার গভীরে ছিল ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল এবং জায়গাটি ইরানের একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাছাকাছি।

প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, ইরানে হওয়া ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থলটি ভূপৃষ্ঠের যতটা গভীরে ছিল তা পরমাণু বোমা পরীক্ষার জন্য খুবই আদর্শ। তাদের দাবি, একই কায়দায় আণবিক বোমার পরীক্ষা চালানো দেশের সংখ্যা নেহায়েত কম নয়। ভারত, পাকিস্তান, উত্তর কোরিয়াসহ আরও কয়েকটি দেশ অতীতে এই একই উপায়ে পরমাণু বোমার পরীক্ষা চালিয়েছে।

দীর্ঘদিন ধরেই আণবিক হাতিয়ার তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছে তেহরান। আমেরিকা আগেই জানিয়েছিল, ইরানের প্রতিরক্ষা গবেষকরা পরমাণু অস্ত্র তৈরির প্রায় কাছে পৌঁছে গিয়েছেন। তারা চাইলেই কয়েক দিন বা সপ্তাহের মধ্যে পরমাণু বোমা তৈরি করতে পারবেন।

অক্টোবরের শুরুতেই দখলদার ইসরায়েলে প্রায় ২০০ ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলা চালায় ইরান। ওই ঘটনার প্রতিশোধের হুমকি দিয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। তবে ইরান পালটা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, ইসরায়েল প্রতিশোধ নেওয়ার চেষ্টা করলে আরও ভয়াবহ হামলা চালাবে তেহরান।

ইরান-ইসরায়েল উত্তেজনায় মধ্যপ্রাচ্য যখন তার ইতিহাসের সব থেকে বড় সংঘাতের ঝুঁকির মধ্যে ঠিক সেই মুহূর্তে এই অস্বাভাবিক ভূমিকম্প জল্পনাকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। যদিও এ বিষয়ে ইরানের কোনো সুস্পষ্ট বক্তব্য পাওয়া যায়নি, তবে অস্বীকারও করেনি তেহরান। এমনকি কয়েকদিন আগেই পরমাণু বোমা তৈরির ইঙ্গিত দিয়েছেন খোদ ইরানের শীর্ষ এক কর্মকর্তা।

ইরান অবজারভারের এক্সে দেওয়া বার্তায় আয়াতুল্লাহ খামেনির প্রতিনিধি বলেছেন, প্রয়োজন হলে আমরা পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করব। ইসলামের দৃষ্টিতে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি এবং ব্যবহার জায়েজ নয়। কিন্তু মুসলিম এবং ইরানি জনগণের সাহায্যে প্রয়োজনে সেই উদ্যোগও আমরা নেব।

বিভিন্ন সংবাদ সূত্রকে উদ্ধৃত করে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস বলছে, ভূমিকম্পের সময় ও ইরানের পারমাণবিক সক্ষমতা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, তারা পারমাণবিক বোমার পরীক্ষা চালিয়েছে। তবে এ বিষয়ে নিশ্চিত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। ইরানের কোনো কর্মকর্তাও বিষয়টি নিশ্চিত বা প্রত্যাখ্যান করেননি। তবে কিছু মানুষ মানচিত্র এবং গ্রাফ শেয়ার করে ব্যাখ্যা করেছেন, কেন এটা পারমাণবিক বোমা হতে পারে।

অনেকে ওই এলাকার ভূতাত্ত্বিক গঠনকে ব্যাখ্যা করে বলছেন, ভূমিকম্পটি যে এলাকা থেকে উৎপন্ন হয়েছে সেখানকার ভূত্বকের গঠন এমন নয় যা ভূমিকম্প সৃষ্টি করতে পারে। তাই তারা মনে করছেন, খুব সম্ভবত ভূগর্ভে ইরানের পরমাণু অস্ত্র পরীক্ষার কারণেই এই কম্পনের সৃষ্টি হয়েছে।

খবরে আরও বলা হয়, পশ্চিমারা কয়েক দশক ধরে অভিযোগ করে আসছে যে, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির কর্মসূচি শুরু করেছে। ইরান-ইসরায়েল চলমান উত্তেজনার মধ্যে ইসরায়েলের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এহুদ বারাক ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালানোর আহ্বান জানিয়েছেন। সেই হুমকির জবাবেই কি ইরান পরমাণু অস্ত্রের পরীক্ষা চালাল?

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজারের খবরে বলা হয়েছে, তবে কি তেহরানকে এবার থেকে পরমাণু হাতিয়ার দেশ বলতে হবে। সংবাদমাধ্যমটি বলছে, ইরান সত্যি সত্যিই পরমাণু অস্ত্রের পরীক্ষা চালালে ইসরায়েলের পক্ষে সেখানে প্রত্যাঘাত করা মোটেই সহজ হবেনা। সে ক্ষেত্রে মুখোমুখি লড়ায়ের ময়দানেই দেখা যাবে দুই আণবিক শক্তিধর দেশকে। যার আঁচে পুড়তে পারে গোটা পশ্চিম এশিয়া।

সংবাদমাধ্যমটি বলেছে, ইরানের যে ভূগর্ভস্থ পরমাণু অস্ত্রের পরীক্ষা চালানোর ক্ষমতা রয়েছে, তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। তবে এই সংক্রান্ত কোনও ছবি প্রকাশ্যে আসেনি। এমনকি ইরানও এখনো এ সংক্রান্ত কোনো তথ্য দেয়নি। তাই তেহরানের পরমাণু হাতিয়ারের পরীক্ষা চালানোর বিষয়টি এখনো নিশ্চিত নয়।

উল্লেখ্য, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন প্রথম বার পরমাণু হাতিয়ার তৈরি করে আমেরিকা। ১৯৪৫ সালের ৬ ও ৯ অগস্ট এ বোমা জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকির উপর ফেলেছিল ওয়াশিংটন। ফলে প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় দ্বীপরাষ্ট্রের ওই দুই শহর। প্রাণ হারান কয়েক লাখ মানুষ। আমেরিকার ওই পরমাণু হামলার পরই শেষ হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ।

আমেরিকার পর আর কোনও দেশ অবশ্য এখনও পর্যন্ত পরমাণু হামলা চালায়নি। তবে পৃথিবীতে সবথেকে ধ্বংসাত্মক এই অস্ত্র তৈরি করে ফেলেছে ইউরোপ ও এশিয়ার অনেক রাষ্ট্রই। তালিকায় রয়েছে রাশিয়া, ব্রিটেন, ফ্রান্স, চীন, ভারত, পাকিস্তান, উত্তর কোরিয়া ও ইসরায়েল।

মধ্যপ্রাচ্যের দুই দেশের মধ্যে অচলাবস্থার মধ্যেই ইরান ও ইসরায়েলে এ ভূমিকম্প হয়েছে। লেবাননের সশস্ত্রগোষ্ঠী হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরুল্লাহ এবং হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়াকে হত্যার পর, ইরান গত ১ অক্টোবর ইসরায়েলে প্রায় ৪০০ টি মিসাইল নিক্ষেপ করে। ইরানের হামলার পর ইসরায়েল কঠোর প্রতিশোধের হুঁশিয়ারি দিয়েছে।

নয়াশতাব্দী/জিএস

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ