শ্রীলঙ্কায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোট গণনার মধ্যে শনিবার রাতে দেশজুড়ে কারফিউ জারি করা হয়েছে। দেশটির পুলিশ আট ঘণ্টার জন্য কারফিউ ঘোষণা করে। পুলিশ জানিয়েছে- জনসাধারণের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে কারফিউ ঘোষণা করা হয়েছে। খবর-টাইমস অব ইন্ডিয়া
গণঅভ্যুত্থানে গোতাবায়া রাজাপাকসে সরকারের পতনের দুই বছর পর শনিবার শ্রীলঙ্কায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। নির্বাচনে বর্তমান প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহেসহ রেকর্ডসংখ্যক ৩৮ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। রোববার সকালে সম্পূর্ণ ফলাফল পাওয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে প্রথমবারের মতো এবার নির্বাচন দ্বিতীয় দফায় গড়াতে পারে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
নির্বাচনকে দেশটির ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক সংস্কারের নির্ধারক হিসেবে দেখা হচ্ছে। পতিত সরকারের আমলে ধ্বংস হয়ে যাওয়া অর্থনীতিকে বিক্রমাসিংহে সচল করতে সক্ষম হলেও কর বৃদ্ধি, ভর্তুকি কমিয়ে দেওয়ার কারণে অনেকে এখনও সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন। অনুৎপাদনশীল প্রকল্পগুলোতে অত্যধিক ঋণ গ্রহণের ফলে দুই বছর আগে শ্রীলঙ্কায় ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকট তৈরি হয়। তীব্র অর্থনৈতিক সংকটে ওষুধ, খাদ্য, রান্নার গ্যাস এবং জ্বালানির মতো প্রয়োজনীয় জিনিসের মারাত্মক ঘাটতি দেখা দেয় দেশটিতে। এক পর্যায়ে দেশটিতে জনবিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়লে ২০২২ সালের ৩১ জুলাই বিক্ষোভকারীরা প্রেসিডেন্টের বাসভবন, তাঁর কার্যালয় এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ গুরুত্বপূর্ণ ভবনগুলো দখল করে নেয়।
গণঅভ্যুত্থানের মুখে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে দেশ ছাড়তে বাধ্য হন। পরে তিনি পদত্যাগ করলে দায়িত্ব নেন ৭৫ বছর বয়সী বিক্রমাসিংহে। অন্তর্বর্তী সরকারের নানা পদক্ষেপে অল্প সময়ের মধ্যেই ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি। তিনি আরেক মেয়াদ দায়িত্বে থাকতে চাইছেন। বিক্রমাসিংহেসহ প্রেসিডেন্ট হওয়ার লড়াইয়ে পাঁচ প্রার্থী আছেন আলোচনায়। বামপন্থি ন্যাশনাল পিপলস পার্টি জোটের অনুরা কুমারা দেশনায়েক দুর্নীতিবিরোধী কঠোর পদক্ষেপ এবং সুশাসনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। শক্ত অবস্থানে আছেন বিরোধী দল ‘সামাগি জন বালাওয়েগার’ (এসজেবি) নেতা সাজিথ প্রেমাদাসাও। তিনি সাবেক প্রেসিডেন্ট রানাসিংহে প্রেমাদাসার ছেলে। রানাসিংহে ১৯৯৩ সালে গৃহযুদ্ধের সময় আততায়ীর হাতে নিহত হন। সাজিথ প্রেমাদাসা এই নির্বাচনে বেশ ভালো করবেন বলে মনে করা হচ্ছে।
রাজপাকসে পরিবার থেকেও প্রার্থী হয়েছেন একজন। তাঁর নাম নমল রাজাপাকসে। ২০০৫ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত দেশকে নেতৃত্ব দেওয়া মাহিন্দা রাজাপাকসের ছেলে।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের নতুন নিয়ম অনুযায়ী, প্রার্থীদের মধ্যে কেউ কমপক্ষে ৫০ শতাংশ বা এর চেয়ে বেশি ভোট পেলে তাঁকেই বিজয়ী ঘোষণা করা হবে। আর কোনো প্রার্থী ৫০ শতাংশ ভোট না পেলে সবচেয়ে বেশি ভোট পাওয়া দুই প্রার্থীর মধ্যে দ্বিতীয় দফা ভোট হবে। এর আগে দেশটিতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন কখনও দ্বিতীয় দফায় না গড়ালেও এবারের তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ভোটে সেই ধারা ভেঙে যেতে পারে। ভারত মহাসাগরের দ্বীপরাষ্ট্রটির এ নির্বাচনে ভোটার ছিল ১ কোটি ৭১ লাখ।
নয়াশতাব্দী/ইএইচ
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ