টানা আড়াই বছর ধরে ইউক্রেনে আগ্রাসন চালাচ্ছে রাশিয়া। আর এর মধ্যেই প্রথমবারের মতো রাশিয়ায় প্রবেশ করে হামলা শুরু করেছে ইউক্রেনীয় বাহিনী। অনেকটা রুশ ভূখণ্ডের ভেতরেই চলে গেছে তারা।
এমন অবস্থায় রাশিয়ায় অনুপ্রবেশের দায়ে ইউক্রেনকে সমুচিত জবাব দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এমনকি ইউক্রেন রাশিয়ার স্থিতিশীলতা নষ্ট করার চেষ্টা করছে বলেও অভিযোগ করেছেন তিনি।
সোমবার (১২ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, ইউক্রেন দেশের দক্ষিণে অনুপ্রবেশ ঘটানোর মাধ্যমে রাশিয়ার স্থিতিশীলতা নষ্ট করার চেষ্টা করেছে। তিনি সতর্ক করে বলেছেন, এই ধরনের কর্মকাণ্ডের ‘সমুচিত জবাব’ পাবে ইউক্রেন।
ইউক্রেনীয় সেনারা গত মঙ্গলবার রুশ ভূখণ্ডে বিস্ময়কর আক্রমণ শুরু করে। একপর্যায়ে ইউক্রেনীয় বাহিনী রাশিয়ার অভ্যন্তরে ১৮ মাইল (৩০ কিলোমিটার) পর্যন্ত অগ্রসর হয়। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে পূর্ণ-মাত্রায় রুশ আক্রমণ শুরু করার পর থেকে এটিই রুশ ভূখণ্ডে ইউক্রেনীয় সেনাদের সবচেয়ে গভীর এবং সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অনুপ্রবেশ।
এছাড়া এই আক্রমণটি ইউক্রেনের পক্ষে মনোবল বাড়িয়েছে বলে বলা হচ্ছে, তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, এই কৌশলটি ইউক্রেনের জন্য নতুন বিপদ ডেকে আনবে।
আল জাজিরা বলছে, ইউক্রেনের এই আক্রমণে প্রথমে স্পষ্টতই অবাক হলেও মস্কো এই অনুপ্রবেশ দমন করার জন্য নিজস্ব সেনা মোতায়েন করে সামরিকভাবে পাল্টা আঘাত করেছে। রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সোমবার বলেছে, রাশিয়ার সেনাবাহিনীর অতিরিক্ত বাহিনী কুরস্কে পৌঁছেছে।
তবে কত সংখ্যক সেনা সেখানে দেশটি পাঠিয়েছে তার বিস্তারিত বিবরণ দেওয়া হয়নি।
ইউক্রেনের বাহিনী রাশিয়ার এক হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা নিয়ন্ত্রণ করছে বলে জানিয়েছেন ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর শীর্ষ কমান্ডার। কমান্ডার অলেক্সান্ডার সিরস্কি বলেছেন, হামলা শুরু হওয়ার সাত দিন পরও ‘কুরস্ক অঞ্চলে আক্রমণাত্মক অভিযান পরিচালনা’ অব্যাহত রেখেছে ইউক্রেন।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, রাশিয়া অন্যদের কাছে যুদ্ধকে নিয়ে গিয়েছিল এবং এখন সেই যুদ্ধ আবার রাশিয়ার কাছে ফিরে আসছে। কিন্তু রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনের এই আক্রমণকে ‘উসকানি’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন এবং ‘আমাদের ভূখণ্ড থেকে শত্রুকে লাথি মেরে তাড়িয়ে দিতে’ রুশ বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন।
ইউক্রেনের এই অভিযান শুরুর পর পশ্চিম রাশিয়ান অঞ্চল থেকে আরও বেশি সংখ্যক লোককে তাদের নিরাপত্তার জন্য সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এছাড়া বিবিসি বলছে, ওই অঞ্চল থেকে আরও ৫৯ হাজার মানুষকে চলে যেতে বলা হয়েছে।
স্থানীয় গভর্নর বলেছেন, ওই এলাকার প্রায় ২৮টি গ্রাম ইউক্রেনীয় বাহিনীর হাতে চলে গেছে, ১২ জন বেসামরিক লোক নিহত হয়েছেন এবং ‘পরিস্থিতি এখনও কঠিন’।
রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে প্রচারিত মন্তব্যে প্রেসিডেন্ট পুতিন সোমবার বলেছেন: ‘শত্রুর সুস্পষ্ট লক্ষ্যগুলোর মধ্যে একটি হলো— বিভেদ, কলহ, মানুষকে ভয় দেখানো, রাশিয়ান সমাজের ঐক্য ও সংহতি নষ্ট করা।’
নয়াশতাব্দী/টিএ
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ